নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন পুকুর ও জলাশয় ভরাট বন্ধের দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আয়োজন করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। সোমবার (২০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় মহানগরীর অলোকার মোড়ের মাস্টারশেফ রেস্টুরেন্টে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
একই সঙ্গে ভরাটকৃত পুকুর ও জলাশয়গুলো পুনরুদ্ধার করে সেগুলো সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
সংগঠনের পক্ষ থেকে ৫টি দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো- সিএস দাগ অনুযায়ী রাজশাহী নগরীর প্রতিটি পুকুর চিহ্নিত করা, খতিয়ান অনুযায়ী প্রাপ্ত পুকুরগুলো উদ্ধার করা (ভরাট হয়ে থাকলে পুনরায় খনন করা), সিএস দাগ অনুযায়ী উদ্ধারকৃত পুকুরগুলো সংরক্ষিত জলাশয় হিসাবে গেজেটভূক্ত করা এবং সংরক্ষণ করা, পুকুর ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা, পুকুর ভরাট বন্ধে জরুরীভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের তৎপর জোরদার করা।
ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৪ সালের তথ্য অনুসারে নগরীতে প্রায় এক হাজারের মতো পুকুর অবশিষ্ট ছিল। কিন্তু বর্তমানে পুকুরের সংখ্যা দুইশত এর নিচে নেমে গেছে। গত কয়েক দশকে বিশেষ করে গত ১৫ বছরে নগরীর অধিকাংশ পুকুরই ভরাট করা হয়েছে। পুকুর ভরাট করে সেখানে বাণিজ্যিক ভবন, অট্টালিকা বানানো হয়েছে এবং সেই প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।
অনুষ্ঠানে প্রথান অতিথি হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও পরিবেশেবিদ সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, আমরা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর যে কোন কিছু করলে সেটি এক সময় আমাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে।
সেই প্রাকৃতিক বিদ্রোহ আমরা কোনো ভাবে ঠেকাতে পারবো না। প্রতিটি জনবসতিপূর্ণ এলাকার জন্য পুকুর ও জলাশয় খুব জরুরি। এটি ধ্বংস করলে বিভিন্ন প্রাণীর বাসস্থান ধ্বংস হয়। যেটির প্রভাব সরাসরি মানুষের উপর পড়ে। ফলে জলাশয় ধ্বংস অথবা ভরাট করার অর্থ হলো নিজেদের ধ্বংস ডেকে নিয়ে আসা।
তিনি আরো বলেন, যে কোন ধরনের উন্নয়নের নামে পুকুর ভরাট করা হলে সেটি কোনো টেকসই উন্নয়ন হবে না। কারণ, জলাশয় ধ্বংস করা হলে পানির স্তর প্রতিনিয়ত নেমে যেতে থাকে। এক সময় এমন হবে যে, আমরা আর ভূগর্ভস্থ পানি কোনো ভাবে উত্তোলন করতে পারবো না। এটি আমাদের জন্য হবে সবচেয়ে দুর্যোগের সময়। ফলে জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও পরিবেশ রক্ষায় পুকুর-জলাশয় ভরাট রোধে আমাদের সবার এগিয়ে আসতে হবে।
কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনটির রাজশাহী অঞ্চলের সমন্বয়ক তন্ময় কুমার সান্যাল বলেন, আজকে ৩৫ জন স্বাক্ষর করেছে। আমরা ৫ হাজারের বেশি স্বাক্ষর সংগ্রহ করে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পুকুর ভরাট বন্ধের জন্য স্মারকলিপি প্রদান করবো। এছাড়া পুকুর সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সবার সামনে তুলে ধরার জন্য কিছু আলোচনামূলক ক্যাম্পেইন করবো।
কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক তৈয়বুর রহমান, নারী উদ্যোক্তা ও উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সেলিনা বেগম, পবা উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সুফিয়া প্রমুখ।
ইউকে/এসএম