অলিম্পিকে স্বর্ণজয়ী মার্গারিটার অপেক্ষায় স্বজনরা

দুর্গাপুর (রাজশাহী) সংবাদদাতা: অলিম্পিকে (২০১৬ সাল) রিদমিক জিমন্যাস্টিকস এ স্বর্ণজয়ী মার্গারিটা মামুন রিতার গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার ক্ষিদ্রকাশিপুরে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ২৮-৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় সেন্ট্রাল সাউথ এশিয়ান অটিস্টিক জিমন্যাস্টিকস টুর্নামেন্টের শুভেচ্ছাদূত হিসাবে বর্তমানে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। নিকটাত্মীয়রা প্রত্যাশায় করছেন রিতা দুর্গাপুরের এসে তাদের সঙ্গে দেখা করবেন।

এজন্য তারা অপেক্ষায় রয়েছেন। রিতাকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতিও রয়েছে তাদের। রিতার আপন ফুপাতো ভাই শামসুজ্জোহা দুর্গাপুর ধরমপুর কলেজের ইংরেজির প্রভাষক। সোমবার তিনি বলেন, রিতা আমার থেকে বয়সে অন্তত ১৫ বছরের ছোট। ‘ও’ দুইবার দুর্গাপুর এসেছিল। প্রথমবার তিন বছর বয়সে। দ্বিতীয়বার ১০ বছর বয়সে। দুইবারই তার বাবা আব্দুল্লাহ আল মামুন ও মা রাশিয়ান নাগরিক অ্যানা সঙ্গে এসছিলেন। সেই স্মৃতি এখনো রয়ে গেছে নিকটাত্মীয় এবং পাড়া-প্রতিবেশীদের মধ্যে।

শামসুজ্জোহা জানান, রিতার বাপ-চাচারা (আমার মামারা) সাত ভাইবোন। মামুন মামা সবার ছোট। অথচ তিনিই আগে মারা গেছেন। ক্যানসারে ২০১৭ সালে মারা যান তিনি। নিকটাত্মীয়রা মৃত্যুর সময় তাকে দেখতে পাননি। তাই তাদের আক্ষেপ তার (মামুন) মেয়েকে দেখার।

সরেজমিনে দেখা যায়, ক্ষিদ্রকাশিপুর গ্রামে আব্দুল্লাহ আল মামুনের বাবার তৈরি করা একটি পুরোনো মাটির ঘর রয়েছে। ওই ঘরের পাশে ২৫ বছর আগে ইট দিয়ে আরও চারটি ঘর তৈরি করেন মামুন। বাড়িতে এলে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে সেখানে থাকতেন। বাড়ির সামনেই রয়েছে বিশাল পুকুর। চারপাশে রয়েছে আম, কাঁঠাল, লিচুগাছ। রয়েছে বিশাল বাঁশবাগান।

পরিবারের সদস্যরা জানান, আব্দুল্লাহ আল মামুন দুর্গাপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে একাদশ শ্রেণিতে ভর্র্তি হন রাজশাহী কলেজে। সেখান থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে ১৯৮৩ সালে রাশিয়ায় চলে যান। সেখানে বিয়ে করেন রুশ কন্যা অ্যানাকে। মামুন-আন্না দম্পতির ঘরে ১৯৯৫ সালের ১ নভেম্বর মস্কোতে জন্ম নেন মার্গারিটা মামুন।

শামসুজ্জোহা (মামুনের বোনের ছেলে) বলেন, ‘রিতা যখন ছোট ছিল, তখন তার বাবা চেয়েছিলেন রিতা বাংলাদেশের হয়ে অলিম্পিকে খেলবে। এজন্য তিনি দেশের অলিম্পিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগও করেছিলেন। কিন্তু নানা জটিলতায় সেটা হয়নি। রাশিয়ার হয়েই তাকে অলিম্পিকে অংশ নিতে হয়েছিল। অথচ রিতার বাবার বাড়ি এই বাংলাদেশেই। সেই হিসাবে রিতাও বাংলাদেশি কন্যা। বাংলাদেশকে তিনি বিশ্বের কাছে অনন্য উচ্চতায় তুলে ধরতে পারতেন।’

রিতার ফুপু (মামুনের বোন) দিনা জহুরা বলেন, মামুন স্ত্রী অ্যানাকে প্রথম যখন দেশে নিয়ে আসে, তখন মৌলবি ডেকে কালেমা পড়িয়ে আবারও বিয়ে দেওয়া হয়। গ্রামেই হয় তাদের বিয়ের উৎসব। রিতা সর্বশেষ ১০ বছর বয়সে আমাদের এখানে এসেছিল। সে খুব বেশি বাংলা বলতে পারে না। রিতা আমার গলা জড়িয়ে ধরে চুমু খেতো। ফুপু বলে ডাকত। সব সময় কোলে উঠে জড়িয়ে থাকতে পছন্দ করত। আদর করত। বাচ্চাদের সঙ্গে খেলাধুলা করত। সুযোগ পেলেই পুকুরের বাঁধানো ঘাটে বসে থাকত। তার বাবা মামুন মেয়ে রিতাকে বলত, ‘এটাই তোমার আসল বাড়ি। তুমি এখানে আসবে।’

তবে রিতা গ্রামের বাড়ি আসবেন কি না, তা সঠিকভাবে বলতে পারছেন না তার ফুপাতো ভাই শামসুজ্জোহা। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় রিতার দুই ফুপু নাজমা আখতার ও লাভলী খাতুন থাকেন। তারাও রিতার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। হাই প্রটোকলের জন্যই হয়তো তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে রিতা দুর্গাপুর এলে আমরা খুশি হব। এটি হবে আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরব আর সৌভাগ্যের। কারণ রক্তের সম্পর্ক কোনোদিন মুছে যায় না। সে এলে গ্রামের সবাই খুশি হবে, আনন্দে মেতে উঠবে।’

রিতার মা অ্যানা রিদমিক জিমন্যাস্ট ছিলেন। মায়ের মতোই ক্যারিয়ার গড়ে তোলেন তিনি। ১২ বছর বয়স পর্যন্ত বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। এরপর থেকে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেন মায়ের দেশের পরিচয়ে। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত রিও অলিম্পিকে রাশিয়াকে এনে দেন স্বর্ণ। পরের বছর জিমন্যাস্টিকসকে বিদায় জানান। এর কয়েক মাস আগে রাশিয়ান অলিম্পিক সুইমার আলেক্সান্দার সুখোরুভকে বিয়ে করেন। ২০১৯ সালে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন তিনি।

ইউকে/জিকে/এসই