চারঘাটে স্কুলগামী শিক্ষার্থীর বাল্যবিবাহ বেড়েছে

চারঘাট (রাজশাহী) সংবাদদাতা: রাজশাহীর চারঘাটে করোনাকালে দীঘ সময় স্কুল বন্ধ থাকায় স্কুলগামী কিশোরী শিক্ষার্থীদের বিয়ে দেয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মহামারী করোনার কারনে মার্চ ২০২০ হইতে সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশের ন্যায় উপজেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিল। সরকারী উদ্যোগে ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা কাযক্রম পরিচালিত হলেও গ্রাম পযায়ের অধিকাংশ শিক্ষাথীদের স্মাটফোন ও ইন্টারনেট সুবিধা না থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীরাই বেশিরভাগ সময়ই বাড়িতে বসে অলস সময় কাটাচ্ছিলেন। দরিদ্র অধিকাংশ অভিভাবকগন স্কুল বন্ধের সুযোগে তাদের মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেন।

উপজেলা পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মোতাবেক এই উপজেলার প্রায় ৮৫ ভাগ মানুষ কৃষি সংক্রান্ত দৈনিক আয়ের উপর নিভরশীল। করোনায় চলমান লকডাউনে অধিকাংশ এ সকল দৈনিক আয়ের মানুষের আয় তুলনামুলক কমে যায়। পাশাপাশি তারা এই মহামারীতে জীবন নিরাপত্তায় ভুগতে থাকেন। ফলে বাল্য বিবাহ হয়েছে এ সকল কিশোরী শিক্ষাথীর অধিকাংশ অভিভাবকগন আথিক অভাব অনটন ও আকস্মিক ভালো ছেলে পাওয়ায় তাদের মেয়েদের স্বল্প বয়সে বিয়ে দিয়েছেন বলে তারা এই প্রতিবেদককে জানান।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, চারঘাট উপজেলায় প্রায় ৬৮টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই সকল মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৫ হাজার ৯ শত ৪৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। যার মধ্যে ৬ হাজার ৮শত ৯৫ জন ছাত্র এবং ৯ হাজার ৩১ জন ছাত্রী রয়েছে। গত দেড় বছরে উপজেলার প্রায় প্রতিটি স্কুলের অন্ততপক্ষে একজন থেকে একাধিক কিশোরী শিক্ষাথীদের বাল্য বিবাহ হয়েছে বলে জানা যায়। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ৬ শত ৮৪ জন নারী শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে গেছে শতকরা হার প্রায় ৮ শতাংশ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিয়ে হয়েছে এমন ছাত্রী যারা অধিকাংশই অষ্টম,নবম ও দশম শ্রেনীতে পড়ুয়া ছাত্রী। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ১.৪৬%, ৭ম শ্রেণীতে ৩.৩৯%, ৮ম শ্রেণীতে ৫.৬৭%, ৯ম শ্রেণীতে ১২.৭২%, ১০ম শ্রেণীতে ১৭.৫৪% ছাত্রীদের বাল্য বিবাহ হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার ঝিকরা উচ্চ বিদ্যালয়ে সবোচ্চ ২২ জন ছাত্রী, উত্তর মেরামত উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৯ জন ছাত্রী, হাবিবপুর দাখিল মাদ্রাসার ৪ জন, সরদহ দাখিল মাদ্রাসার ৪ জন, নিমপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩ জন, ডাকরা বালিকা বিদ্যালয়ে ৯ জন শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে গেছে। এদের অধিকাংশ ছাত্রীই বিয়ের পর স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।

বাল্য বিবাহের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বগে প্রকাশ করেছেন উপজেলার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থানাপাড়া সোয়ালোজের সহকারী পরিচালক ও নারী পক্ষের সভানেত্রী মাহমুদা বেগম গিনি। স্কুলগামী ছাত্রীদের বাল্যবিবাহ রোধে স্কুলে স্কুলে শিক্ষাথীদের কাউন্সিল করার পরামশ প্রদান করেন তিনি।

বাল্য বিবাহের বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জয়নাল আবেদীন বলেন, এটা অত্যান্ত দু:খজনক এবং করোনার কারনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা ও অথনৈতিক সংকটের সুযোগে অভিভাবকগন স্কুলগামী শিক্ষাথীদের বিয়ে দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে স্কুল কতৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে আর যাতে বাল্য বিবাহের ঘটনা না ঘটে তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নিদেশনা দেয়া হয়েছে।

ইউকে/এমএইচ/এসই