বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: যে যত বেশি ডায়মন্ড উপহার পেতেন, লাইভে তিনি তত অশ্লীলতা করতেন দেশের যুব সমাজ এবং বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের টার্গেট করে লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিং অ্যাপ ‘লাইকি’ ও ‘বিগো লাইভ’র মাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও দেখিয়ে প্রলুব্ধ করছে প্রতারক চক্র। এই চক্রের সঙ্গে বিদেশি নাগরিকরা আঁতাত করে প্রবাসীদের টার্গেট করে বৈদেশিক রেমিট্যান্স ও দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছে।
এসব অ্যাপ দিয়ে ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের জন্য ডায়মন্ডের দরকার। বাংলাদেশি লক্ষাধিক এসব অ্যাপ ব্যবহারকারী ও প্রবাসী বাংলাদেশি অনলাইন ব্যাংকিং, হুন্ডি, ভার্চুয়াল মুদ্রা ও ব্যাংকের মাধ্যমে ডায়মন্ড কিনছে। বাংলাদেশি এজেন্সিগুলো ডায়মন্ড কিনে আনে বিদেশি অ্যাডমিনদের কাছ থেকে। বিভিন্ন অবৈধ মাধ্যম ব্যবহার করে বিদেশে অর্থপাচার করছে এসব এজেন্সি। রোববার (১৩ জুন) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে এসব তথ্য জানান সিআইডি সাইবার পুলিশের ডিআইজি জামিল আহমেদ।
তিনি বলেন, এ অভিযোগে এক বিদেশি নাগরিকসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতাররা হলেন- মোস্তাফা সাইফ রেজা (২৬), মো. আরিফ হোসেন (২৭), এস এম নাজমুল হক (২৭), আসমা উল হুসনা সেজুতী (২৮) এবং অজ্ঞাত একজন বিদেশি নাগরিক।
জামিল আহমেদ জানান, বিগো লাইভ ও লাইকিতে সাধারণত দেশের উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভিডিও স্ট্রিমিং করেন। বিগো লাইভে অ্যাপে দুই ধরনের আইডি রয়েছে। একটি ব্রডকাস্টার আইডি, অন্যটি সাপোর্টার আইডি বা সেন্ডার আইডি। ব্রডকাস্টার আইডি ব্যবহার করে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীরা ভিডিও লাইভ স্ট্রিম করেন। এই ভিডিও লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে কথিত বিনোদনের আড়ালে বিভিন্ন ধরনের অশ্লীলতা ছড়িয়ে দেয়া হতো।
এছাড়া সাপোর্টার আইডি বা সেন্ডার আইডির মাধ্যমে যারা ভিডিও স্ট্রিমিং করতো, বিনিময়ে তাদের ডিজিটাল কয়েনসদৃশ ডায়মন্ড গিফট করা হতো। পরে এ ডায়মন্ড টাকায় রূপান্তরের মাধ্যম অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতো। তাদের টার্গেট মূলত দেশের যুব সমাজ এবং বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। লাইভ স্ট্রিমিংয়ে তাদের সঙ্গে আড্ডা দেয়ার প্রলোভনে অ্যাপে প্রবেশ করেন সাধারণ ব্যবহারকারীরা। তার জন্য ব্যবহারকারীদের ‘ডায়মন্ড’ নামে একটি ভার্চুয়াল মুদ্রা কিনতে হয়। সাধারণত বাংলাদেশে ব্যবহৃত মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসসহ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে এই ডায়মন্ড কেনা যায়। সেই মুদ্রা উপহার হিসেবে দিয়ে আড্ডায় যুক্ত হতে পারেন ব্যবহারকারীরা। যে যত বেশি ডায়মন্ড উপহার পেতেন, লাইভে তিনি তত বেশি অশ্লীলতা করতেন।
সাইবার পুলিশের ডিআইজি বলেন, সাধারণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে ডায়মন্ড পৌঁছে দেয়ার জন্য বিভিন্ন নামে বিভিন্ন এজেন্সি রয়েছে। এরকম একাধিক এজেন্ট রয়েছে বাংলাদেশে। এসব এজেন্সির প্রত্যেকের একাধিক পেমেন্ট গেটওয়ে রয়েছে। সাধারণত ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব এজেন্সির বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। সাধারণ ব্যবহারকারীরা এজেন্সির পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণে অর্থ দিয়ে ডায়মন্ড কেনেন।
জামিল আহমেদ বলেন, গ্রেফতার বিদেশি নাগরিক বিগো লাইভ ও লাইকির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। বাংলাদেশি নাগরিক মোস্তফা সাইফ রেজা বিগো লসিগের বাংলাদেশি অ্যাডমিন। আরিফ হোসেন বাংলাদেশে বিভিন্ন মেয়েদের মাসিক বেতনে চাকরি দিয়ে বিগো লাইভের সঙ্গে যুক্ত করতেন। নাজমুল হক ভার্চুয়াল মুদ্রা-ডায়মন্ড বিক্রির অন্যতম প্রধান বাংলাদেশি এজেন্ট এবং আসমা উল হুসনা সেজুতী বিগো লাইভের প্রধান অ্যাডমিন। অ্যাডমিনরা মাসিক এক লাখ টাকা বেতন পেতেন।
ইউকে/এসএম