নিজস্ব প্রতিবেদক: ঈদের টানা ছয় দিনের ছুটি শেষে বৃহস্পতিবার (৫ মে) সকাল থেকে অফিস-আদালত খুলছে। তাই ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগ দিতে ট্রেনের ফিরতি টিকিট বিক্রিও শুরু হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে আজ আগামী ৭ ও ৮ মে’র টিকিট বিক্রি করছে। এছাড়া যে স্টেশন থেকে যাত্রা, সেই স্টেশন থেকেই দেওয়া হচ্ছে ফিরতি টিকিট।
পাশাপাশি অনলাইনেও মিলছে ফিরতি টিকিট। তবে ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগ দিতে ফিরতি ট্রেনের অগ্রিম টিকিট পেতেও যাত্রীদের সমান ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ বুধবার (৪ মে) সকাল ৮টা থেকেই টিকিট বিক্রি শুরু হয়। তবে এর লাইন পড়ে যায় ঈদের দিন মঙ্গলবার (৩ মে) রাত থেকেই!
যাত্রীদের অভিযোগ, সকাল ৮টার পর টিকিট ছাড়া হয়। কিন্তু অনলাইনে নির্দিষ্ট সময়ে ঢুকেও ফিরতি টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক সময় সার্ভার হ্যাং করছে, অনেক ক্ষেত্রে সাইটে ঢোকা যাচ্ছে না আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে টিকিটের পেমেন্ট করলেও টিকিট মিলছে না! ফলে ফিরতি টিকিট নিয়েও দেখা দিয়েছে একই দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনা। ঈদের আগে টিকিট পেতে যে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে, ঈদের পরও একই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে! সহজের টিকিট পাওয়া এখানেও কঠিন হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় অবিলম্বে টিকিট সরবরাহের দায়িত্বে থাকা সহজের চুক্তি বাতিলের দাবি করছেন ভুক্তভোগীরা। তবে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে বলছে, ট্রেনের ৫০ শতাংশ টিকিট কাউন্টারে ও বাকি ৫০ শতাংশ টিকিট অনলাইনে স্বাভাবিক নিয়মে কোন হয়রানি ছাড়াই বিক্রি হচ্ছে। স্ব-স্ব স্টেশন থেকে ফিরতি যাত্রার জন্য টিকিট দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, প্রায় সব যাত্রীই অনলাইনে টিকিটের জন্য ঢুঁ মারছেন। ফলে কেউ পাচ্ছেন আবার কেউ পাচ্ছে না। এত মানুষ একসঙ্গে সার্ভাবে ঢোকায় সাইট হ্যাং করছে।
রাজশাহী রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারে ঢাকায় ফিরতি ২ দিনের টিকিট দেওয়া হচ্ছে একদিনে। এতে টিকিটপ্রত্যাশীদের চাপ বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত টিকিট হাতে পাননি বেশিরভাগ যাত্রীই।
বিক্রি শুরুর মাত্র তিন ঘণ্টাতেই কাউন্টারে টিকিট শেষ হয়ে যায়। এতে লাইনে দাঁড়ানো যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আর অনলাইনে ট্রেনের টিকিটের চাহিদা থাকলেও তা যেনো সোনার হরিণ। টিকিট বিক্রি শুরু পরপরই সব শেষ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
রাজশাহী রেলস্টেশনের কাউন্টার থেকে সকাল ৮টা থেকে টিকিট দেওয়া শুরু হয়। যা চলে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। আজ দেওয়া হয়েছে আগামী ৭ ও ৮ মে এর ট্রেনের টিকিট। দুই দিনের টিকিট একদিনে দেওয়ার ফলে সকালে স্টেশনে টিকিটপ্রত্যাশীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়।
এদিকে সকালে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী যাত্রীরা অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কিনতে চেষ্টা করেও সুফল পাননি। রাজশাহী থেকে ৮ মে রোববার বনলতা ট্রেনে ঢাকা যেতে চান বেসরকারি কলেজ শিক্ষক জাবিদ হোসেন। তিনি জানান, ঠিক ৮টা থেকেই চেষ্টা শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি সার্ভারে ঢুকতে পারলেও টিকিট কাটতে পারেননি। ৩০ মিনিটের মধ্যেই সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়।
রাজশাহী রেলস্টেশনে মঙ্গলবার মধ্য রাত থেকে লাইনে দাঁড়ানো শহিদুল আলম অভিযোগ করে বলেন, সহজের টিকিট বিক্রি প্রক্রিয়া সিন্ডিকেটের কব্জায় চলে গেছে। কাউন্টার বা অনলাইন সবখানেই কেবল দুর্ভোগ ও হয়রানি। টাকা কেটে নিচ্ছে টিকিট দিচ্ছে না! টিকিট ছাড়ার পরপরই সব শেষ, কাউন্টারে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট মিলছে না। অথচ দালালের কাছে বেশি দামে মিলছে।
তিনি আরও বলেন, সহজভাবে টিকিট করতে অনলাইন সেবা চালু করা হলেও এখন সেটি গলার কাঁটা। বাধ্য হয়ে তিনি দালালের কাছ থেকে বেশি দামে টিকিট কাটতে দ্বারস্থ হন।
এদিকে রাজশাহী থেকে ঈদের ফিরতি টিকিট ও যাত্রীদের চাপ বেশি। আর চাপ বেশি থাকায় ট্রেনের সব সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হয়েছে। শুক্রবার বন্ধ থাকে বিরতিহীন বনলতা ট্রেন। সেটিও চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া সিল্কসিটি, পদ্মা, ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনগুলো এক সপ্তাহ বন্ধ ছাড়াই নিয়মিত ঢাকা- রাজশাহী রুটে চলাচল করবে বলেও জানিয়েছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার জানান, পূর্বাঞ্চলে ঢাকা বিভাগে গত ৩ মে ঈদের দিন ট্রেন চলাচলসহ অন্যান্য কার্যক্রম চালু থাকলেও পশ্চিমাঞ্চলে তা বন্ধ ছিল। ফলে ফিরতি ৭ ও ৮ তারিখের টিকিট এক দিনেই অর্থাৎ ৪ মে দেওয়া হয়েছে। রাজশাহী স্টেশন থেকে মোট ৪টি ঢাকাগামী ট্রেনের টিকিট রয়েছে। নন এসি ১ হাজার ৬০০ এবং এসি ৫৮৫টি।
যেগুলোর বেশিরভাই সকাল ৮টায় কাউন্টার খোলার প্রথম তিন ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। এতে টিকিটপ্রত্যাশীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। অনেক লাইনে টিকিটের জন্য হাতাহাতিও হয়। তবে সর্বমোট আসনের বিপরীতে কতগুরো টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়েছে তা জানাতে পারেননি।
ইউকে/আরএস