ট্রেনে চিকিৎসক দেওয়ার প্রস্তাব দেবে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক: যাতায়াতের জন্য নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা বরাবরই ট্রেন পছন্দ করেন। কোন কোন ট্রেনে যাত্রীর সংখ্যা হাজারেরও বেশি থাকে। ফলে কখনো কখনো ট্রেনের ভেতরে লোকজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। কখনোবা বাইরে থেকে ছোরা পাথরের আঘাতে অনেকে আহত হন। এ সময় তাঁদের চিকিৎসা দিতে অপেক্ষা করতে হয়। তাই ট্রেনে যাত্রীদের সেবায় অন্তত একজন করে চিকিৎসক দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দেবে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, গত ১৬ সেপ্টেম্বর খুলনা থেকে রাজশাহীগামী সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস ট্রেনে সাবিনা ইয়াসমিন (২৫) নামের এক প্রসূতি ট্রেনেই সন্তান প্রসব করেন। ওই নারীর প্রসব বেদনা উঠলে ট্রেনের পরিচালক মাইকে অন্যদের কাছ থেকে সহযোগিতা কামনা করেন। এ সময় ট্রেনে থাকা শিক্ষানবিশ আইনজীবী মুক্তা রানী কর্মকার ওই প্রসূতি নারীকে সাহায্য করেন এবং সন্তান প্রসব সম্পূর্ণ করান। পরে অন্য একজন চিকিৎসক ডা. ফারজানা তাসনীম এসে নাড়ি কাটেন।

গতকাল রোববার ওই দুজনসহ সংশ্লিষ্ট ১০ জনকে সংবর্ধনা দেয় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসে ডা. ফারজানা তাসনীম বলেন, নাড়ি কাটার আগে তা বাঁধতে হয়। তার জন্য দরকার সুতা। ট্রেনে ব্লেডের ব্যবস্থা হলেও ভালো সুতা পাওয়া যায়নি। একটু নাইলনকেই সুতা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ট্রেনে প্রাথমিক চিকিৎসার সব ধরনের উপকরণ এবং একজন চিকিৎসক থাকা দরকার বলে মনে করছি।

শিক্ষানবিশ আইনজীবী মুক্তা রানী কর্মকার বলেন, ট্রেনে প্রসূতিকে শোয়ানোর মতোও কোন জায়গা পাওয়া যাচ্ছিল না। তার ওপর ঝাঁকুনি তো ছিলই। সে কারণে ডেলিভারির সময় বাচ্চাটা আঘাত পেয়েছে। ট্রেনে অন্তত রোগীর জন্য একটি জায়গা রাখলে ভালো হয়। আমার এ ধরনের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। তাই যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। এ জন্য ট্রেনে একজন করে চিকিৎসক থাকা দরকার।

এ বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সূত্র বলেন, গত বছরের ৮ জুলাই থেকে চলতি বছরের ২২ জুন পর্যন্ত পশ্চিমাঞ্চলে ৭৪টি ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৬৩টি ট্রেনের দরজা-জানালার কাচ ভেঙে গেছে। আহত হয়েছেন ২০ জন যাত্রী। ট্রেনে চিকিৎসক না থাকায় আহতদের সবাইকে পরবর্তী স্টেশনে নেমে চিকিৎসা সেবা দিতে হয়েছে। ট্রেনে চিকিৎসক থাকলে তাৎক্ষণিক তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া যেত।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, প্রথমে আমি শুনতে পাই যে ট্রেনে একটা ডেলিভারি হয়েছে। মা ও বাচ্চাকে হাসপাতালে আনা হবে। এ জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম। তারপর প্রসূতি ও তাঁর বাচ্চাকে হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসা শুরু হয়। এসব অবস্থার জন্য ট্রেনে অন্তত একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক থাকাটা জরুরি।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ বলেন, আমরা এর আগেও ট্রেনে ডাক্তার রাখার প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সেভাবে কোন আগ্রহ দেখাননি। এখন আমরা আবারও প্রস্তাব দেব যাতে এর সমাধান করা হয়।

মহাব্যবস্থাপক আরও বলেন, ট্রেনের পাশাপাশি স্টেশনগুলোতে ফার্মেসি এবং ডাক্তার রাখা যায় কী না সে বিষয়েও চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। একটা নীতিমালা প্রস্তুত করে পাঠাব। এবার হয়তো কর্তৃপক্ষ বিষয়টা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে বলে আশা করছি।

ইউকে/এএস