বিশেষ প্রতিবেদক: রাজশাহীজুড়ে চরম উদ্বেগ বাড়াচ্ছে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। ভারতের নতুন এ ভ্যারিয়েন্ট সীমান্ত জেলা রাজশাহীতে ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে চলছে সর্বাত্মক ‘লকডাউন’। সাত দিনের এ ‘লকডাউন’র তৃতীয় দিন চলছে রোববার (১৩ জুন)। কিন্তু অন্যদিনের তুলনায় আজ রাজপথে মানুষের চলাচল লক্ষ্য করা গেছে। তবে ‘লকডাউন’ কার্যকরে আজও কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ‘লকডাউন’ পরিস্থিতি তদারকিতে মাঠে নামেন খোদ রাজশাহী জেলা প্রশাসক।
দাফতরিক নানা কাজে দিনভর ব্যস্ত থাকলেও রোববার বিকেলের পরপরই ‘লকডাউন’ তদারকিতে মাঠে নেমে পড়েন রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. আবদুল জলিল। এ সময় রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু আসলামসহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে তিনি মহানগরের সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টসহ মহানগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকার ঘুরে দেখেন।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক রাজশাহীর সর্বাত্মক ‘লকডাউন’ পরিস্থিতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। আর এ ‘লকডাউন’র কারণে কারও খাবারের সংকট হলে তার দফতরে জানানোর অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, কারও খাদ্য সংকট দেখা দিলে সরাসরি জেলা প্রশাসনকে জানান। আপনাদের ঘরে খাদ্য পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। সরকার সব সময়ই জনসাধরণের পাশে ছিল। ভবিষ্যতেও থাকবে। এখন চরম সংকটের মধ্যে দিয়ে সবাইকে যেতে হচ্ছে। মানুষের জীবন ও জীবিকা দু’টোই সংকটের মধ্যে পড়েছে। এরপরও অনেকটা বাধ্য হয়েই সংক্রমণ রোধে সর্বাত্মাক ‘লকডাউন’ দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক বলেন, করোনার সংক্রমণ রোধে জেলা প্রশাসন সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরপরও এক শ্রেণির অতি উৎসাহী মানুষ ‘লকডাউন’ দেখতে শহরে বের হচ্ছেন। ঘরের বাইরে বের হয়ে তারা ‘লকডাউন’ কেমন হচ্ছে তা দেখছেন। তরুণরা বাইরে এসে পাড়া-মহল্লার গলিতে আড্ডা দিচ্ছে। এটা অ্যালার্মিং। কিন্তু এটা কোনোভাবেই উচিত নয়। আমি আজও মহানগর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেছি। আজ থেকে শহর এলাকায় আরও ফোর্স বাড়ানো হয়েছে। তবুও সবার উদ্দেশে বলবো- আপনারা সবাই ঘরে থাকুন। নিরাপদে থাকুন। শক্তি প্রয়োগ করতে আমাদের বাধ্য করবেন না। আমরা অনুরোধ করছি- আপনারা সহযোগিতা করুন।
এদিকে সংক্রমণ ঠেকাতে করোনার নয়া হটস্পট রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলছে বিশেষ ‘লকডাউন’। এতদিন আম বাণিজ্যের কথা মাথায় রেখে সেই পথে হাঁটেনি জেলা প্রশাসন। বিকল্প হিসেবে সন্ধ্যার পর জনসাধারণকে ঘরে রাখতে ৩ জুন আরোপ করা হয়েছিল বিশেষ কড়াকড়ি।
কিন্তু করোনা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যেতে শুরু হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার (১০ জুন) রাতে রাজশাহী সার্কিট হাউজে এক বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলায় করোনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ও মৃত্যু হার বিশ্লেষণ করা হয়। পরে সভা শেষে বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. হুমায়ুন কবীর সাংবাদিকদের সর্বাত্মক ‘লকডাউন’ কার্যকরের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, রাজশাহীতে ফের সংক্রমণের হার বেড়েছে। তাই পাশের ভারত সীমান্ত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের পর এবার রাজশাহী জেলায়ও বিশেষ ‘লকডাউন’ জারি করা হলো। করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণ বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পরে জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল জলিল এ বিশেষ ‘লকডাউন’র ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, রাজশাহীতে প্রথমে সন্ধ্যা ৭টা থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। তারপর গত ২ জুন আরও দুই ঘণ্টা এগিয়ে বিকেল ৫টা থেকেই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এ ক’দিন আমরা পর্যবেক্ষণ করছিলাম। কোথাও করোনার নিম্নমুখী সংক্রমণ, কোথাও ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণই বেশি। তাই শুক্রবার বিকেল ৫টা থেকে ১৭ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত রাজশাহীতে বিশেষ ‘লকডাউন’ থাকবে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল জলিল জানান, ‘লকডাউন’র সময় সবধরনের ব্যবসায়িক দোকানপাট ও যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁসহ আশপাশের অন্য কোনো আন্তঃজেলা থেকে যানবাহন প্রবেশ করতে পারবে না। রাজশাহী থেকেও কোনো যানবাহন বাইরের জেলায়ও যেতে পারবে না। এছাড়া রাজশাহী থেকে ঢাকাসহ সব দূর পাল্লার রুটের বাস ও অন্যান্য যানবাহন এবং যাত্রীবাহী সব আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে।
তবে রাজশাহীর আম পরিবহনকারী ‘ম্যাংগো স্পেশাল’ এবং পণ্যবাহী ট্রেন আগের মতোই চলবে। এছাড়া রোগী, খাদ্য, জরুরি ওষুধ ও পণ্যবাহী পরিবহনসহ অন্য জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং ওষুধ সরবরাহকারী পরিবহন ইত্যাদির ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।
রাজশাহীতে আমের মৌসুম চলছে। তাই আমের বাজারগুলো এখন বড় পরিসরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাজার পরিচালনা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ইউকে/এসই/এসএম