ক্রীড়া বিভাগ: বাংলাদেশে তাঁর মেয়াদকাল বিভক্ত দুই পর্বে। গত এপ্রিলে শ্রীলঙ্কায় দুই টেস্টের সফরের আগে এবং পরে। আগে-পরে রাসেল ডমিঙ্গো দেখেছেন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ দুটোই। আগের সময়টি দুর্যোগের। পরের সময়টি সাফল্যের। আগের সময়টা ব্যর্থতায় চাকরি হারানোর চোখ-রাঙানির। আর পরের সময়টা সাফল্যের সোনা রোদে আলোকিত হওয়ার। একই সঙ্গে চাকরির মেয়াদ বাড়ার নিশ্চয়তারও।
কথা ছিল, এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স দেখেই তাঁর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু এর আগে দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পর পর দুটি বড় সিরিজ জয় সর্বোচ্চ ক্রিকেট প্রশাসনের মনোভাব এমন বদলে দিয়েছে যে ওমানে গতকাল স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপ অভিযান শুরুর আগেই ডমিঙ্গোর চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো চূড়ান্ত হয়ে গেছে একরকম। তাঁকে আরো দুই বছরের জন্য রাখার কথা আছে। এই বিশ্বকাপ শেষে নতুন মেয়াদের শুরু থেকে এই দক্ষিণ আফ্রিকানের উল্লেখযোগ্য হারে বেতনও বাড়ছে। সে খবর শুনে আরো নির্ভার হয়েই তাই বিশ্বকাপ শুরু করতে পারলেন বাংলাদেশের হেড কোচ।
ওমানে সপরিবারে খেলা দেখতে আসার আগেই ডমিঙ্গোর চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর আলোচনা করে এসেছেন বলে জানালেন জাতীয় দলের দেখভাল করা কমিটির প্রধান আকরাম খান। এই সাবেক অধিনায়ক জানাচ্ছিলেন, ‘ডমিঙ্গোর বিষয়ে আমরা খুব ইতিবাচক আছি। আশা করি, শিগগিরই আমরা বাকি আনুষ্ঠানিকতাও সেরে ফেলতে পারব।’ অর্থাৎ সিদ্ধান্ত হয়েছে তবে চুক্তি সইয়ের ব্যাপারটি এখনো সারা হয়নি। সেটিও সেরে ফেলার অপেক্ষায় থাকা এই প্রোটিয়া কোচ নতুন মেয়াদে পাচ্ছেন আরো দুটি বিশ্বকাপ।
দলের পারফরম্যান্সে অবনতি তাঁর শুরুর সময়ের মতো আশঙ্কার পর্যায়ে চলে না গেলে ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্তই আছেন ডমিঙ্গো। আকরাম জানালেন তেমনই, ‘তাঁকে ২০২৩-এর বিশ্বকাপ পর্যন্তই রেখে দেওয়ার ভাবনা আমাদের।’ সে ক্ষেত্রে ২০২২ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় পরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও পাচ্ছেন ডমিঙ্গো। যদিও এবারের বিশ্বকাপ পর্যন্ত তাঁর চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির আলোচনা পিছিয়ে গিয়েছিল। সেটি এগিয়ে আনার কারণ ব্যাখ্যায় আকরাম বলছিলেন, ‘জানেনই তো যে আমাদের পক্ষে একজন কোচ চলে গেলে আরেকজনকে পাওয়া কতটা কঠিন। তা ছাড়া আমরা যেমন ভালো কোচ চাই, বাজারে তেমন খুব বেশি নেইও। থাকলেও নানা কারণেই বাংলাদেশে আসতে চান না।’
নুতন করে খোঁজাখুঁজির ঝামেলায় না গিয়ে তাই ডমিঙ্গোকে রেখে দেওয়া। আবার বিষয়টি এমনও নয় যে ডমিঙ্গোকে ‘মন্দের ভালো’ বলে ভাবা হচ্ছে। বরং গত এপ্রিলের পর থেকে দলীয় পারফরম্যান্সের উন্নতিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সন্তুষ্ট বলেই আরো দুই বছরের জন্য রয়ে যাচ্ছেন তিনি, ‘শুরুতে সময় হয়তো একটু খারাপ গেছে। তবে এখন তো দলও ভালো করছে, ডমিঙ্গো নিজেও আমাদের সঙ্গে বেশ ভালো মানিয়ে নিয়েছেন। কাজেই তাঁকে আমরা রেখে দেওয়ার কথাই ভেবেছি।’
নতুন মেয়াদে ফুলেফেঁপে উঠবে এই দক্ষিণ আফ্রিকানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টও। ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর চাকরি হারানো স্টিভ রোডসের জায়গায় একই বছরের আগস্টে এসে যোগ দিয়েছিলেন দুই বছরের চুক্তিতে। শুরুতে বেতন ছিল ১৬ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি। সেখান থেকে কর কেটে পেতেন ১২ হাজার ডলারের মতো। এক বছর পর চুক্তি অনুযায়ী আরো কিছু বেতন বেড়েছিল তাঁর। এবার নতুন মেয়াদে কত বাড়ছে? আকরাম সে প্রসঙ্গে ঢুকলেনই না। তবে যত দূর জানা গেছে, নতুন মেয়াদে মাসে সাত হাজার ডলার বেশি পাবেন ডমিঙ্গো।
অথচ গত এপ্রিলে তাঁকে বিদায় করার বিষয়েই একমত ছিল বোর্ডের একাংশ। দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের মাটিতে আফগানিস্তানের কাছে টেস্ট হারের লজ্জা দিয়েই অভিষেক হয়েছিল ডমিঙ্গোর। এরপর ভারত সফরে একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতলেও দুই টেস্টের সিরিজে পারফরম্যান্স ছিল যাচ্ছেতাই। কভিড কালের অচলাবস্থার পর দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে টেস্ট সিরিজ হারেই মূলত তাঁর চাকরি ভাগ্য ঝুলে যায়। তবে গত এপ্রিলে শ্রীলঙ্কায় গিয়ে একটি ড্র টেস্ট করার পর থেকে সেই ভাগ্যও ফিরতে থাকে। এরপর দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কাকে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়ে জিম্বাবুয়ে সফরেও সাফল্য। এর ধারাবাহিকতা অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।
আগের পর্বের দুর্যোগ কেটে গিয়ে তাই ডমিঙ্গোর কপালে দেখা দিল নতুন চুক্তির আলোর রেখাও। এবং সেটি এই বিশ্বকাপ শুরুর আগেই।
ইউকে/এএস