ক্রীড়া বিভাগ: বেশ ফুরফুরে মেজাজেই এলেন তিনি। রাসেল ডমিঙ্গোকে দেখে অন্তত বোঝার উপায় নেই যে একটু আগেই বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের জেরার মুখে পড়ে এসেছেন। ভার্চুয়াল বৈঠকে তাঁর কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। সেই খবর সভাপতির মুখ হয়ে বাইরেও এসেছে। তাই ওমান ম্যাচ সামনে রেখে বাংলাদেশ দলের হেড কোচের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে সে প্রসঙ্গ ওঠা অবধারিতই ছিল।
সেটি এড়িয়ে গিয়ে এই দক্ষিণ আফ্রিকান বরং নিজের শিষ্যদের পিঠেই হাত রাখলেন, ‘আমি এখানে সভাপতিকে নিয়ে কথা বলতে আসিনি। প্রত্যেকেরই নিজের মতামত জানানোর অধিকার আছে। তবে আমি আমার কোনো খেলোয়াড়ের সমালোচনা করছি না। আমার পুরো বিশ্বাস ওদের ওপর আছে। দলের বাইরে কী হচ্ছে, সেটি এই মুহূর্তে আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। দৃষ্টি পুরোপুরিই আমার দলের দিকে। নিশ্চিত করতে হবে যেন আগামীকাল (আজ) আমাদের শতভাগ সমর্থন ওদের প্রতি থাকে।’
বাইরের সমালোচনায় বিদ্ধ ক্রিকেটাররা। বিশেষ করে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটসম্যানরা যেভাবে উইকেট দিয়ে এসেছেন, তাতে প্রশংসিত হওয়ারও কারণ নেই। ডমিঙ্গো তবু সমালোচক নন, ‘কেউ চার মারলে সবাই বলে দুর্দান্ত শট। আবার আউট হলেই সবাই বাজে শট বলতে শুরু করে দেয়। এটিই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের চরিত্র। খেলোয়াড়দের মাঠে নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে দিতে হবে। ওরা তো আর রোবট নয়, ওরা মানুষই। কাজেই ওরা ভুল করবে। আমাদের সেই ভুল থেকে শিখতেও হবে।’
ভুল থেকে শেখার পাশাপাশি প্রত্যাশার অনন্ত চাপও শিষ্যদের বুকে টেনে নিতে বললেন ডমিঙ্গো, ‘বিশ্বকাপে সব সময়ই প্রচণ্ড চাপ থাকে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো ক্রিকেটপ্রেমী জাতির জন্য তো আরো। প্রতিটি পারফরম্যান্সেরই চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়, প্রতিটি ভুলই দেখা হয় আতশিকাচের নিচে ফেলে। কাজেই (স্কটল্যান্ডের কাছে হারার পর) ছেলেরা চাপে আছে। তবে এ জন্যই ওরা দেশের হয়ে খেলে। এই চাপটা ওদের আলিঙ্গন করে নিতে হবে। আশা করছি, এই ব্যাপারটিই ছেলেদের সেরাটা বের করে আনবে।’
ওমানের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে নিজেদের সেরায় ফিরতে সবার আগে উইকেট বাঁচিয়ে পাওয়ার প্লে থেকে নির্দিষ্ট রান তোলার লক্ষ্যও শিষ্যদের স্থির করে দিয়েছেন এই দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ, ‘এই মাঠে (আল আমরাত স্টেডিয়াম) পাওয়ার প্লের গড় স্কোর ৪০-৪৫ রানের মধ্যে; যেটি খুব বড় কিছুও নয়। এখানে পাওয়ার প্লেতে প্রতিটি দলকেই ধুঁকতে হয় বলে মনে হচ্ছে। উইকেট হাতে রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ এখানে। প্রথম ৬ ওভারে ৩৫-৪৫ রানের মতো করতে পারলে তা পরের দিকের ব্যাটসম্যানদের দ্রুত রান তোলায় সহায়কই হবে।’
স্কটল্যান্ড ম্যাচের ভুলের পুনরাবৃত্তিও যাতে বাদ না সাধে, সে বিষয়েও কম সতর্ক নন বিসিবির সঙ্গে দুই বছরের নতুন চুক্তি করার অপেক্ষায় থাকা এই কোচ, ‘পাওয়ার প্লেটা এই ম্যাচে কিছুটা ভালো কাজে লাগাতে হবে আমাদের। আগের ম্যাচে কিছু ভুল আমরা করেছি। যেসব শট খেলা ঠিক নয়, সেগুলো খেলেছি। আর যেগুলো খেলার দরকার ছিল, সেগুলো খেলছিলামই না। কাজেই প্রথম ৬ ওভারে আক্রমণ আর রক্ষণের মধ্যে সঠিক ভারসাম্যটাও খুঁজে নিতে হবে আমাদের।’
প্রথম একাদশের সঠিক ভারসাম্যও খুঁজে নিতে চান ওমান ম্যাচে। স্কটিশদের বিপক্ষে নাঈম শেখের জায়গায় সৌম্য সরকারকে খেলানোর জন্য জবাবদিহির মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। তবে কেন সেটি করা হয়েছিল, সেই ব্যাখ্যার সঙ্গে আজ নাঈমের একাদশে ফেরার ইঙ্গিতও দিয়ে রাখলেন হেড কোচ, ‘আগের ম্যাচে সৌম্যকে নেওয়াই হয়েছিল শুধু ষষ্ঠ বোলার হিসেবে। কারণ চোটের জন্য রিয়াদ (মাহমুদ উল্লাহ) বোলিং করতে পারত না। যদি বোলিং করতে হয়, এই বিবেচনায়ই সৌম্য খেলে নাঈমের জায়গায়। তবে এই ম্যাচে রিয়াদ বোলিং করতে পারবে বলে আশা করছি। তাই নাঈমের একাদশে ফেরার সম্ভাবনা আছে।’
নাঈমও একাদশে ফিরছেন প্রবল চাপ মাথায় নিয়ে। এমনিতেই স্ট্রাইক রেট নিয়ে নিত্য সমালোচনার মুখে পড়া এই ওপেনারকে যে পাওয়ার প্লে ভালোভাবে কাজে লাগানোর গুরুদায়িত্ব নিয়েই নামতে হবে। তা-ও আবার কোন ম্যাচে? যেটির ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ভাগ্যের অনেকটাই।
ইউকে/এএস