আপনার ত্বকে কেমিক্যালের প্রভাব?

লাইফস্টাইল বিভাগ: ত্বকের পরিচর্যার জন্য উপকারী উপাদান মনে করে যেসব প্রসাধনী ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর মধ্যে এমন অনেক সামগ্রী থাকতে পারে, যা ব্যবহারের কারণে উপকারের বদলে দেখা দেয় ত্বকের নানা ধরনের সমস্যা। লিখেছেন সৌরীন রহমান

সৌন্দর্যের প্রতি আমাদের আকর্ষণ জন্মগত। তাই হরহামেশাই নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলতে ব্যস্ত সবাই। এর একটি বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে ত্বকের সৌন্দর্যচর্চা। ত্বকের পরিচর্যার জন্য উপকারী উপাদান মনে করে যেসব প্রসাধনী ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর মধ্যে এমন অনেক সামগ্রী থাকতে পারে, যা ব্যবহারের কারণে উপকারের বদলে দেখা দেয় ত্বকের নানা ধরনের সমস্যা। এমনকি কেমিক্যালের প্রভাবে ত্বকের মারাত্মক ক্ষতিও হতে পারে।

শরীরের ত্বকের মধ্যে মুখের ত্বক বেশি সংবেদনশীল। বিশেষজ্ঞদের মতে, মুখ পরিষ্কার ও মুখ থেকে বাড়তি তেল দূর করার জন্য কোনো বিশেষ সামগ্রী দিয়ে মুখ ধোয়া প্রয়োজন। কারণ, সাবান দিয়ে মুখ ধোয়ার কারণে মুখের বাড়তি তেলের সঙ্গে ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় তেলও দূর হয়ে যায়। ফলে ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে ওঠে, যা ত্বকের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই মুখ ধোয়ার জন্য সাবান পরিহার করাই শ্রেয়।

অনেকেই বডি লোশন ও বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যালযুক্ত ক্রিম মুখে ব্যবহার করে থাকেন। এটি ত্বকের জন্য অনুপযুক্ত। কারণ, এসব ক্রিম খুব ঘন ও ভারী হয়ে থাকে, যা মুখের ত্বকে ব্রণ ও ইনফেকশনের জন্ম দেয়। তা ছাড়া ত্বক শুষ্ক হওয়ার কারণে মুখের স্বাভাবিক লাবণ্য হারিয়ে যায়।

মুখ পরিষ্কার ও মুখ থেকে বাড়তি তেল দূর করার জন্য কোনো বিশেষ সামগ্রী দিয়ে মুখ ধোয়া প্রয়োজন
মুখ পরিষ্কার ও মুখ থেকে বাড়তি তেল দূর করার জন্য কোনো বিশেষ সামগ্রী দিয়ে মুখ ধোয়া প্রয়োজন
ত্বকের ক্ষতিকর উপকরণগুলোর মধ্যে কেমিক্যালযুক্ত ও মেয়াদোত্তীর্ণ সানস্ক্রিন অন্যতম। প্রচণ্ড রোদে সানস্ক্রিন ত্বককে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে, এ কথা সত্য। কিন্তু এ সানস্ক্রিন অবশ্যই আবহাওয়া উপযোগী এবং মেয়াদ থাকাকালেই ব্যবহার করতে হবে।

অনেকের ধারণা, ফেয়ারনেস ক্রিমের ব্যবহার ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়, যা একেবারেই ভুল। কারণ, বেশির ভাগ রং ফরসাকারী ক্রিমেই ত্বক পাতলা হয়ে যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীকালে দেখা যায়, এসব ব্যবহারের কারণে অনেকে রোদে বের হতে পারছেন না বা অন্য কিছু ব্যবহার করতে পারছেন না। এ ছাড়া অনেকে ত্বক ফরসা বা উজ্জ্বল করতে গিয়ে উল্টো মুখের ত্বকে দাগ তৈরি হওয়া কিংবা চুলকানি বা লালচে হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।

আবার হুট করে বা অন্যদের দেখে কোনো প্রসাধনী ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ, একেকজনের ত্বকের ধরন একেক রকম হয়ে থাকে। তাই একজনের ত্বকের জন্য কোনো প্রসাধনসামগ্রী ঠিক হলেও তা আরেকজনের জন্য ভালো না–ও হতে পারে।

একজনের ত্বকের জন্য কোনো প্রসাধনসামগ্রী ঠিক হলেও তা আরেকজনের জন্য ভালো না–ও হতে পারে
একজনের ত্বকের জন্য কোনো প্রসাধনসামগ্রী ঠিক হলেও তা আরেকজনের জন্য ভালো না–ও হতে পারে
ত্বকের ময়লা দূর করতে স্ক্র্যাবিং একটি উপকারী সমাধান। তবে রোজ স্ক্র্যাবিং করলে এটি ত্বকের পাতলা স্তরে ক্ষতের সৃষ্টি করে। এতে ত্বক শুষ্ক ও বিমর্ষ দেখায়। তাই এর উপকরণ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নিয়ে ব্যবহারবিধি অনুযায়ী তা ত্বকে প্রয়োগ করতে হবে। এসব সামগ্রী সচেতনতার সঙ্গে ব্যবহার করলে ত্বককে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা যায়।

ইদানীং বিয়ে কিংবা অন্যান্য অনুষ্ঠানে খুব জাঁকজমকপূর্ণ সাজপোশাক বেশ লক্ষণীয়। এ সময় অনেকক্ষণ ধরে পরে থাকা এসব ভারী মেকওভার ত্বকের জন্য মোটেই ভালো নয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সাজগোজের জন্য ব্যবহৃত এই পণ্যসামগ্রী ত্বকের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর হয়ে থাকে। এটি কখনো কখনো ত্বকের নানা রোগের সঙ্গে সঙ্গে ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগেরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই এসব প্রসাধনসামগ্রী যতটা সম্ভব পরিহার করে চলতে হবে।

ডিম, দুধ, দই, শসা, মধু ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখতে সহায়তা করে। জেনে রাখা ভালো, ত্বকচর্চার ক্ষেত্রে এক্সট্রা ভার্জিন জলপাই তেল বেশ উপকারী। এ ছাড়া নারকেল তেল বা আমন্ড তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। পাশাপাশি ডিম, দুধ, দই, শসা, মধু ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখতে সহায়তা করে। তাই এসব উপাদান সঠিক উপায়ে ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বককে ক্ষতিকর কেমিক্যালের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা সম্ভব।

ইউকে/এসএস