বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: তৃতীয় লিঙ্গের চেয়ারম্যান প্রার্থীর কাছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ৬ নং ত্রিলোচনপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বড় ব্যবধানে জিতেছেন হিজড়া নজরুল ইসলাম ঋতু। তাঁর প্রতীক আনারস। এ ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন নজরুল ইসলাম ছানা। আর ইসলামি আন্দোলন মনোনীত হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মাহবুবুর রহমান।
৯ হাজার ৫৬৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন নজরুল ইসলাম ঋতু। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের নজরুল ইসলাম ছানা পেয়েছেন ৪ হাজার ৫১৭ ভোট। ওই ইউনিয়নের ১০ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারের কাছ থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বিজয়ী চেয়ারম্যান ঋতু উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের সন্তান। তাঁর আরও তিন ভাই ও তিন বোন রয়েছে। তিন ভাই ঢাকাতে থাকেন, বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। জন্মের পর তৃতীয় লিঙ্গ প্রকাশ পাওয়ায় মাত্র সাত বছর বয়সে তাঁকে গ্রাম ছেড়ে ঢাকা চলে যেতে হয়। সামান্য লেখাপড়া করলেও সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতায় প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোনো হয়নি। ছোটবেলা থেকেই ঢাকার ডেমরা থানাতে তাঁর দলের গুরুমার কাছেই বেড়ে ওঠা। এখন তাঁর বয়স ৪৩ বছর। গুরুমার পরের দায়িত্বটা তিনি দেখভাল করেন।
ঢাকাতে থাকলেও পরিবারের টানে প্রায়ই বাড়িতে আসেন ঋতু। তাঁর কষ্টার্জিত জমানো অর্থ দিয়ে বিগত প্রায় ১৫ বছর ধরে জন্মস্থান দাদপুর গ্রামসহ ইউনিয়নবাসীর উন্নয়নে আর্থিক সহযোগিতা করে আসছেন। এ পর্যন্ত এলাকায় দুটি মসজিদ করে দিয়েছেন। বিভিন্ন মন্দিরের উন্নয়নে দান করেছেন অর্থ। এলাকার কেউ অসুস্থ হলে বা কন্যাদায়গ্রস্ত কেউ তাঁর সাহায্য চেয়ে নিরাশ হননি। কয়েক বছর আগে গ্রামের বাড়ি দাদপুরে বাবার জমিতেই বানিয়েছেন একটি পাকা বাড়ি।
নির্বাচন প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম ঋতু বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে নির্বাচন কী তা বুঝিনি। এলাকার মানুষ আমাকে ভালোবেসে দাঁড় করিয়েছিল। আমার পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগ করে। আমার বাবা মারা যাওয়ার সময় বলেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন, দেশ স্বাধীন করেছেন। তাই যত দিন তোরা বেঁচে থাকবি আওয়ামী লীগের বাইরে যাবি না, নৌকায় ভোট দিবি। প্রয়াত বাবার কথায় নৌকায় ভোট দিলেও কখনো সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করা হয়নি।’
কথা প্রসঙ্গে ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দেশের প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের বিজয়ী এই প্রার্থী বলেন, ‘আর দশজন স্বাভাবিক নারী-পুরুষের মতো না হলেও আমার কোনো দুঃখ নেই। আল্লাহ আমাকে সুস্থভাবে পৃথিবীতে বাঁচিয়ে রেখেছেন এতেই আমি সন্তুষ্ট। সব থেকে বেশি কষ্ট পাই যখন শুনি আমার এলাকার কেউ অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না অথবা মেয়ে বিয়ে দিতে পারছে না। এমন সংবাদ পেলেই আমার সাধ্য মতো চেষ্টা করি তাদের পাশে দাঁড়াতে।’
এর আগে গত উপজেলা নির্বাচনে পার্শ্ববর্তী উপজেলা কোটচাঁদপুরের পিংকি খাতুন নামে এক হিজড়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি দেশে প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের জনপ্রতিনিধির স্বীকৃতি পান।
ইউকে/এসই/এসএম