হরিপদ দত্ত ।। ১৯৭১। স্বাধীনতার যুদ্ধকাল। একদিকে স্বপ্ন, অন্যদিকে দুঃস্বপ্ন। সেই দ্বান্দ্বিককালে শ্রেণি নির্বিশেষে বাঙালির গণমনস্তত্ত্ব নিয়ে আদৌ কোনো গবেষণা হয়নি।
বিষয়টিকে মনোবিজ্ঞানের অধ্যায়ই নয় কেবল, ইতিহাস এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অংশ, তা হয়তো অনেকের ভাববার জায়গায়ই স্থান পায়নি। নয় মাসের আতঙ্ক, ঘন অন্ধকার পৈশাচিক মৃত্যু ভীতির সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়েছিল রাজনৈতিক মুক্তির প্রত্যাশা। কাল চলে গেছে কালান্তরে। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর বয়সের বাঙালির স্বাধীনতা। মুক্তিযোদ্ধাদের বড় একটি অংশের জীবনাবসান ঘটেছে। জীবদ্দশায় তারা কি তাদের স্বপ্ন পূরণের ভেতর দিয়ে হেঁটে যেতে পেরে ছিলেন? এ বড় নির্দয় প্রশ্ন।
৫০ বছর আগের বাঙালি আর আজকের বাঙালি কিন্তু এক নয়। জীব বিবর্তন বিজ্ঞানের দিকে তাকালে বোঝা যায় মানুষ বদলেছে। মানসভূমিও বিবর্তিত হয়েছে। এটাই বৈজ্ঞানিক সত্য। ওখানে অন্ধ আবেগের স্থান নেই। মানুষের মেধা শক্তি, ইচ্ছা শক্তি আর কর্মশক্তির বিবর্তনের পথ ধরে ক্রম বিকাশ ঘটছে। স্তর ডিঙিয়ে ঊর্ধ্বারোহণ ঘটছে। আজকের নবজাতক বা শিশুর আচরণের দিকে তাকিয়ে বিস্ময় জাগলেও, এটাই বাস্তব সত্য। একাত্তরের যুদ্ধকালের বাঙালি যা চাইত, আজ দুই হাজার একুশের বাঙালি কি তা চায়?
প্রতিবারই ১৬ ডিসেম্বর আসে, বিজয় দিবস আসে, সূর্য ডুবলে তা চলে যায়। কত অঙ্গীকার, কথার কত ফুল ফোটে আঙিনায়, সভা-সমিতিতে, সেমিনারে, বেতার-টিভিতে। নেতারা বুদ্ধিজীবীরা বুদ্ধি আর চিন্তার দোকানে কেনাবেচা করেন। তারা গণতন্ত্রের কথা বলেন, সাম্যের কথা বলেন, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের কথা বলেন। ঘরের ভেতর নারীদের সমাজের ভয়, রাষ্ট্রের ভয়, ধর্মের ভয়, নৈতিকতার ভয়, পথেঘাটে গুন্ডার ভয় দেখিয়ে আটকে রেখে সেমিনারে মাইক্রোফোন ফাটিয়ে ফেলেন।
একাত্তরে ১৬ ডিসেম্বরকে যারা উত্থান ঘটিয়েছিলেন তাদের একটি অংশ যুদ্ধে গিয়ে আর বাড়ি ফিরে আসেননি। নিহতদের একটি অংশের দেহাবশেষও খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশে এমন কিছু মানুষকে আজও খুঁজে পাওয়া যাবে যারা ৫০ বছর ধরে বিশ্বাস করে আসছেন একাত্তরের যুদ্ধক্ষেত্রে হারিয়ে যাওয়া তার ভাই একদিন না একদিন ঘরে ফিরে আসবেই। আমার খুব কাছের মানসিক ভারসাম্যহারা প্রবীণ একজন মানুষ আজও বেঁচে আছেন ভাইয়ের ঘরে ফেরার অপেক্ষায়।
ঢাকা শহরের সূত্রাপুর এলাকার গোপাল সাহা লেনের (সদ্যপ্রয়াত কথা সাহিত্যিক, আমার সহপাঠী বন্ধু বুলবুল চৌধুরীদের পাশের গলি) যে বাড়িটিতে আমি দীর্ঘদিন কাটিয়েছি ছাত্রজীবন শেষেও, তা ২৫ মার্চের পর শূন্য হলে এপ্রিলে স্হানীয় বিহারিরা দখল করে। ওখানে ছিল আমার দুটো ট্রাংক। একটিতে জামাকাপড়, অন্যটিতে বইপত্র। বই পত্রের সঙ্গে ছিল আমার বুকে প্রথম রক্ত ঝরানো তিনটি চিঠি এবং সাদাকালো একটি ছবি। বিহারিরা জামা-কাপড় লুট করলেও অক্ষত ছিল বইপত্র এবং আমার স্মৃতি।
১৬ ডিসেম্বর বিহারিদের তাড়িয়ে বাড়িটি দখলে নেয় স্থানীয় একটি বাঙালি পরিবার। এক মাস বাদে বাড়িটি ওরা খালি করে দেয় মূল মালিকের হাতে। কিন্তু লোপাট করে তারা বিহারিদের সম্পদসহ আমার ট্রাংক। দুটোর মধ্যে একটি ট্রাংক আমি ফিরে পাই।কিন্তু বইপত্র সহ স্মৃতির সেই পত্র ও ছবি চলে যায় ফেরিওয়ালাদের কাছে। সাংসারিক হিসেবে আমার স্মৃতিভেজা পত্র আর ছবি যতই তুচ্ছ হোক, আমার কাছে আজও সেসব পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান হারানো সম্পদ। একাত্তরের যে যুদ্ধ আমাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে, ১৬ ডিসেম্বর সেই নিঃস্বতা পূর্ণতায় পৌঁছে দিতে পারেনি।
ব্যক্তি থেকে সমষ্টি, সবার জীবনই যুদ্ধ এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দেয়। এই যে ১৬ ডিসেম্বর বাঙালির রক্তাক্ত জীবন আর গৃহদাহের কাল কেটে তার অভিঘাত ব্যক্তিমন এবং সমাজ-রাষ্ট্র মানসে এক তরঙ্গ তৈরি করে। ভাঙনের শব্দ শোনা গিয়েছিল চেতনায়। ওলটা-পালট হয়ে গিয়েছিল স্হিতাবস্হার। মনোবিজ্ঞান এটা প্রমাণ করতে পারে যে, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারা দেশে প্রতিশোধ আর প্রতিহিংসার নামে প্রতিপক্ষের ওপর গণনির্যাতন এবং গণলুণ্ঠন চলার পেছনে নিশ্চয়ই ভূমিকা ছিল গণহিস্টেরিয়া, গণক্ষোভ এবং ন্যায়বোধের লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া। দীর্ঘ ৯ মাস মানুষ চালিত হয়েছিল সভ্যতার বাইরে এক অন্ধকার আদিমতায়। বন্দিদশা, মৃত্যুভীতি, ধর্ষণভীতি, অগ্নিভীতি স্নায়ুর চাপ, মস্তিষ্কে নানা রকম রাসায়নিক ক্ষরণ জীবনকে করে দেয় লণ্ডভণ্ড। নীতিবোধ, মনুষ্যত্বকে জটিল জালে আবদ্ধ করে। তাই স্বাধীনতার ভেতর দিয়ে মানুষ ক্ষণকালের জন্য হলেও বিস্মৃত হয় সভ্যতা এবং মানবিক শুভবোধ। কেবল বাংলাদেশই নয়, রাষ্ট্রবিপ্লবের হাত ধরে সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীন, গৃহযুদ্ধকালের আমেরিকায় ও গণমানসে এমনটা ঘটেছিল।
আজকের বাংলাদেশের জনসংখ্যার যে অংশের গড় বয়স ২০/২৫ এবং ৭০/৮০ তাদের চেতনার পার্থক্যটা বিশাল। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের কাছে প্রবীণ প্রত্যাশীরা এবং আজকের তারুণ্যের প্রত্যাশীরা মোটেই এক মানুষ নয়। প্রবীণদের কাছে গণতন্ত্র আর সাম্যসমাজে প্রত্যাশা, তারুণ্যের কাছে তারচেয়ে অধিক প্রত্যাশা ফেসবুক চর্চা। ওখানে তরুণেরা অসীম স্বাধীনতার দুনিয়াটাকে দেখতে পায়, যা তাদের কাছে চলমান রাজনৈতিক গণতন্ত্রের চেয়েও অধিক উপভোগ্য। কত অবলীলায় আত্ম আবিষ্কার আর আত্ম স্বাধীনতা কিংবা আত্ম পরিচয়ের জীবনকে টেনে তুলে আনে। সবাই কবি হয়ে যায়, বিজ্ঞানী হয়ে যায়, রাষ্ট্র পরিচালক হয়ে যায়। বিস্ময়ের কথা এই যে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, স্বাধীনতা দিবস, ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি আর অভিঘাতকে ডিঙিয়ে তারা চলে যেতে চায় তথ্যপ্রযুক্তির অধিকারের প্রশ্নের সামনে। আত্মতথ্য প্রচারে।
প্রাচীন সেই বচন অর্থাত্ গণতন্ত্রের কথা, ধর্মনিরপেক্ষতার কথা, ধর্মরাষ্ট্রের কথা, মৌলবাদের কথা, সমাজতন্ত্রের কথা নতুন আঙ্গিকে ব্যাখ্যা করতে হবে। যুদ্ধের সেই পুরাতন আবেগে তাদের চেতনায় পৌঁছা যাবে না। তাই আমাদের বিশ্বাস বাঙালির সেই ১৬ ডিসেম্বরকে, যাকে তরুণেরা যুদ্ধ বিজয়ের দিন হিসেবে জানে, তাকে পুরাতন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছকে ফেলে ব্যাখ্যা করলে চলবে না।
ফেসবুক পোস্ট অর্থাৎ কোনো বিষয়ে তারুণ্যর বিশ্বাসকে নিয়ে নানা মন্তব্য বিচার করলে আমাদের সামনে অত্যাশ্চর্য এক দুনিয়ার উত্থান ঘটে। কত বিশ্বাস, কত ইচ্ছা, কত আনন্দ, কত ক্রোধ, কত ঘৃণা, কত যে ভালোবাসা ঝলমল করে ওঠে চোখের সামনে। সেই তারুণ্যের দিকে আমাদের তাকাতে হকে। তাদেরকে চিনতে হবে্। অথচ ওরা কিন্তু একাত্তরে যুদ্ধ করেনি, যুদ্ধ দেখেনি। ১৬ ডিসেম্বরকে ওরা দেখে বইয়ের পাতায় কালো অক্ষেরে, নেতা কিংবা শিক্ষকের মুখের বুলিতে। রাজপথের শোভাযাত্রায়।
বদলে যাওয়া বাঙালি আর বাংলাদেশের অনেক সময় অপচয় হয়েছে। একুশের ভাষা আন্দোলনের অঙ্গীকার আর স্বাধীনতার কাছে অঙ্গীকার নিয়ে এখনই ভাবতে হবে। মানুষের কণ্ঠস্বরের অধিকার, কলমের অধিকার, তথ্যের অধিকার কি মানুষ পেয়েছে? গণতন্ত্রের মায়া হরিণের আলো-ছায়ার রহস্যময় ছুটে চলা, সামরিক স্বৈরাচারের নির্লজ্জ ছেনালেপণা সহ্য করেছে এ জাতি। অথচ গণতন্ত্র কী, সমাজতন্ত্র কী, ধর্মনিরপেক্ষতা কী, জাতীয়তাবাদ কী, সে বিষয়ে গণঅনুশীলন, চর্চা, আন্দোলন, সাংস্কৃতিক ভিত নির্মাণ কিছুই হয়নি। আচমকাই স্বাধীনতা আন্দোলন, গণ-অভু্যত্থান শুরু হয়ে গেল। দেশ স্বাধীনও হয়ে গেল। স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র অপ্রস্তুত জনগণের কাছে বোঝা হয়ে গেল। এই বোঝা জনগণ বইতে পারল না।
না হলে স্বাধীনতার পরপরই কেন জাতির পিতাকে হত্যা করা হল? যে জাতি একাত্তরের যুদ্ধ করতে পারে সে জাতি জাতির পিতার হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন, বিদ্রোহ করল না। নীরবে সহ্য করল। রাষ্ট্রীয় মৌলনীতিকে জবেহ করে ধর্ম উত্থিত হলো, ধর্মের মহান উদ্দেশ্যে নয় বরং ক্ষমতার জন্য। জনগণ মাথানত করল নীরবে। একাত্তরের বাঙালি বারবার নানা অছিলায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় লিপ্ত হয়ে যায়। এসব নির্মম প্রশ্নকে চেপে যাওয়া যায় না। একাত্তরের যুদ্ধকে আর ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় দিবসকে সামনে রেখে এসব প্রশ্ন মোটেই প্রসঙ্গশূন্য নয়।
বাংলাদেশ তার জাতীয় দিবসগুলোকে আধুনিক যুগে ইউরোপের অনুকরণে ইউরোপ থেকেই ধার করছে। মধ্যযুগ পেরিয়ে আধুনিক যুগে উপনিবেশিক দাসত্বের ভেতরই বাঙালি, আন্তর্জাতিকতার স্পর্শ পেয়েছে। সেই আন্তর্জাতিকতার অভিঘাত তাকে সহ্য করতেই হবে। উত্তর সমাজতান্ত্রিক (তথাকথিত) এই যুগে গণতন্ত্রের দেশ বলে কথিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আজ নোংরা পোশাকের মতো পরিত্যাগ করা মৌলবাদ, ধর্মীয় বর্ণবাদ, জাতিগত বর্ণবাদকে আঁকড়ে ধরেছে। অভিবাসী এশীয় আর আফ্রিকি জনগণ নির্যাতিত হচ্ছে গাত্রবর্ণের কারণে। উৎপীড়িত হচ্ছে অখ্রিষ্টানেরা। ইহুদিরা অবশ্য বাদ পড়ছে। জনগণনায় ইহুদিরা বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্র ধর্মগোষ্ঠীর অংশ। ১ কোটিরও কম ইহুদি আমেরিকার অর্থনীতি, রাজনীতি, অস্ত্রনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে।
আমেরিকা কেন, প্রায় ৭০০ কোটি জনসংখ্যার এই বিশ্বকে চালিকাশক্তি হিসেবে নিয়ন্ত্রণ করছে মাত্র ৩ কোটি ইহুদি। বিজ্ঞান সভ্যতা, প্রযুক্তি তো তাদের মেধা শক্তিরই দখলে। অস্ত্রবিজ্ঞান আর ওষুধ বিজ্ঞানসহ মানবজাতির নব নতুন যত আবিষ্কার আছে, হচ্ছে এবং হবে, তা তাদেরই হাতে।
মার্কিনীদের মহাকাশ গবেষণা এবং মহাকাশ যান তো ইহুদি বিজ্ঞানীদের মেধাশক্তির যোগফল। নাসার অতি জটিল মহাকাশ যানের সবচেয়ে জটিল অংশ তৈরি হয় ওয়াশিংটনে নয় বরং ইসরাইলের তোলাবিবের যন্ত্র তৈরির কারখানায়। প্রতিবছর বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের জন্য যে নোবেল প্রাইজ দেওয়া হয়, সেসব বিজ্ঞানীর বেশির ভাগই ইহুদি।
সমাজতন্ত্রের পতন কেবল সোভিয়েত ইউনিয়নেই ঘটেনি, পূর্ব ইউরোপসহ সারা বিশ্বে। বর্তমান চীন তো ছদ্মবেশী কমিউনিস্ট রাষ্ট্র। সমাজতন্ত্রের পোশাকপরা পুঁজিবাদী রাষ্ট্র। চীনের বর্তমান রাষ্ট্রপতি মাও সে তুঙ-এর সময় সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ধাক্কায় শহর ছেড়ে আমলা পিতার সঙ্গে পার্বত্য গ্রামে গমের খামারে শ্রমিক হয়ে গুহাজীবন কাটাতে বাধ্য হয়েছিলেন।
তারপরও তার রক্তে মিশে থাকা বুর্জোয়া তথা পুঁজিবাদ বিনষ্ট হয়নি। তাই স্পষ্ট বলা যায়, আজকের পৃথিবী ধনতন্ত্রের দুর্বৃত্তায়নে পতিত। সেই বিশ্বের ছোট একটি দেশ বাংলাদেশ। এই দেশের পক্ষে যুদ্ধকালের অঙ্গীকার, বিজয় দিবসের অঙ্গীকার রক্ষা করা অসম্ভব। ভারতে হিন্দু মৌলবাদের উত্থান প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত।
বাংলাদেশের জনগণকে স্বাধীনতা বা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সুফল পেতে গেলে তার অসমাপ্ত কাজগুলো আগে শেষ করতে হবে। এর শুরু তো একাত্তর সময়কালের একমাত্র দায় তা নয়, সাতচল্লিশের দেশ ভাগের রাজনীতি আর সময়েরও দায়। আশ্চর্য এটাই যে, সাতচল্লিশে ধর্মের নামে একটি দেশ ভেঙে যায়। ধর্মের নামে নরহত্যা চলে। সাতচল্লিশে ভাঙা-ভাঙির ভেতর দিয়ে ভারতবর্ষ দুটি দেশ হয়ে গেল।
একটি স্বাধীন দেশ গঠন করতে গেলে দীর্ঘ প্রস্তুতির প্রয়োজন পড়ে। সবার আগে করতে হয় সাংস্কৃতিক আন্দোলন। হিন্দুধর্মের ভেতর যে হিংস্র বর্ণবাদ, জাত-পাত তার বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলন হলো না শহর কিংবা গ্রামের তৃণমূলীয় জনগণকে নিয়ে। বর্ণবাদ বিরোধী কোনো শিক্ষাই পেল না জনগণ। গণতন্ত্র কী জিনিস তা তারা জানলই না। শিখল শুধু ভোট দিতে। ভোটটা যে গণতন্ত্র নয়, গণতন্ত্রের পাখির একটি মাত্র পালক, জনগণকে তা জানানোই হয়নি। গণতন্ত্রের জায়গা দখল করে বসল ধর্মীয় উগ্র জাতীয়তাবাদ। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হলো ভাষাকে হাতিয়ার করে। অথচ দেখা গেল একাত্তরের স্বাধীনতার পরপরই বাংলাভাষা পেছনে হটে যেতে থাকে। ইংরেজি ভাষা দাপটের সঙ্গে দখল করে মাতৃভাষা বাংলার স্থান। এসবই চলে আন্তর্জাতিকতার নামে। স্বাধীনতার সঙ্গে যুক্ত ছিল যে রাষ্ট্রনীতি তাকেও বিতাড়ন করা হলো।
শুকিয়ে যাওয়া মরা নদীর বালিময় রেখা চিহ্ন হয়ে আজ টিকে আছে বাঙালির সংস্কৃতি, তার ঐতিহ্য, তার স্বপ্ন। তাই স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দীকাল পর যে নতুন প্রজন্মের একেবারে নতুন চিন্তাধারার বাঙালির উদ্ভব, তার জন্য গড়তে হবে নতুন চিন্তার ফসল, নতুন চেতনার জগত্। বাঙালির স্বাধীনতা গৌরবান্বিত হবে রাষ্ট্রচেতনা আর গণচেতনার আমূল পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে।
ইউকে/এসএম