নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী মহানগর এলাকায় বিদ্যুতের বিভ্রাট অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। এতে তীব্র গরমের মধ্যে নাজেহাল হচ্ছে নগরবাসী। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নর্দান ইলেকট্রিসিটি কোম্পানি (নেসকো) লিমিটেড বলছে, চাহিদামতোই বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। তবে দুটি কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্ন হচ্ছে।
নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দিন-রাত সব সময় বিদ্যুতের বিভ্রাট হচ্ছে। একবার বিদ্যুৎ গেলে এক ঘণ্টার আগে আসছে না। দিনে তো বটেই, রাতেও কয়েকবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এসব বিভ্রাট ঘটছে কোনো রকম পূর্বঘোষণা ছাড়াই। এ ছাড়া আগের দিন মাইকিং করেও দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হচ্ছে।
নগরীর পদ্মা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা গণমাধ্যমকর্মী গোলাম রাব্বানী। গত শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে তিনি এই প্রতিবেদককে ফোন করে জানান, এই গভীর রাতে তাঁর এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। গরমে তাঁরা অস্থির হয়ে উঠেছেন। তাঁর ছোট বাচ্চাটিও ঘুমাতে পারছে না। রাব্বানী বলেন, ‘নেসকো একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তাঁদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে সেবা নিই। আমরা কেন এমন দুর্ভোগ পোহাব?’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত শুক্র ও শনিবার পরপর দুই দিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, দেবিশিংপাড়া, তালাইমারী, বালিয়াপুকুর, মঠপুকুর ও শিরোইল এলাকায় সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল না। ওই দুই দিন বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কাজলা বটতলা, জাহাজঘাট, ধরমপুর ও আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না।
শনিবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নেসকোর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-৪-এর আওতাধীন সব এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। সেদিন রাস্তার পাশের গাছের ডালপালা কাটা হয়। আগের দিন শুক্রবার সিপাইপাড়া, লক্ষ্মীপুর ও সিঅ্যান্ডবি এলাকায় সকাল ৮টা থেকে ৯টা; কলাবাগান, হেতেমখাঁ এলাকায় ৯টা থেকে ১০টা; শিরোইল, কাদিরগঞ্জ, বর্ণালী মোড় এলাকায় সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা; কুমারপাড়া, ফুদকিপাড়া ও আলুপট্টি এলাকায় সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর নগরীর রেলগেট থেকে বিমানবন্দর সড়কের বৈদ্যুতিক খুঁটি সরানোর জন্য আশপাশের এলাকায় সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়। এসব বিদ্যুৎ বন্ধের জন্য আগের দিন মাইকিং করা হলেও ১০ মিনিট, ২০ মিনিট কিংবা এক ঘণ্টার জন্য কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ চলে গেলেও কোনো পূর্বঘোষণা থাকে না। এতে নগরবাসী চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়ছে।
নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা এলাকার ফটোকপি ও কম্পিউটার কম্পোজের দোকানি তুহিন হোসেন বলেন, করোনায় লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন দোকান বন্ধ রেখেছেন। এখন দোকানপাট খুলতে পারলেও বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে ব্যবসা লাটে উঠছে।
বিদ্যুতের এই বিভ্রাট নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সেলুনের কর্মচারী সুশান্ত কুমার বলছিলেন, কদিন আগে পেপারে দেখলেন যে রাজশাহীতে নেসকো অফিসে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হানা দিয়েছে। নেসকোর কর্মকর্তা ও তাঁদের স্ত্রীদের সম্পদের হিসাব চেয়েছে। এসবে ক্ষুব্ধ হয়ে নেসকো এখন মানুষকে শাস্তি দিচ্ছে বলে ধারণা তাঁর।
বিদ্যুতের এমন বিভ্রাট নিয়ে নেসকোর রাজশাহী বিতরণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবদুর রশীদ বলেন, ‘সড়ক বিভাগ বিভিন্ন স্থানে সড়ক সম্প্রসারণের কাজ করছে। ফলে আমাদের বৈদ্যুতিক খুঁটি তুলে সরাতে হচ্ছে। এ কারণে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এ ছাড়া নগরবাসী অপরিকল্পিতভাবে এসি, রাইসকুকার ব্যবহার করছে। ফলে বাড়তি চাপ পড়ছে ট্রান্সফরমারের ওপর। এতে লাইন ফল্ট করছে। তখন বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমরা ট্রান্সফরমারের সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’
আবদুর রশীদ আরও জানান, রাজশাহী শহরে আবাসিক ও বাণিজ্যিক মিলিয়ে নেসকোর গ্রাহকসংখ্যা ২ লাখ ২৩ হাজার। দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা ৮৭ থেকে ৯০ মেগাওয়াট। কিছুদিন আগে প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ মেগাওয়াট ঘাটতি থাকত। তখন লোডশেডিং হতো। কিন্তু এখন চাহিদার সবটুকু বিদ্যুৎই জাতীয় গ্রিড থেকে পাওয়া যায়, তাই কোনো লোডশেডিং নেই। বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে সংস্কারকাজের জন্য। দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হলে আগের দিনই এলাকায় মাইকিং করা হয় বলেও দাবি এই কর্মকর্তার।
ইউকে/এএস