আমের দেশে চাষ হচ্ছে সৌদি খেজুর

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংবাদদাতা: আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার বাণিজ্যিকভাবে সৌদি আরবের সুস্বাদু খেজুরের আবাদ শুরু হয়েছে। আমে কয়েক বছর লোকসানের কারণে কৃষকরা বিকল্প কৃষি হিসেবে সৌদির খেজুর চাষের দিকে ঝুঁকছেন। আর স্থানীয় কৃষি বিভাগও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে দিন দিন বাড়ছে চাষের পরিধিও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার দাইপুখুরিয়া ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে সৌদি আরবের খেজুর চাষ শুরু করেছেন কৃষক মোশারফ হোসেন। মাত্র চার বছরেই গড়ে তুলেছেন খেজুরের বিশাল বাগান, আর বাগান থেকে আয় করে নিজে হয়েছেন স্বাবলম্বী, সৃষ্টি করেছেন প্রচুর কর্মসংস্থানেরও।

এক সময় অভাব-অনটন নিয়ে দিশেহারা হলেও এখন অনেক নামিদামি কৃষকরাও ছুটছেন মোশারফেরর বাগানে। বর্তমানে তার বাগানে থোকায় থোকায় দুলছে কাঁচা-পাকা নানা জাতের সৌদির খেজুর।

মোশারফ হোসেন বলেন, প্রথমে ইউটিউব দেখে এবং মধ্যপ্রাচ্যে থাকা বন্ধুদের কাছ থেকে সৌদি আরবের খেজুরের চাষ সম্পর্কে ধারণা নিই। এরপর ২০১৯ সালে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করি। প্রথমে দুই বিঘা জমিতে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েক জাতের ১৩০০ খেজুর গাছ রোপণ করি। এখন আমার বাগানে জমির পরিমাণ ১০ বিঘা আর গাছের সংখ্যা পাঁচ হাজার। গত বছর অল্প কয়েকটা গাছে খেজুর এসেছিল এবং এবার প্রায় ৫০টি গাছে খেজুর এসেছে। আমি সিলেটসহ সারা দেশে অনেক চারা বিক্রি করে সফলতার মুখ দেখেছি, যোগ করেন মোশারফ।

তিনি আরও বলেন, এ বাগানে রয়েছে মরিয়ম, আজওয়া, সুকারি, আমবার, বাররি, চেগি, নেপতা, মেডজুলসহ ১০ জাতের খেজুর গাছ। বাগানে ছোট বড় মিলিয়ে পাঁচ হাজার গাছের সঙ্গে আরও পাঁচ হাজার কলমের চারা করেছি। চারা বিক্রি করেই অনেক টাকা আয় হচ্ছে।

কানসাটের রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি ওমানে থাকাকালে অনেক বাগান দেখেছেন এবং সেখানকার খেজুর খেয়েছেন। কিন্তু দেশে এসে সৌদি আরবের খেজুর আমাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জে পাওয়া যাবে, জানতে পেরেই ছুটে এসেছেন। খেজুরের বাগান দেখে তিনি অনেক আনন্দিত। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কিছু চারা লাগিয়ে নিজেও খেজুর বাগান গড়ে তুলবেন।

বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় খেজুরের চারাগুলোর প্রতিটি তিনি তিন হাজার থেকে তিন হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি করছেন। অবশ্য একদম ছোট ও নিম্নমানের চারা ৫০০ টাকা করেও বিক্রি করেন তিনি। দেশের বিভিন্ন এলাকায় তার চারা বিক্রি হলেও সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় সিলেটে।

এ বছর বাগানের সবগুলো গাছে ফলন না হলেও প্রায় ৫০টি গাছে ফল ধরেছে বলে জানান মোশারফ। এবার সর্বোচ্চ ২৫ মণ খেজুর ধরলেও চারা তৈরির জন্য এবং গাছের পরিচর্যার জন্য তিনি ছয় মণ খেজুর রেখে বাকিটা অপরিপক্ক অবস্থাতেই নষ্ট করে ফেলেন। তার বাগানের বেশিরভাগ খেজুর ঢাকা, রাজশাহী ও নিজ জেলায় এবং কিছু অনলাইনের মাধ্যমে জাত ভেদে দুই হাজার ১০০ টাকা থেকে দুই হাজার ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন।

তিনি জানান, প্রথম ও দ্বিতীয় বছর পরিশ্রম ও পরিচর্যা বাবদ প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ হলেও দ্বিতীয় বছর চারা বাবদ আয় হয়েছে দুই লাখ টাকা। প্রথম বছর কোনো ফলন হয়নি, তবে দ্বিতীয় বছর কিছু ফলন হয়। এ বছর প্রায় ছয় মণ খেজুর তিনি বিক্রি করতে পেরেছেন। এ বছর ফলন ভালো হলেও এখনও তিনি লাভের মুখ দেখতে পারেননি। তবে আগামী বছর সবগুলো গাছে ফলন হলে তিন বছরের ক্ষতি পুষিয়ে লাভের মুখ দেখবেন বলে আশা করছেন।

তার বাগানে একজন পাহারাদারসহ তিনজন শ্রমিক এবং তার পরিবারের সদস্যরা বাগানটি পরিচর্যা করে থাকেন। তবে উৎপাদন বাড়লে আরও লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

শামিমা জাহান সারা নামে এক দর্শনার্থী ও উদ্যোক্তা জানান, তিনি ২০০১ সাল থেকে পেয়ারা, আম ও ড্রাগন ফলের চাষ করে আসছেন। তাই নতুন প্রকল্প হিসেবে এখান থেকে নানা জাতের খেজুরের চারা নিতে এসেছেন।

এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, দাইপুখুরিয়ার খেজুর এখন সারা দেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। আমরা এ বাগানগুলো পর্যবেক্ষণ ও তদারকি করছি। যেহেতু জেলার বরেন্দ্র অঞ্চলের আবহাওয়া অনেকটা মধ্যপ্রাচ্যের মতো। তাই আমাদের আশা, এ অঞ্চলে খেজুর চাষ সম্ভব। সৌদি আরবের খেজুর চাষে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে। আমের দাম কম হওয়ার জেলায় অনেক মানুষ এখন খেজুর চাষে ঝুঁকছেন।

মোশারফ হোসেন ছাড়াও সদর উপজেলায় আতাহার নামে এক ব্যক্তি দুই বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেছেন সৌদি আরবের খেজুর। পাশাপাশি চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারে পরীক্ষামূলকভাবে সৌদি আরবের খেজুরের চারা রোপণ করে এ এলাকায় খেজুর চাষের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে।

ইউকে/এএস