রামেক হাসপাতালে এক বছরে সাপে কাটা ২২ রোগীর মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক: একবছরে ২২ জন সাপেকাটা রোগির মৃত্যু হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে গত একবছরে (নভেম্বর ২০২০-অক্টোবর ২০২১) তাদের মৃত্যু হয়েছে। তবে মারা যাওয়া অধিকাংশ রোগিই দেরিতে এসেছে হাসপাতালে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে- সাপেকাটা রোগির চিকিৎসার স্বার্থে রাজশাহীর ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও পূর্ণকোর্স চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। সংরক্ষিত রয়েছে ‘অ্যান্টিভেনাম’ ভ্যাকসিনও। তাই ওঝার শরণাপণ্ন না হয়ে দ্রুত নিকটতম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে অকাল মৃত্যু থেকে অনেকেই রক্ষা পাবেন।

রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে- গত ১ বছরে (নভেম্বর ২০২০-অক্টোবর ২০২১) ৫৮২ জন সাপেকাটা রোগি এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলো। এদের মধ্যে ১১৪ জনের শরীরে ‘অ্যান্টিভেনাম’ প্রয়োগ করা হয়। গত ১ বছরে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২২ জন সাপেকাটা রোগি মারাও যায়। বাকিরা সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

রাজশাহী সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে- আগে রাজশাহীতে সাপেকাটা রোগির পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার কোর্স হিসেবে একমাত্র ভরসা ছিল রামেক হাসপাতাল। শুধু রামেক হাসপাতালেই বিষধর সাপে কামড়ানো রোগিদের জন্য ভ্যাকসিন অর্থাৎ ‘অ্যান্টিভেনাম’ প্রয়োগ করা হতো। কিছুদিন আগে রাজশাহী অঞ্চলে রাসেল ভাইপারসহ অন্যান্য বিষধর সাপের উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে রাজশাহীর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে সাপেকাটা রোগির পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. কামরুন্নাহার কান্তা বলেন, ‘আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাপেকাটা রোগিদের চিকিৎসার জন্য পূর্ণাঙ্গ কোর্স ছিল না। সম্প্রতি সিভিল সার্জন অফিস থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ‘অ্যান্টিভেনাম’সহ প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৫টি অ্যান্টিভেনাম সরবরাহ করা হয়েছিল। গত মাসে দুইজন সাপেকাটা রোগি বাঘা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছিল। এদের মধ্যে একজনকে বিষধর সাপে কেটেছিল। তাকে সিভিল সার্জন অফিস থেকে সরবরাহ করা ‘অ্যান্টিভেনাম’ প্রয়োগ করায় ওই রোগি প্রাণে বেঁচে যায়।’

রামেক হাসপাতাল পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘রাজশাহী অঞ্চলে বিষধর সাপের উৎপাত অন্যান্য এলাকার চেয়ে একটু বেশি। কিন্তু এতদঅঞ্চলে রামেক হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোথাও সাপেকাটা রোগির চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল না। যার কারণে সাপেকাটা রোগি নির্ধারিত সময়ের পরে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় গত এক বছরে ২২ জন মারা গিয়েছে। তবে সম্প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর চিকিৎসার ব্যবস্থা করায় হয়তো সাপের কামড়ে মারা যাওয়া রোগির সংখ্যা কমে আসবে।’

রাজশাহীর ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. রাজিউল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে আগে সাপেকাটা রোগির জন্য প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল। বর্তমানে প্রত্যেক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অন্তত ২ জন সাপেকাটা রোগির জন্য অ্যান্টিভেনামসহ প্রয়োজনীয় যাবতীয় ওষুধ সরবাহ করা হচ্ছে। এছাড়া প্রত্যেক মাসিক মিটিঙে সাপেকাটা রোগির জন্য ওষুধ মজুদ আছে কিনা সেটির খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। আশা করছি, সাপেকাটার পর দেরি না করে সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে রোগি প্রাণে বেঁচে যাবে।’

ইউকে/এসএম