ধীরপায়ে শীত নামছে রাজশাহীতে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ষড়ঋতুর বাংলাদেশে কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এই দুই মাস হেমন্তকাল। আর কার্তিক হচ্ছে বাংলা সনের সপ্তম মাস। সবুজ দুর্বাঘাসের ডগায় মুক্ত ঝরা শিশির দিয়ে প্রকৃতি থেকে বিদায় নিতে যাচ্ছে এই মাস। অভিষেক ঘটতে যাচ্ছে অগ্রহায়ণের। অর্থাৎ আবহমান বাংলার নবান্ন উৎসবের মাস। হালকা শীতের আবহে এই মাসেই কৃষকের আঙিনা রঙিন হয়ে ওঠে সোনালি ধানে। আমন ও আউশসহ নতুন সব জাতের ধান কেটে ঘরে তোলা হয় এই সময়ে। ঘরে-ঘরে শুরু হয় পিঠাপুলির উৎসব। আর এবার যেন তাই হতে যাচ্ছে।

অগ্রহায়ণের আগমনী বার্তায় এরই মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে শীত নামছে উত্তরের জনপদে। বহুদিন পর যেন সময় মেনেই প্রকৃতিতে নামছে শীত। রোববার (১৩ নভেম্বর) রাজশাহীতে প্রথম তাপমাত্রার পারদ নেমেছে ১৫ ডিগ্রির ঘরে। সাধারণত দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রিতে নামলেই তা শীত হিসেবে বিবেচিত হয়।

সেই অর্থে এ কথা বলাই যায় যে, বাংলা সনের পঞ্জিকা ঘুরে আবার মিলছে শীতের পদধ্বনি। এবছর কার্তিকের শেষেই শীত নামতে শুরু করেছে। কমতে শুরু করেছে তাপমাত্রাও। রোববার ভোর ৬টায় রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৯টায় ওই একই তাপমাত্রা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে ২/৩ দিনের মধ্যে দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরও একটু কমে আসবে। যদিও মধ্য ডিসেম্বরের আগে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এক অঙ্কে নামার আশঙ্কা নেই।

উত্তরের বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে গতকাল থেকেই মিলছে  শীতের আমেজ। সকাল থেকে সূর্যের মুখ দেখা গেলেও শরীরে মিলেছে হিমেল হাওয়ার অনুভব। ভোরে ও সন্ধ্যায় রাজশাহীতে তার মাত্রা টের পাওয়া গেছে ভালোভাবেই। এবার যেন নিয়মের বৃত্ত ঘুরে ধীরপায়েই নামতে শুরু করেছে শীত। আজই প্রথম শীতের পোশাক উঠেছে অনেক মানুষের শরীরে। এরই মধ্যে ঠাণ্ডায় গুঁটিশুটি হয়ে পড়েছেন- পথের ধারে থাকা ছিন্নমূল মানুষ। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র না থাকায় ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষরা শীত নিয়ে ভাবনায় পড়েছেন এখনই। আর নিম্নবিত্ত মানুষগুলো শীত নিবারণের জন্য কম দামে শীতবস্ত্র কিনতে যেতে শুরু করেছেন ফুটপাতের দোকানগুলোতে।

তবে শুরুতেই শীত মোকাবিলার প্রস্তুতি শুরু করেছে জেলা প্রশাসনও। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ প্রস্তুত হচ্ছে শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর। সরকারি এই দফতরটি জানিয়েছে, শীতার্তদের মাঝে এবার প্রথম ধাপে প্রায় ৬০ হাজার কম্বল বিতরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মো. বিল্লাল হোসেন জানান, গরম শেষে ক্রমেই বাড়ছে ঠাণ্ডা। তাই হাসপাতালে ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে। তবে এখনও শীতের প্রকোপ বেশি না থাকায় তার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য নয়। অন্তর্বিভাগের চেয়ে এখন বহির্বিভাগেই ভিড় বেশি। আবহাওয়াজনিত কারণে আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যা বেশি। আর আক্রান্তদের বেশিরভাগই ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, হৃদরোগ, অ্যাজমা নিয়ে হাসপাতালে আসছেন বলেও জানান এই চিকিৎসক।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, গত কয়েক দিন যাবত তাপমাত্রা কমছে। তবে রাজশাহীতে গতকালই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে নভেম্বরের শুরুতে রাজশাহীতে শীতের আবেশ থাকলেও দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি। কার্তিকের শেষ সপ্তাহেই মূলত তাপমাত্রা নামছে।

জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, সাধারণত দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। সেই হিসেবে শীত নামতে মধ্যে ডিসেম্বর অর্থাৎ পৌষ মাস আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে রাতে তাপমাত্রা যেভাবে কমছে তাতে সোমবার (১৪ নভেম্বর) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরও নিচে নামবে।

এক প্রশ্নের জবাবে এই আবহাওয়া কর্মকর্তা বলেন, মূলত ৯ নভেম্বর থেকে রাজশাহীর সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। ওই দিন রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ১৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর ১০ নভেম্বর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩০ দশমিক ৩ এবং সর্বনিম্ন ১৯ দশমিক ৬, ১১ নভেম্বর ছিল ৩০ দশমিক ৪ এবং ১৮ দশমিক ৩, ১২ নভেম্বর ছিল ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ১৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর গতকাল ১৩ নভেম্বর বেলা ৩টায় রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এছাড়া ভোর ৬টায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্র গতকালই প্রথম এত নিচে নামল। এদিন রাজশাহীতে ভোর ছয়টায় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৯৮ শতাংশ এবং সন্ধ্যা ছয়টায় ৬৫ শতাংশ।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ইনচার্জ) কামাল উদ্দিন বলেন, দিন ও রাতের তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। তবে সেই হাড় কাঁপানো শীত এখনই নামছে না। এরজন্য মধ্য ডিসেম্বর পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে। আগামী ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে রাজশাহীসহ গোটা উত্তরাঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে বলেও জানান- এই আবহাওয়া কর্মকর্তা।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘ মেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ডিসেম্বর মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। তাই এ মাসে রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকবে। এ মাসের শেষার্ধে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ১ থেকে ২টি মৃদু (৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ও মাঝারি (৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চল ও নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে বলেও পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইউকে/এএস