নিজস্ব প্রতিবেদক: আধুনিক স্বাস্থ্য সচেতনতার নামে দেশের হোটেল, মোটেল ও রেস্তোরাঁয় একবার ব্যবহারযোগ্য (ওয়ান টাইম) প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। যতই দিন যাচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগের সাথে সাথে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের দৌরাত্বও মারাত্বকভাবে বেড়েই চলেছে। অথচ এগুলো একদিকে মানবদেহের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে।
এছাড়া এগুলো আমাদের ভূমির উর্বরতাও কমাচ্ছে। পাশাপাশি বায়ূ দূষণ ঘটাচ্ছে এবং সমুদ্রের জলজ উদ্ভিদ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে হুমকির মধ্যে ফেলেছে। তাই প্লাস্টিক সামগ্রীর উৎপাদন, বিক্রি, বিপণন ও বিতরণ বন্ধের বন্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ব্যক্তি সচেতনতা বাড়ানোর ব্যাপারেও বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন ও বর্তমান প্রেক্ষিত বিষয়ে এক উদ্বুদ্ধকরণ সভায় সরকার এবং সব শ্রেণির মানুষের প্রতি এই দাবি ও আহ্বান জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে রাজশাহীর মাস্টারশেফ রেস্তোরাঁয় এ সভার আয়োজন করে।
সভায় জানানো হয়- একবার ব্যবহাযোগ্য প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে বিদ্যমান আইনগত নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে কার্যকরের জন্য বাজার তদারকী এবং পলিথিন উৎপাদনকারী যন্ত্রপাতি জব্দ ও কারখানা বন্ধ জরুরি হয়ে পড়েছে। সারাদেশে একবার ব্যবহারযোগ্য (ওয়ান টাইম) প্লাস্টিক পণ্যের বিপরীতে নিরাপদ বিকল্প কি হতে পারে সে বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ণও এখন অত্যাবশ্যকীয়। আর পরিবেশবান্ধব বিকল্প পণ্যগুলো সুলভ মূল্যে বাজারে সহজলভ্য করতে হবে। না হলে পরিবেশ দূষণকারী প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করা হয়।
এক গবেষণার কথা উল্লেখ করে এই সভায় জানানো হয়-প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় ১৫ কোটি টন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকপণ্য উৎপাদিত হয়। একটি প্লাস্টিকের বোতল থেকে প্রায় ১০ হাজার ক্ষুদ্র কণা বা মাইক্রোপ্লাস্টিক তৈরি হতে পারে যা পরিবেশ ও প্রতিবেশে স্থায়ীভাবে থেকে যায়। আর একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক মূলত ২০-৫০০ বছরের বেশি সময় ধরে পৃথিবীতে অবস্থান করে। রাজধানীর চারপাশের বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীতে প্রায় ৩০ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য পাওয়া গেছে। যার অর্ধেকই পাওয়া গেছে বুড়িগঙ্গা নদীতে। তাই সহজেই বোঝা যায় প্লাস্টিক পণ্য কিভাবে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন এজেন্সীর (বিডা) সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এই উদ্বুদ্ধকরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. রেদওয়ানুর রহমান। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেলা’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারী তন্ময় কুমার সান্যাল।
সভায় মুক্ত আলোচনার সঞ্চালক ছিলেন- দৈনিক সোনারদেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আকবারুল হাসান মিল্লাত। বিশেষ অতিথি ছিলেন- রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন ডলার, বাংলাদেশ রেস্তোঁরা মালিক সমিতি রাজশাহী জেলা শাখার আহ্বায়ক রিয়াজ আহমেদ খান ও পরিবেশ অধিদফতর রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের কেমিস্ট মিজানুর রহমান।
সভায় রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন রেস্তোরাঁ ও ফার্স্ট ফুড প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীরা উপস্থিত ছিলেন।
ইউকে/এসই/এসএস