রাবির হলে হলে সিট দখলের রাজনীতি, চলছে বাণিজ্য

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবেদক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলসমূহ গত ১৭ অক্টোবর খুলে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতিতে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে হলগুলো। এরই মধ্যে পড়াশোনা শেষ করে হল ছেড়েছেন বহু শিক্ষার্থী। এতে প্রতিটি আবাসিক হলে অন্তত ৭০টি করে সিট ফাঁকা হয়েছে। আর এসব সিট দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সিট দখলে নিতে যেমন বেড়েছে রাজনীতি একই সঙ্গে বেড়েছে সিট বাণিজ্যের রমরমা ব্যবসা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের অনুসারী হলের নেতাকর্মীরা সিট দখলে নিতে রুমে রুমে গিয়ে ফাঁকা সিটের তালিকা তৈরি করছেন। এতে সিট বণ্টন নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে হল প্রশাসনের। শুধু তাই নয়, কয়েকটি হলে প্রাধ্যক্ষদের অনুমতি নিয়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের বের করে দিয়ে সেই সিট দখলে নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে হল শাখা ছাত্রলীদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।

শের-ই-বাংলা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সিয়াম আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, হল খুলতে না খুলতেই হলের ফাঁকা সিটগুলো ছাত্রলীগের দখলে নিতে বিভিন্ন রুমে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের নাম, কবে মাস্টার্স শেষ হবে এবং কবে হল ছাড়বেন, সেই বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন হলের ছাত্রলীগের নেতারা।

শিক্ষার্থীদের আরও অভিযোগ, দখলকৃত সিটগুলোতে টাকার বিনিময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের তুলছেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। হলের সিট পেতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের গুনতে হচ্ছে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে। সিঙ্গেল রুমে উঠতে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা এবং ডাবল ও ট্রিপল রুমের সিটের জন্য তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা নিচ্ছেন ছাত্রলীগ নেতারা।

জানা যায়, গত ১৭ অক্টোবর হল খোলার দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের আবাসিক শিক্ষক তানজিল ভ‚ঞা দুইজন শিক্ষার্থীকে দুইটি আলাদা রুমে তুলে দেন। কিন্তু হল শাখা ছাত্রলীগ নেতারা ওই শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়ে রুম থেকে বের করে তালা দেন। এছাড়াও ছাত্রদের অন্য আবাসিক হলগুলোতেও সিট দখলকে কেন্দ্র করে প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীর। এদিকে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের এমন কর্মকাণ্ডে বিপাকে পড়েছে হল প্রাধ্যক্ষরা।

ছাত্রলীগের সিট দখলের বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক ও শহীদ শামসুজ্জোহা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জুলকার নায়েন বলেন, আমাদের কাছে অফিসিয়ালি কোনো অভিযোগ আসে নি। যদি আসে তবে আমরা সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নিবো।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, আমরা হল নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছি, সাংগঠনিক কোনো কাজ করতে গিয়ে যেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা না হয়। হলের ফাঁকা সিটে কাউকে তোলার আগে হল প্রাধ্যক্ষকে জানানো হয়। পরে হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা তাদের হলের আবাসিকতা করিয়ে নেয়। হল নেতাদের কারো বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইউকে/আরএস