ওমানে ঘূর্ণিঝড়ে লক্ষ্মীপুরের ৩ প্রবাসী নিহত

লক্ষ্মীপুর সংবাদদাতা: ওমানে ঘূর্ণিঝড় ‘শাহিন’র আঘাতে শামছুল ইসলাম (৫০), জিল্লাল হোসেন (৪০), আমজাদ হোসেন হৃদয় (২৫) নামে লক্ষ্মীপুরের তিন প্রবাসী নিহত হয়েছেন। পার্বতীনগর ইউপি চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন ভূঁইয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ওমানে ঘূর্ণিঝড়ে পার্বতীনগর ইউনিয়নের তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহত পরিবারের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

নিহতরা হলেন, সদর উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়নের মধ্য মকরধ্বজ গ্রামের আব্দুল মজিদ চেরাংয়ের বাড়ির মৃত নুরুল আমিনের ছেলে শামছুল ইসলাম (৫০), চাঁন কাজী বাড়ির মো. লুৎফর রহমানের ছেলে জিল্লুর রহমান (৪০) ও হামিদ মিঝি বাড়ির শহিদ উল্যার ছেলে আমজাদ হোসেন হৃদয় (২৫)।

এদের মধ্যে শামছুল ইসলাম ও জিল্লুর রহমান আপন চাচাতো-জেঠাতো ভাই এবং আমজাদ হোসেন নিহত শামছুল ইসলামের বোনের ছেলে।

নিহত জিল্লুর রহমানের বাবা লুৎফুর রহমান আকুতি জানিয়ে বলেন, ‘আমার ছেলে বিদেশে ছিল, আল্লাহ নিয়ে গেছেন। তাকে তো আর ফিরে পাবো না। কিন্তু মরদেহও কি ফিরে পাওয়া যাবে না?

তিনি বলেন, আমরা সরকারের কাছে আকুতি জানাচ্ছি, আমার ছেলে, ভাতিজা এবং নাতির মরদেহ যেনো আমাদের কাছে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করে। আমরা অন্তত যেন নিজ হাতে তাদের কবর দিতে পারি।

একই পরিস্থিতি দেখা গেছে নিহত অন্য দুই পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ৩ অক্টোবর রাতে ওমানে ঘূর্ণিঝড় ‘শাহিন’র আঘাতে লক্ষ্মীপুরের একই পরিবারের তিন সদস্য নিহত হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন সময়

বিভিন্ন এলাকায় তাদের মৃতদেহ খুঁজে পায় তাদের সহকর্মীরা। তাদের মৃতদেহ এখন ওমানের একটি মর্গে রয়েছে।

ওমানে তারা এক বাড়িতে বসবাস করতো। তারা একে অপরকে শ্রমিক ভিসার মাধ্যমে ওমানে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন।

নিহতদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, নিহত পরিবারের সদস্যরা মরদেহের অপেক্ষায় রয়েছেন। তবে তাদের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত প্রশাসন বা স্থানীয় কোন জনপ্রতিনিধি এ বিষয়ে কোন খোঁজ নেয়নি।

স্থানীয় কামরুল হাসান, মোস্তাফা কামাল, ফরুক, তোফায়েলসহ অনেকে জানান, নিহত তিনজনের মধ্যে দুইজন দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকলেও তাদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো নেই। তাদেরকে হারিয়ে পরিবারের সদস্যরা এখন শোকে কাতর হয়ে আছে। এর মধ্যে মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. মামুনুর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মরদেহগুলো দেশে আনার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া তাদের পরিবারের জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করা হবে।

নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, প্রায় ২০ বছর আগে নিহত শামছুল ইসলাম খেজুর বাগানের শ্রমিক হিসেবে ওমানে যান। পরে তিনি ১১ বছর আগে তার চাচাতো ভাই জিল্লুর রহমানকে খেজুর বাগানের ভিসায় ওমানে নিয়ে যান। সর্বশেষ গত বছরের মার্চ মাসের ১৩ তারিখে ভাগিনা আমজাদ হোসেনকে ‘মাজরা’ ভিসায় সেখানে নেয় শামছুল ইসলাম। ওমানে তারা সবাই স্বল্প বেতনে ভিন্ন ভিন্ন মালিকের খেজুর বাগানে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বসবাস করতেন সাহামে উম্মে ওয়াদি লেবান পারপার নামক স্থানের একটি খেজুর বাগানে থাকা ভবনে।

গত ৩ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় চলাকালীন সময়ে তারা তিনজনই ওই বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। পরদিন থেকে তাদের কোন খোঁজ পাননি পরিবারের সদস্যরা। ওমানে থাকা অন্য প্রতিবেশীদের মাধ্যমে তিনজনের মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারেন নিহতের পরিবার।

নিহত আমজাদের পিতা শহিদ উল্যা বলেন, গত বছরের এপ্রিলে আমার ছেলেকে ওমানে পাঠিয়েছি। এখন সে নাই, এ কথা ভাবতেই পারি না। দূর দেশে সে মারা গেছে, আমরা তার মরদেহ কি পাবো?’

ঘটনার বিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কথা হয় ওমানের থাকা মো. স্বপন নামে এক প্রবাসীর সঙ্গে।

তিনি বলেন, ৩ অক্টোবর সন্ধ্যা থেকেই ওমানে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। রাত ১০টার দিকে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হলে টানা ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা বৃষ্টি হতে থাকে। এতে পানির উচ্চতা ১০ মিটারের বেশি বৃদ্ধি পায়। যে তিনজন নিহত হয়েছেন তারা খেজুর বাগানের ভেতরে থাকা একটি দ্বিতল ভবনের নীচ তলায় থাকতেন। ওই এলাকাটি নীচু জায়গা ছিল। ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে নীচু স্থানে বসবাসকারীরা উঁচু স্থানে থাকা মসজিদ বা মাদ্রাসার মধ্যে আশ্রয় নেয়।

তবে তারা তিনজন ওই বাড়িতে ছিলেন। বৃষ্টির পানি বাড়িসহ ভাসিয়ে নিয়ে গেছে তাদের বাড়ি। বৃষ্টি শেষে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে বাড়ির কোন অস্তিত্ব নেই। ৪ অক্টোবর সকালে ১০ থেকে ১২ জন বাঙালি তাদের খুঁজতে বের হই। সকাল ১০টার দিকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে প্রথমে জিল্লালের লাশ খুঁজে পাই। ওই দিন দুপুরে ৩০ কিলোমিটার দূরে শামছুদ্দিনের লাশ পাই একটি খেঁজুর গাছের ডগায়। সর্বশেষ গত ৬ অক্টোবর আমজাদের লাশ পাই তাদের বাসস্থান থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে মরুভূমিতে।

তিনি বলেন, তাদের মরদেহ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে তিনজনের স্ব-স্ব কোম্পানিকে জানানো হয়েছে।

ইউকে/এএস