দুই ডোজ পাওয়া মানুষ দুই কোটি 

বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: দেশে দুই কোটি মানুষের করোনাভাইরাসের টিকার দুই ডোজ পূর্ণ হচ্ছে আজ। অন্যদিকে চার কোটি মানুষের পূর্ণ হবে এক ডোজ। এর মধ্য দিয়ে এদিন ছয় কোটি ডোজের বেশি টিকা দেওয়া সম্পন্ন হবে। শতকরা হিসাবে গত বৃহস্পতিবার দেশের জনসংখ্যার ২৩ শতাংশের প্রথম ডোজ এবং ১২ শতাংশের দ্বিতীয় ডোজ টিকা পূর্ণ হয়েছে। এ অবস্থায় আগামী সপ্তাহে শুরু হচ্ছে ১২-১৭ বছর বয়সীদের রুটিন টিকাদান কার্যক্রম। গত ১২ অক্টোবর এই বয়সসীমার ১২০ জনকে পরীক্ষামূলকভাবে টিকা দেওয়া হয়েছিল।

এই ধারাবাহিকতায় সরকার এখন পরিকল্পনা করছে আরো কম বয়সীদের টিকার দেওয়ার। এ ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, কিউবা, চিলি, আরব আমিরাতসহ আরো কয়েকটি দেশের টিকা কার্যক্রম সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এসব দেশে এরই মধ্যে দুই বছর পর্যন্ত বয়সী শিশুদের কভিডের টিকা দেওয়া হচ্ছে। কোথাও পরীক্ষামূলকভাবে দেওয়া হচ্ছে আবার কোথাও ট্রায়াল শেষ করে জরুরি প্রয়োজনে অনুমতি দিয়ে গণটিকার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

এই টিকাগুলোর মধ্যে ফাইজার-বায়োনটেক, মডার্না, চীনের সিনোভ্যাক, সিনোফার্ম, কিউবার সবেরানা, ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন, সেরাম-নোভাভ্যাক্সের টিকা অগ্রাধিকার পাচ্ছে। যদিও এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) শিশুদের জন্য কোনো টিকাই অনুমোদন করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) শুধু ১২ বছর পর্যন্ত বয়সীদের জন্য ফাইজারের একটি টিকার অনুমোদন দিয়েছে। তবু অনেক দেশের সরকার নিজেদের দায়িত্বেই শিশুদের জন্য এই টিকা ব্যবহার শুরু করেছে বিভিন্ন পর্যায়ে। ফাইজার-বায়োনটেক, মডার্না, চীনের সিনোভ্যাক, সিনোফার্ম, কিউবার সবেরানা, ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন, সেরাম-নোভাভ্যাক্সের নিজস্ব ওয়েবসাইটেও পাওয়া গেছে শিশুদের টিকার অগ্রগতি সম্পর্কে নানা তথ্য-উপাত্ত। এ ছাড়া এই টিকা যেসব দেশে ব্যবহার হচ্ছে ট্রায়াল বা জরুরি হিসেবে সেই দেশগুলোর সরকারি ওষুধ প্রশাসনের ওয়েবসাইটেও মিলেছে শিশুদের টিকা অনুমোদন বিষয়ে বিভিন্ন ধাপের তথ্য।

বাংলাদেশ সরকারের টিকা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, তাঁরাও গুরুত্বের সঙ্গেই যেখানে যখন যে টিকার নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে পর্যালোচনা করছেন। এই পর্যালোচনার ভিত্তিতেই তৈরি করা হবে দুই বছর বয়সীদের টিকা দেওয়ার কার্যক্রম। যাতে যেকোনো সময় সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা এলে কাজ শুরু করতে সমস্যা না হয়। আগামী সপ্তাহে ১২-১৭ বছর বয়সীদের টিকাদান শুরুর পর থেকেই পরবর্তী ধাপ হিসাবে দুই বছর পর্যন্ত টিকার বয়স নামানোর পরিকল্পনায় গতি বাড়ানো হবে।

অবশ্য বিশেষজ্ঞ পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, এখনো যেহেতু দেশে অগ্রাধিকারের ও অধিকতর ঝুঁকিতে থাকা সব মানুষ টিকা পায়নি, তাই তাদের টিকা না দিয়ে আগেই কম ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের টিকা দেওয়া ঠিক হবে না।

ন্যাশনাল ইম্যুনাইজেশন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি গ্রুপ নাইট্যাগের সদস্য অধ্যাপক ডা. বে-নজীর আহম্মেদ বলেন, ‘বেশ কিছু দেশই দুই বছর বয়সীদের টিকা দিচ্ছে সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে। সেদিক থেকে দূরদর্শী চিন্তা কিংবা পরিকল্পনা আমাদের রাখা দরকার, কিন্তু এখনই নয়। কারণ আমরা অনেক দেশের তুলনায় টিকায় এখনো বেশ পিছিয়ে আছি। আবার অগ্রাধিকারের সব মানুষকে টিকা দিতে পারিনি। বয়স কমানোর ফলে কম ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিরা বেশি টিকা পাচ্ছে আর বয়স্করা টিকায় পিছিয়ে আছে—এটা বড় ধরনের বৈষম্য তৈরি করছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা নাইট্যাগের পক্ষ থেকে আপত্তি জানিয়ে বলেছি, বেশি করে টিকা এনে আগে বয়স্কদের অগ্রাধিকারের টিকা শেষ করে তারপর শিশুদের টিকায় যাওয়া দরকার। নয়তো সামনে আরেকটি সংক্রমণের ধাক্কা এলে তা সামাল দেওয়া যাবে না।’

তবে টিকা ব্যবস্থাপনায় থাকা একাধিক সূত্রের তথ্য অনুসারে চীনের সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাকের টিকা তিন বছর বয়সী শিশুদেরও দেওয়া হচ্ছে। যেহেতু বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত সিনোফার্মের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি টিকা পেয়েছে তাই এই টিকার ব্যাপারে সরকারের ভেতরেও আগ্রহও বাড়ছে। একইভাবে ফাইজারের টিকাও বাংলাদেশ পেয়েছে। এই টিকাও দুই বছর পর্যন্ত বয়সীদের দেওয়া হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। মডার্নার টিকা নিয়ে শিশুদের জন্য চলছে তিনটি ধাপের পরীক্ষা। ছয় মাস থেকে অনূর্ধ্ব দুই বছর, দুই বছর থেকে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর এবং পাঁচ বছর থেকে অনূর্ধ্ব ১১ বছর বয়সের শিশুদের মডার্নার টিকার ফলাফলে অগ্রগতি ভালোই মিলেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশে মোট টিকা এসেছে সাত কোটি ৯৭ লাখ ডোজ। এর মধ্যে টিকা দেওয়া হয়েছে পাঁচ কোটি ৯৫ লাখ ৫৫ হাজার ৬৩৬ ডোজ। প্রথম ডোজ নিয়েছে তিন কোটি ৯৫ লাখ ৬১ হাজার ১৬২ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছে এক কোটি ৯৯ লাখ ৯৪ হাজার ৪৭৪ জন।

ইউকে/এসই