ঘূর্ণিঝড়-শীত, তীব্র শৈত্যপ্রবাহ আসছে

স্নিগ্ধা ইসলাম: ভরা কার্তিকে দিনে-রাতে তাপমাত্রার তারতম্য বাড়ছে। এখনও শীত আসার ঢের বাকি। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই শীতকাল শুরুর কথা। কিন্তু এবার অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকেই রাতের তাপমাত্রার পতন ঘটতে শুরু করেছে। এমনকি উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ভোরের কুয়াশার সাথে পুরোদস্তুর শীতের আমেজ চলছে। মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে সিলেটের শ্রীমঙ্গলে।

সেখানে তাপমাত্রা ১৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছে। রাজধানী ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একদিন আগে সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল রংপুরের ডিমলায় ১৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, নভেম্বর শুরুর দিন থেকেই তাপমাত্রার পারদ নামতে শুরু করেছে। কোথাও কোথাও ঠাণ্ডা আমেজ শুরু হয়েছে। সামান্য পরিবর্তন দেখা গেলেও শীতের দেখা পেতে আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে।

দেশের উত্তর-পশ্চিমে একটা উচ্চ চাপ বলয় বিরাজমান করছে এখন। এই উচ্চ চাপ বলয় বঙ্গপোসাগরের জলীয় বাষ্পকে দক্ষিণের দিকে ঠেলে দেবে। সেই তাপমাত্রাটা গড়ে ১৮ থেকে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করবে অঞ্চলভেদে। সেই হিসেবে নভেম্বরে এই তাপমাত্রা থাকবে। যেটা শীতকালে সাধারণত গড় তাপমাত্রা থাকে। ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ একটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হবে।

আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস জানিয়েছেন, চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে শীত নামবে আর ডিসেম্বরে তীব্র শৈত্য প্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই দেশ থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু বিদায় নিয়েছে। কার্তিকেও হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।বরং নভেম্বরে বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। আর ঘূর্ণিঝড়ের রেশ না কাটতেই ডিসেম্বরে শৈত্যপ্রবাহেরও সম্ভাবনাও রয়েছে।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির ত্রৈমাসিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি নভেম্বর মাসে বাংলাদেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি এ মাসেই বঙ্গোপসাগরে অন্তত দু’টি লঘুচাপের সৃষ্টি হতে পারে। যার একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে।

তবে রাত ও দিনের তাপমাত্রা হ্রাস পেতে থাকবে। অন্যদিকে, এ মাসেও স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে শেষের দিকে উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে অন্তত দু’টি শৈত্য প্রবাহ (৮- ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস মৃদু এবং ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস মাঝারি ধরনের) বয়ে যেতে পারে।

ডিসেম্বরে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চল ও নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি/ ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র মাঝারি ও হালকা ধরনের কুয়াশা পরতে পারে। আবহাওয়াবিদ সামসুদ্দীন আহমেদ জানিয়েছেন, ডিসেম্বর থেকে শীতের আমেজ পুরোমাত্রায় পাওয়া যাবে। এ মাসেই একটা শৈত্য প্রবাহের প‚র্বাভাস দেখা যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে খেয়ালী হয়ে উঠছে আবহাওয়া।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, নভেম্বর মাসে দেশের উত্তরাঞ্চল ও নদী অববাহিকায় ভোররাত থেকে সকাল পর্যন্ত হালকা বা মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। এ মাসে দেশের প্রধান নদ-নদীতে স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় থাকতে পারে।

অক্টোবর মাসে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১ দশমিক ৪ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, অক্টোবর মাসে সার্বিকভাবে বাংলাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহী বিভাগে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছে।

ইউকে/আরএস