বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বর, ৩৬ লাখ ইউরোর গোপন লেনদেনে মোনাকোয় মালিকানা পরিবর্তন হয় একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের। ফ্ল্যাটটির বারান্দায় দাঁড়ালেই চোখে পড়ে মোনাকোর অনন্য সামুদ্রিক দৃশ্য, কখনো সারি সারি সুপার ইয়ট।
চুক্তিতে সই করেছিল একটি স্থানীয় নোটারি। তবে ক্রেতার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। এর মাধ্যমে মন্টে কার্লো স্টার কমপ্লেক্সের চতুর্থতলায় ঝকঝকে একটি ফ্ল্যাট, দুটি পার্কিং স্পেস, একটি স্টোররুম ও সুইমিং পুল ব্যবহারের সুযোগ পান ক্রেতা।
ক্রয়চুক্তিতে মালিক দেখানো হয়েছিল একটি অফশোর কোম্পানিকে, যা নিবন্ধিত ছিল ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া আইল্যান্ডে। খোলা চোখে দেখলে এ ঘটনায় রাশিয়ার যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া মুশকিল, তবে আসল ক্রেতার পরিচয় লুকানো ছিল আরও গভীরে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ওই ফ্ল্যাটের আসল মালিক একজন নারী। ২০০৩ সালে ফ্ল্যাটটি কেনার সময় তার বয়স ছিল ২৮ বছর। প্যানডোরা পেপারসের সৌজন্যে তার পরিচয় মিলেছে, নাম সভেৎলানা ক্রিভোনোগিখ।
মাত্র কয়েক বছরেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন তিনি। আদিনিবাস সেন্ট পিটারসবার্গের অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাট, মস্কোয় সম্পত্তি, একটি ইয়টসহ আরও অনেক সম্পদ হয়েছিল ক্রিভোনোগিখের, যার আনুমানিক মূল্য ১০ কোটি ডলারের বেশি।
গণমাধ্যমের খবর, ক্রিভোনোগিখের অতীত একেবারে সাদামাটা ও ঘনবসতিপূর্ণ একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন। অন্যান্য পরিবারের সঙ্গে বাথরুম ও রান্নাঘর ভাগাভাগি করতে হতো তাকে। পড়াশোনা করেছেন বাণিজ্য বিষয়ে। একসময় দোকানে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজও করেছেন। তাহলে হঠাৎ এতো বিত্ত-বৈভবের মালিক বনে গেলেন কীভাবে?
সেখানেই লুকিয়ে আছে রহস্য! নব্বই দশকের শেষের দিকে একজন শুভানুধ্যায়ী জোটে ক্রিভোনোগিখের। সেই মানুষটি যেন তেন কেউ নন, স্বয়ং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
২০২০ সালে প্রোয়েক্ট নামে রাশিয়ার একটি অনুসন্ধানী ওয়েবসাইট দাবি করে, সেন্ট পিটারসবার্গের মেয়র থাকার সময় পুতিনের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন ক্রিভোনোগিখ। একসময় পরিণত হন প্রেমিকায়।
২০০৩ সালে ক্রিভোনোগিখের একটি মেয়ে জন্মলাভ করে। প্রোয়েক্টের দাবি, এলিজাবেথা বা লুইজা নামে ওই মেয়ের জন্মদাতা পুতিন।
যদিও এ বিষয়ে কখনই ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। নিজের ব্যক্তিগত জীবন সবসময় গোপনই রাখতে পছন্দ করেন ভ্লাদিমির পুতিন। ২০১৩ সালে স্ত্রী লুডমিলার সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছে তার। সেই সংসারে মাশা ও ক্যাটরিনা নামে দুটি মেয়েও আছে তার।
প্রোয়েক্ট গোপন তথ্য ফাঁস করার পর লুইজা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তবে, পুতিন সংক্রান্ত সব প্রশ্ন সুকৌশলে এড়িয়ে যান। গার্ডিয়ানের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তাতে সাড়া দেননি লুইজা ও তার মা ক্রিভোনোগিখ।
ইউকে/এএস