রাবি অধ্যাপক তাহের হত্যা: মুখ্য ভূমিকায় ড. মহিউদ্দিন

বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় ২ আসামির মৃত্যুদন্ডাদেশ এবং ২ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৬৮ পৃষ্ঠার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়।

এর আগে গত ৫ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ৬ বিচারপতির বেঞ্চ ওই রায় দেন। রায়ে খালাস চেয়ে আসামিদের আপিল এবং যাবজ্জীবন দন্ডিত দুই আসামির দন্ড বৃদ্ধি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করা হয়। ফাঁসির দন্ডাদেশ বহাল রাখা দুই আসামি হলেন—একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম।

যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ পাওয়া দুজন হলেন—মো. জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের সমন্ধি আব্দুস সালাম। ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাবির কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় পদোন্নতি সংক্রান্ত বিষয়ের জের ধরে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ। ৩ ফেব্রুয়ারি নিহত অধ্যাপক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এ মামলায় ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছিল পুলিশ। এই হত্যা মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত ৪ জনকে ফাঁসির আদেশ ও ২ জনকে খালাস দেন। দন্ডিতরা হলেন-একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, নিহত অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম, জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের সমন্ধি আব্দুস সালাম।

খালাসপ্রাপ্ত চার্জশিটভুক্ত ২ আসামি হলেন—রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী। ২০০৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদন্ড নিশ্চিতকরণ) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আপিল করেন।

শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির ফাঁসির দন্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুই আসামির দন্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ দেন হাইকোর্ট।

ফাঁসির দন্ডাদেশ বহাল রাখা দুই আসামি হলেন—একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম।
ফাঁসির দন্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ পাওয়া দুই আসামি হলেন—মো. জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের সমন্ধি আব্দুস সালাম।

এরপর আসামিরা আপিল বিভাগে আপিল করেন। পাশাপাশি যাবজ্জীবন দন্ডিত দুই আসামির দ- বৃদ্ধি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায় বহাল রাখেন।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ‘আসামিদের স্বীকারোক্তিগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, হত্যার এই ষড়যন্ত্রে মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনই মুখ্য এবং সক্রিয় ভূমিকা পালন করছিলেন। আমাদের এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন শুধু প্রফেসর হিসেবে পদোন্নতি পেতেই ড. তাহেরকে এই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেন। তার ধারণা ছিল, ড. তাহের বেঁচে থাকলে অধ্যাপক হিসেবে তার পদোন্নতি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

আমাদের এও বলতে দ্বিধা নেই যে, আপিলকারী জাহাঙ্গীর আলম এবং আবেদনকারী আব্দুস সালাম ও নাজমুল আর্থিক সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার জন্য অধ্যাপক তাহের আহমেদকে হত্যার জন্য ড. মহিউদ্দিনের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন। ’

ইউকে/এএস