নিজস্ব প্রতিবেদক: ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ভোরেই রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার রানীবাজারের নিজ বাড়ি থেকে দেওয়ান সিদ্দিককে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানি সৈন্যরা। পরে তাঁকে রাজশাহী ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে হত্যা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিনেই স্বামীকে হারিয়ে ৫১ বছর ধরে স্বামীর ‘শহীদ মুক্তিযোদ্ধা’র স্বীকৃতি চেয়েছেন স্ত্রী বেগম হামিদা বানু। কিন্তু কোথাও কোনো কাজ না হওয়ায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন হামিদা বানু। মৃত্যুর আগেই তিনি স্বামীর মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দেখে যেতে চান।
সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেও ফল না পেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন হামিদা বেগম। শুনানি শেষে রুল জারি করা হয়। পরে ওই রুল যথাযথ ঘোষণা করে ২০১৯ সালের ৯ মে রায় দেন উচ্চ আদালত। রায়ে দেওয়ান সিদ্দিক হোসাইনকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ঘোষণা করে তাঁর পরিবারকে আইন অনুযায়ী সব সুযোগ-সুবিধা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। আর তা দিতে বলা হয় রায় পাওয়ার এক মাসের মধ্যেই।
এদিকে হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ১১ মার্চ আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট। তবে ওই আপিল এখনো শুনানি হয়নি। হাইকোর্টে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আমীর-উল ইসলাম। যিনি সংবিধান প্রণেতাদের মধ্যে অন্যতম। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর।
বুধবার সুপ্রিম কোর্টে আসেন ৮২ বছরের বৃদ্ধ হামিদা বানু। বয়সের ভারে ঠিকমতো কথা বলতে পারছিলেন না তিনি। তবে বেচেঁ থাকতে স্বামীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেখে যেতে চান বলে জানান যুদ্ধে স্বামী হারানো ওই বৃদ্ধা।
ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামের বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট অকল্যাণ করছে এই মহিলার প্রতি। তারা কীভাবে পারে এটা করতে?’
ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বলেন, ‘হাইকোর্টের রায় এখনো স্থগিত হয়নি। অথচ এখনো মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা না করা আদালত অবমাননার শামিল। বাংলাদেশের যাঁরা মুক্তিযোদ্ধা, তাঁদের পরিবারের আজ এই অবস্থা।’
তানিয়া আমীর আরও বলেন, ‘দেওয়ান সিদ্দিক পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে সাড়া দেন। অফিস ছেড়ে দিয়ে বাঙালিদের প্রশিক্ষণ দেন। আর সেটাই ছিল তাঁর অপরাধ।’
ইউকে/আরএস