বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্ত থাকা তিনটি রাজ্যে ভারত তার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ক্ষমতা বাড়িয়েছে। ওই তিনটি রাজ্যে ভারতীয় সীমান্তের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে বিএসএফ গ্রেপ্তার, তল্লাশি বা মালপত্র জব্দ করতে পারবে।
এত দিন এই বাহিনী সীমান্ত থেকে ভারতের অভ্যন্তরে ১৫ কিলোমিটার অঞ্চলের মধ্যে নজরদারি চালাতে পারত। এই পদক্ষেপ দেশটির রাজ্যগুলোর স্বায়ত্তশাসন নিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
বুধবার কেন্দ্র থেকে প্রকাশ করা গেজেটে বলা হয়েছে, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ ও পাঞ্জাব সীমান্তে বিএসএফ সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার অঞ্চল পর্যন্ত নজরদারি চালাতে পারবে। স্থানীয় পুলিশকে উপেক্ষা করে বিনা ওয়ারেন্টে তল্লাশি চালাতে এবং গ্রেপ্তার করতে পারবে। সীমান্তে চোরাচালান ও অনুপ্রবেশ রুখতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করে কেন্দ্র।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, সাম্প্রতিক সময়ে ভারত সীমান্তে ড্রোন বিচরণ ও হামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিএসএফের ক্ষমতা বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে সীমান্তে বিএসএফের আচরণ নিয়ে আগে থেকেই বিতর্ক রয়েছে। এর মধ্যে এই বাহিনীর ক্ষমতা বাড়ানোর মধ্য দিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম নিয়েছে। এর ফলে স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে বিএসএফের সংঘাত তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে পাঞ্জাব ও পশ্চিমবঙ্গ।
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিং চান্নি বলেছেন, ‘সরকারের এই একপক্ষীয় সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাই। এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর সরাসরি হামলা করা হলো। আমি দ্রুত এই অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বাতিল করার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর প্রতি আহ্বান জানাই।’
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, ১০টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত দুটি অঞ্চলে জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ইস্যুর জন্ম দিতে পারে।
জ্যেষ্ঠ এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এটি রাজনৈতিক স্পর্শকাতর একটি পদক্ষেপ। বিএসএফের প্রধান লক্ষ্য হলো সীমান্ত পাহারা দেওয়া এবং অনুপ্রবেশ বন্ধ করা। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোতে দেখা গেছে, সীমান্ত পাহারা দিতেই তারা সক্ষম নয়।
ওই পুলিশ কর্মকর্তার মতে, এই সিদ্ধান্তের কারণে স্থানীয় পুলিশ ও জনতার সঙ্গে বিএসএফের সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে। তিনি বলেন, ‘তাদের দায়িত্ব সীমান্ত ফাঁড়ি অঞ্চলে। কিন্তু নতুন করে এই ক্ষমতা দেওয়ার ফলে রাজ্যের এখতিয়ারে থাকা এলাকাগুলোতেও তারা অভিযান চালাতে পারবে।’
তবে এর পাল্টা জবাবে বিএসএফের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের কাছে যদি কোনো গোয়েন্দা তথ্য থাকে, তবে আমরা স্থানীয় পুলিশের অপেক্ষায় থাকব না। আমরা সময়মতো অভিযান চালাতে পারব।’
নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব ও আসামের সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তল্লাশি ও গ্রেপ্তার অভিযান চালাতে পারবে বিএসএফ। ফৌজদারি কার্যবিধি ও পাসপোর্ট আইন অনুযায়ী এসব পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হলো বিএসএফকে। এতে ওই তিনটি রাজ্যের পুলিশের মতোই তারা তল্লাশি ও গ্রেপ্তার অভিযান চালানোর অধিকার পেল।
এর আগে সীমান্তে পাচারের সঙ্গে বিএসএফের যুক্ত থাকার অভিযোগ ওঠে। কিছুদিন আগে বিএসএফের এক কর্মকর্তা পশ্চিমবঙ্গে ধরাও পড়েছেন। এ ছাড়া সীমান্ত হত্যার অভিযোগও বারবার উঠেছে। এ অভিযোগ বাংলাদেশ ও ভারতে সীমান্তে বসবাসকারী নাগরিকরাও তুলেছে। বিএসএফের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেওয়ার ফলে এই বিতর্ক বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতের সমাজকর্মী কিরিটি রায় সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলেকে বলেন, ‘সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার ভেতরে ঢোকার অর্থ হলো, সম্পূর্ণ লোকালয়ে ঢুকে পড়া। সেখানে স্থানীয় পুলিশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করার কথা। বিএসএফ সেখানে ঢুকলে বিতর্ক বাড়বেই।’ সূত্র : এনডিটিভি, ডয়েচে ভেলে।
ইউকে/এএস