১৭ নথি সরানোর প্রমাণ সিআইডিতে

বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ১৭টি নথি সরানোর ঘটনায় কারা জড়িত, সে ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত হতে পেরেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি। মন্ত্রণালয়ের ৬ কর্মচারীকে হেফাজতে নিয়ে গত তিন দিন ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিআইডি। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালগুলোয় সরঞ্জামাদি সরবরাহের ঠিকাদার রাজশাহীর নাসিমুল গনি টোটনের বাড়িতে সোমবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করেছে সিআইডির একটি দল।

এছাড়াও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আরও তিন কর্মচারীকে মঙ্গলবার হেফাজতে নিয়েছে সিআইডি। তারা হলেন, অহিদ খান, সেলিম ও নবী। এদের মধ্যে অহিদ খান মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সিআইডির একটি দায়িত্বশীল সূত্র। তবে এখন পর্যন্ত এই তিনজনের আটকের কথা এখনও অফিসিয়ালি জানায়নি সিআইডি। এ নিয়ে ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে তারা।

এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, তার মন্ত্রণালয় থেকে ফাইল চুরির যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে তিনি ‘ক্ষুব্ধ’। মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে ফাইল চুরির ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। এ ব্যাপারে যা যা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার আমরা নিয়েছি। আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং পুলিশ এ ঘটনার তদন্ত করছে। তদন্ত পরবর্তীতেও আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

জানা গেছে, নাসিমুল গনি টোটন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত একজন ঠিকাদার। তার বাসা রাজশাহী নগরীর কেশবপুরের ভেড়িপাড়ায়। ঢাকা থেকে সিআইডির একটি দল রাজশাহী গিয়ে বাসা থেকে টোটনকে ঢাকায় নিয়ে আসে। এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ৯ কর্মচারীকে গ্রেফতার দেখানো হবে কি-না সে ব্যাপারে গতকাল পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি সিআইডি। ওই ৯ জনসহ ১৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর আঙ্গুলের ছাপ নিয়েছে তদন্ত সংস্থাটি। সিআইডি সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেই কয়েকজন ফাইল চুরির সঙ্গে জড়িত বলে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন অবশ্য জানিয়েছেন, এর সঙ্গে কে বা কারা জড়িত থাকতে পারে তা এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেউ না কেউ এতে জড়িত থাকতে পারে। কারণ বাইরে থেকে কারও পক্ষে ওই কক্ষে প্রবেশ করার সুযোগ নেই। সূত্র জানায়, ফাইল থাকা কেবিনেটের ড্রয়ারে কার কার আঙ্গুলের ছাপ রয়েছে, সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য রাসায়নিক পরীক্ষা করছে সিআইডি। নিশ্চিত হয়েই তারা অভিযুক্তের নাম জানাবে।

প্রথম দফায় গত ৩১ অক্টোবর থেকে সিআইডির হেফাজতে থাকা ৬ কর্মচারী হলেন, জোসেফ সরদার, আয়শা সিদ্দিকা, বাদল, বারী, মিন্টু ও ফয়সাল। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি সচিবালয়ে গিয়ে ৩ নম্বর ভবনের নিচতলার ২৪ নম্বর কক্ষ থেকে আলামত সংগ্রহ করেন সিআইডির সদস্যরা। সংস্থাটির ক্রাইম সিন ইউনিটের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় মন্ত্রণালয়ের অনেকের আঙ্গুলের ছাপ। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে জোসেফ ও আয়শার কাছে আলমারির চাবি থাকত বলে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন। সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ থেকে ১৭টি নথি খোয়া যাওয়ার জায়গা সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত। সিআইডি সেই সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেও কিছু তথ্য পেয়েছে। তবে ফুটেজে কাদের দেখা গেছে, সে বিষয়ে সিআইডি কিছু এখনই কিছু বলতে চায়নি।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান তদন্তে পাওয়া তথ্যের বিষয়ে জানিয়েছেন, আমরা এ ঘটনায় দায়ের করা জিডির ছায়া তদন্ত করছি। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলতে পারব।

১৭টি ফাইল সরানোর ঘটনায় গত ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে মন্ত্রণালয়। ফাইলগুলো ছিল স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) শাহাদৎ হোসাইনের কক্ষের লাগোয়া কক্ষে। সেই কক্ষে বসেন ক্রয় ও সংগ্রহ শাখা-২-এর সাঁট মুদ্রাক্ষরিক ও কম্পিউটার অপারেটর মো. জোসেফ সরদার ও আয়েশা সিদ্দিকা। ফাইলগুলো এই দুই কর্মীর কেবিনেটে ছিল এবং এই কেবিনেটের চাবিও থাকে তাদের দুইজনের কাছেই বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়ের সূত্র। এই দুটি চাবি দিয়েই কেবিনেট খোলা হয়।

ইউকে/আরএস