বাঘা (রাজশাহী) সংবাদদাতা: ভাঙনে পাল্টে যাওয়া চকরাজাপুরের মানচিত্রে আবারো আঘাত হেনেছে প্রমত্তা পদ্মা। হঠাৎ করেই পানি বৃদ্ধির সাথে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে পদ্মায় । ‘নদীর একূল-ওকূল ভাঙা গড়ার আচরণগত এই নিষ্ঠুরতায় ভাঙনের কবলে পড়ে বিলিন হচ্ছে ফসলি জমি-পাছপালা । বাঘা উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দুরে চকরাজাপুর ইউনিয়ন। ভাঙনের কবলে পড়ে মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে পদ্মার চরাঞ্চলের চকরাজাপুর গ্রাম। এই গ্রামের নামেই নামকরণ করা হয়েছে চকরাজাপুর ইউনিয়নের। গত দুই মাসের ভাঙনে ইউনিয়নটির ৯টি ওয়ার্ড়ের- ৩, ৫, ৬ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড়ের বেশির ভাগ এলাকা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। আর ৪ নম্বর চক রাজাপুর ওয়ার্ডের পুরোটি গিলে নিয়েছে পদ্মা।
সোমবার (২৫-১০-২০২১) নৌকায় চকরাজাপুর ইউনিয়নে যাওয়ার পথে দেখা গেছে ভাঙ্গনের ভয়াবহ দৃশ্য। কখনও ভাঙছে দ্রুত গতিতে আবার কখনও নিরব থাবায় পদ্মা ভেঙে চলেছে চকরাজাপুরের বির্স্তীর্ণ এলাকা। ভাঙ্গনের তীব্রতা চলছে নতুন করে জেগে উঠা পদ্মার চরের লক্ষীনগর,কালিদাশখালি এলাকায়। ভাঙন থেকে প্রায় ২০ মিটার দুরে রয়েছে,কালিদাশখালি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সরকারের দেওয়া ভ’মিহীন বাহের আলীর পাঁকা বাড়ি। বাহের আলীর বাড়ি ও কালিদাশখালি বিদ্যালয় সংলগ্ন পাঁকা সড়কটির প্রায় ১ কিলোমিটার নদীগর্ভে চলে গেছে। বাহের আলী তার পাঁকা বাড়িটি ভেঙে নিচ্ছেন।
এবছর, ভাঙনের কবলে পড়লে কালিদাশখালি গ্রাম থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ও পরিষদ সংলগ্ন চেয়ারম্যানের বসতবাড়ি ও কমিউনিটি ক্লিনিক। ইউনিয়নটির ৪ গ্রামের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি, আম বাগান সহ কয়েক একর ফসলি জমি, কাচাঁ পাকা-সড়ক পদ্মায় বিলীন হয়েছে। ভিটে মাটি হারিয়ে কেউ অন্য জায়গায় আবার কেউ জমি লীজ নিয়ে বসতি স্থাপন করেছেন এই চরেই। পরিবার নিয়ে স্খানীয় একটি বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান । এখন অন্য জায়গায় বাড়ি তুলছেন। ভাঙনের কবলে পড়লে, চর এলাকার ১১৫টি বিদ্যুতের পুল তোলা হয়েছে বলে জানান,নাটোর পল্লী বিদুৎ সমিতি-২ এর বাঘা জোনাল অফিসের জিএম সুবির কুমার।
স্থানীয়রা জানান, মাসাধিকাল ধরেই পদ্মার ভাঙ্গন কম বেশি চলছে। গত বছরের ভাঙনে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে, দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বসতবাড়ি ও আবাদি জমি-গাছপালা। দীর্ঘদিনের ভাঙ্গনে চলে গেছে চকরাজাপুর গ্রামটি। ইউনিয়়নের ৩ ভাগের একভাগ চলে গেছে নদীগর্ভে । এভাবে ভাঙতে থাকলে উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে় যাবে চকরাজাপুর ইউনিয়়ন।
লক্ষীনগর এলাকার সোবাহান ও হাজেরা বেগম বলেন, বাবা মায়ের সাথে বড় হয়েছি এই চরে । জন্ম ভ’মির প্রতি ভালোবাসায় এলাকা ছাড়তে পারছিনা। ভাঙনের কবলে পড়ে চকরাজাপুর হাইস্কুলের পাশে একজনের জমিতে বসতি গড়েছেন,গ্রাম পুুলিশ নূর মোহাম্মদ (৫৩)। তিনি জানান, জমির মালিক তার নামে মামলা করেছে। জমির, ন্যায্য ইজারা মূল্য দিতে চেয়েও মালিক মানছেন না।
চকরাজাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমান বলেন, গতবছর ভাঙনের কবলে পড়লে.বিদ্যালয়টি, দুই কিলোমিটার দূরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এবছর আবার ভাঙনের কবলে পড়েছে । তিনি বলেন, প্রতি বছর পদ্মার ভাঙ্গন কম বেশি লেগেই আছে। আর জিও ব্যাগ ফেলে রক্ষার চেষ্টা করছে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড।
চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন,শুনেছি উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের আলাইপুর নাপিতপাড়া থেকে চকরাজাপুর ইউনিয়নের লক্ষীনগরের শেষ মাথা পর্যন্ত নদী শাসনের আওতায় আনার একটি প্রকল্প হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পদ্মার প্রান্ত নদী ভাঙনের হাত হতে রক্ষা পাবে। বাঁচবে চকরাজাপুর ইউনিয়নসহ পাকুড়িয়া ও মনিগ্রাম ইউনিয়নের পদ্মা পাড়ের লোকজন।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাভোকেট লায়েব উদ্দীন লাভলু বলেন,গত তিন দশকের ভাঙ্গনে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে, চকরাজাপুরসহ পাকুড়িয়া ও মনিগ্রাম ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী এলাকার হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি, বসত ভিটা,রাস্তা-ঘাট,হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ মসজিদ ও কবরস্থান। ওই সময় থেকে নদী ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারিয়েছে, স্বচ্ছল-কৃষি নির্ভর প্রায় সহস্রাধিক পরিবার। এদের অনেকেই বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বসত বাড়ী গড়ে তুলে বসবাস করছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাট-বাজার অন্য জায়গায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাপিয়া সুলতানা জানান, সরজমিনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, নদী শাসনের জন্য চারঘাট-বাঘার পয়েন্টে, কাজের প্রস্তুতি রয়েছে। ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের মধ্যে বাঘার ১৩ কি. মি. নদী ড্রেজিং রয়েছে।
ইউকে/এসই