প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন, তাদের ফিরতেই হবে : লিটন

নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। বর্তমানে মিয়ানমারের ভেতরে যে ঘটনাগুলো ঘটছে। এটি তাদের বিষয় হলেও আমাদের কথা বলতে হচ্ছে, তার কারণ সেটি আমাদেরকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আমরা জানি, মায়ানমার থেকে ১২ লাখ মানুষ বাংলাদেশে এসেছে, সেটি সংখ্যায় প্রতিনিয়তই বাড়ছে। তারা বিয়ে করছে, তাদের সন্তান হচ্ছে। তাদেরকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভাসানচরে চমৎকার পরিবেশে প্রায় ১ লাখ মানুষের থাকবার মতো করে ঘরবাড়ি তৈরি করে দিয়েছেন। তবে তাদের ফিরতেই হবে।

রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম আয়োজিত ‘শেখ হাসিনার বৈশ্বিক ভাবমূর্তি: প্রসঙ্গ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খায়রুজ্জামান লিটন এ কথা বলেন তিনি।

মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, উন্নত বিশ্ব বিশেষ করে ইতালি, গ্রিস অথবা ফ্রান্স-এসব দেশে যখন ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে নানা দেশের মানুষ বিভিন্নভাবে চোরাই পথে প্রবেশ করতে যায়, তখন তারা হয় ডুবে মারা যায়, না হলে ধরে পড়ে যায়। ধরা পড়লে তাদের ওপরে অবর্ণনীয় যন্ত্রনা-কষ্ট নেমে আসে। তাদের মতো উন্নত দেশও কিন্তু পাঁচশ, হাজার বা ১০ হাজার মানুষকে আশ্রয় দিতে চায় না, অস্বীকার করে। অথচ আমাদের দেশে প্রায় ১২ লাখ মানুষ চলে এসেছে, এখন এই সংখ্যা আরও বাড়ছে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে উন্নত বিশ্বের তাদের যে বক্তব্য, যে কর্মকাণ্ড আমরা খুব একটা কার্যকরী হতে দেখছি না। আমরা জানি যে, জাতিসংঘ কিছু তৎপরতা চালিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের যেখানে গেছেন, সেখানেই এই বিষয়টি তুলে ধরেছেন। আর সবাই বলেছেন, আমরা আশ্বাস দিচ্ছি, আমরা চেষ্টা করবো, আমরা বলছি, আমরা চাপ সৃষ্টি করছি। কিন্তু এই পর্যন্ত কাউকে আমরা সেই রকম জায়গায় যেতে দেখিনি!

তবে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাই। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি তাই বলে। আমরা সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শক্রতা নয়। এটি বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিয়ে গিয়েছিলেন। তাই আমরা কারও সাথে যুদ্ধ করতে চাই না। মায়ানমার একটার পর একটা আমাদের উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে। গোলা এসে পড়ছে বাংলাদেশের মাটিতে। একজন মারাই গেলেন, আরেকজনের পা উড়ে গেল। গতকাল লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘এতো উস্কানির মধ্যেও বাংলাদেশ কিন্তু মাথা ঠান্ডা রেখেছে। বাংলাদেশ যুদ্ধ চায় না।’ মায়ানমার কী আমাদের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিতে চায়? তারা কি এমন অবস্থা তৈরি করতে চায়? যাতে আমরা যুদ্ধ করতে বাধ্য হই। না এরমধ্যে আরো কোন পরাশক্তির ইন্ধন রয়েছে? নিশ্চয় এটি ভেবে দেখবার বিষয় আছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে কেন আরো সোচ্চার হচ্ছেন না? শুধু লোক দেখানো একদিন বাংলাদেশ এলেন। বাংলাদেশে এসে কক্সবাজারে গেলেন। সরকার আপনাদের সমস্ত ব্যবস্থা করলো থাকবার, খাবার, নিরাপত্তা, ঘুরবার। আপনারা সাক্ষাৎকার নিলেন, সেখান থেকে ঢাকায় ঘুরে এসে বললেন যে, আমরা দেখে এলাম, আমরা এটি যথাযথ জায়গায় তুলব এবং আমরা আরো চাপ প্রয়োগ করবো। এটা কোন চাপ? যে চাপে কোন কাজ হচ্ছে না। আমার প্রশ্ন থাকলো। আমরা সবাই বলি গোটা পৃথিবী একটা গ্লোবাল ভিলেজ। ওইখানে একটা কিছু হলে এখানে অনুভব করা যায়। কাজেই একটা যদি সমন্বিত প্রচেষ্টা থাকে যে, না এইটা চলতে দেয়া যায় না।  তাহলে মায়ানমারের পক্ষে এটা স্ট্যান্ড করা খুব একটা বেশি সম্ভব নয়। এখানেই ফাঁক আছে। কেউ কেউ আমাদের সামনে হয়তো বলছেন, কিন্তু মন থেকে বলছেন না, সেটা করছেন না। তাই কার্যকর কিছু হচ্ছে না। এক্ষেত্রে আমাদের যারা পরীক্ষিত বন্ধু, যারা এখন পরাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। সে সমস্ত পরীক্ষিত বন্ধুদের মধ্যে যারা বৃহৎ রাষ্ট্র বা ক্ষমতাধর রাষ্ট্র, ইনক্লুডিং আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত সহ তাদেরকে নিয়ে এই বিষয়টি সুরহা করার জন্য একটা কিছু করা দরকার।

তিনি আরো বলেন, মানুষকে আশ্রয় দিতে হয়েছে, এটা ঠিক। কিন্তু আমাদের আয়ের একটা অন্যতম জায়গা কক্সবাজার ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পথে। এতো টিলাগুলো সব ছাপড়া ছাপড়া ঘরবাড়ি হয়ে সাথে বিভিন্ন অবৈধ কাজ শুরু হয়েছে। মায়ানমার থেকে ইয়াবা ট্যাবলেট ঢুকছে, আমাদের যুবসমাজকে নষ্ট করে দিচ্ছে। কাজেই রোহিঙ্গা সমস্যার খুবই দ্রুত সমাধান হওয়া দরকার। তাদের এখান থেকে চলে যাওয়া দরকার, নিজ দেশে, নিজ বাড়িতে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শাহ আজম, নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম, রাবি’র উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস। এদিকে বিকেলে আইবিএস সেমিনার রুমে বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের আয়োজনে কলাম লেখার রীতি-নীতি, কৌশল, লিখন ও অনুশীলন শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে  মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষক ও কলাম লেখক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) হাসান মো. শামসুদ্দীন। তিনি তার প্রবন্ধে বলেন, গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা সংকট পাঁচ বছর পূর্ণ হয়ে ছয় বছরে পড়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন স্টেট থেকে নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হয়ে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা নিরাশ্রয় রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ এখন এক নিরাপদ আবাস। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিপন্ন রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয় দিয়ে তার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য ‘মাদার অব হিউমিনিটি’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। সেই সাথে রোহিঙ্গাদের ন্যায্য দাবি নিয়ে সোচ্চার কণ্ঠে নিজের মতামত ব্যক্ত করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন এবং রেখে যাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন।

ইউকে/এএসআর