বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: আর মাত্র তিন দিন পরই শুরু হতে যাচ্ছে ফুটবল বিশ্বকাপের ২২তম আসর। আন্তর্জাতিক এই আসরকে ঘিরে উৎসবে মেতে উঠেছে পুরো বিশ্ব, ছোঁয়া লেগেছে বাংলাদেশেও। বিশ্বকাপ এলে ভক্ত-সমর্থকরা চান নতুন টিভিতে প্রিয় দলের খেলা উপভোগ করতে। আর তাই এ সময়ে বাড়ে টেলিভিশন বিক্রি। অন্যবার ফুটবল বিশ্বকাপের আগে টেলিভিশন বিক্রির ধুম লাগলেও, এবার তাতে ভাটা পড়েছে। প্রত্যাশা অনুযায়ী টেলিভিশন বিক্রি হচ্ছে না। সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শো-রুমে গিয়ে দেখা গেছে, ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে নতুন নতুন মডেলের টেলিভিশনের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। পণ্যভেদে দিচ্ছেন ছাড় ও উপহার। তারপরও প্রত্যাশা অনুযায়ী নেই ক্রেতা। দুই-একটি দোকানে বেচাকেনা হলেও বেশিরভাগ দোকানই ফাঁকা। এতে অনেকটাই হতাশ বিক্রেতারা।
বিক্রেতারা বলছেন, অর্থনৈতিক মন্দা, ডলার সংকট, এলসি খুলতে না পারা, দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাস ও দাম বেশি হওয়ায় মানুষ টেলিভিশন কেনায় তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ও ফুটবল বিশ্বকাপ ঘিরে ভালো বেচা-কেনার আশা করলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী বিক্রি নেই।
রাজধানীতে ইলেক্ট্রনিক পণ্যের অন্যতম বড় মার্কেট গুলিস্তানের স্টেডিয়াম মার্কেট। সেখানে কথা হয় প্যানাসনিক ব্র্যান্ডের শো-রুমের ব্যবস্থাপক মো. ইভান সিকদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে তারা তাদের টেলিভিশনে ১০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছেন। তারপরও বিক্রি নেই কোনো। দুই একজন যা আসেন, প্রজেক্টরের জন্য।
সনি র্যাংগসের স্টেডিয়াম শাখার ইনচার্জ সিরাজুস সালেকিন পরাগ বলেন, টেলিভিশনের বিক্রি স্বাভাবিক অবস্থার চেয়েও খারাপ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এবার মানুষ টেলিভিশন কেনার উপর তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে আমরা ‘স্পিন অ্যান্ড উইন’ অফার চালু করেছি। এতে ৭০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্যাশব্যাকের সুবিধা রয়েছে। তারপরও খুব একটা ক্রেতা নেই।
সনি ব্রাভিয়া শো-রুমের ব্যবস্থাপক আবু বকর বলেন, টেলিভিশন হচ্ছে শৌখিন জিনিস। মানুষ বর্তমানে মৌলিক চাহিদাই মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক মন্দা, ডলার সংকট ও এলসি না খোলায় টেলিভিশনের দাম একটু বেশি। তাই বিশ্বকাপ উপলক্ষে স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি বিক্রি থাকলেও তা প্রত্যাশা অনুযায়ী নয়।
মার্চেন্ট টেলিভিশনের স্টেডিয়াম শাখার ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমান বলেন, মানুষের আগের মতো ক্রয়ক্ষমতা নেই। যেখানে মানুষ ঠিকমতো ভাতই খেতে পারছে না, সেখানে টেলিভিশন কীভাবে কিনবে?
স্যামসাং ব্র্যান্ডের স্টেডিয়াম শাখার সহকারী ব্যবস্থাপক রাকিব আকন্দ বলেন, কিছুটা বেচা-বিক্রি বেড়েছে। তবে ফুটবল বিশ্বকাপের আগে যেমন বিক্রির আশা করেছিলাম, তেমন হচ্ছে না। আমরা আমাদের পণ্যে তিন হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছি। যাতে মানুষ আকৃষ্ট হয়। তাও ক্রেতাদের তেমন সাড়া পাচ্ছি না। এ ছাড়া বিশ্বকাপের তো আর আছেই অল্প কয়দিন। তাই আর বিক্রি বাড়ার আশা নেই।
মিনিস্টার হাইটেক পার্ক ব্র্যান্ডের সহকারী ব্যবস্থাপক মেসবাহ উদ্দিন রাজী বলেন, আগে ফুটবল বিশ্বকাপের সময় স্টেডিয়াম মার্কেটে টেলিভিশন বিক্রির ধুম লেগে যেত। ওই সময়টা আমাদের কাছে ঈদের আনন্দের মতো লাগতো। কিন্তু এবার এর ছিটেফোঁটাও নেই। দুর্ভিক্ষের কথা চিন্তা করে মানুষ টেলিভিশন কিনে অযথা টাকা খরচ করতে চাইছে না।
তবে একই মার্কেটের সনি ব্রাভিয়ার আরেকটি শাখার সিও তানজিন আহমেদ খান বলেন, আমরা শুধু টেলিভিশন ও হোম থিয়েটার বিক্রি করি। তাই ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে আমাদের বেচা-বিক্রি কিছুটা ভালো। আগে প্রতিদিন দুই-তিনটি টেলিভিশন বিক্রি করলে, এখন হচ্ছে পাঁচ থেকে ছয়টি। টেলিভিশনের সাইজ ও মডেল ভেদে আমরা ক্রেতাদের ১০ হাজার থেকে ২০টাকা পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছি। এ ছাড়া প্রিয় দলের জার্সি, মগও দিচ্ছি। সারাদেশে ফ্রি হোম ডেলিভারির ব্যবস্থাও রয়েছে।
স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে এই শো-রুমে টেলিভিশন কিনতে এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা আনন্দ কুমার দাস। এবারের ফুটবল বিশ্বকাপ পরিবারের সঙ্গে নতুন টেলিভিশনে দেখবেন বলে সনির ৪৩ ইঞ্চির একটি টিভি কিনেছেন তিনি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ফুটবল বিশ্বকাপে অংশ না নিলেও এর আমেজ প্রতিটি ঘরে। তাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এবারের ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন দেখার জন্য নতুন টেলিভিশন কিনলাম। এ ছাড়া ফুটবল বিশ্বকাপের সময় টেলিভিশন কোম্পানিগুলো নানা ধরনের ছাড় দেয়। তাই পুরানো টেলিভিশন পাল্টানোর জন্য এই সময়কেই বেছে নিলাম।
বন্ধুদের নিয়ে একসঙ্গে ফুটবল বিশ্বকাপ উপভোগ করার জন্য টেলিভিশন কিনতে এসেছেন পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী তানজিম হোসেন। তিনি বলেন, ফুটবল বিশ্বকাপ মানেই উন্মাদনা। ছোটবেলা থেকেই বন্ধুদের সঙ্গে রাত জেগে খেলা দেখছি। এবারও দেখব। তাই নতুন টেলিভিশন কিনলাম।
এদিকে বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে বেশ ভালো টেলিভিশন বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কনকার স্টেডিয়াম শাখার ব্যবস্থাপক মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, আগে মাসে এক থেকে পাঁচটি টেলিভিশন বিক্রি হতো। এখন বিশ্বকাপ উপলক্ষে ১২-১৫টি বিক্রি হয়েছে। এই কয়দিনে বিক্রি আরও বাড়তে পারে।
প্রত্যাশা অনুযায়ী না হলেও, ভালোই টেলিভিশন বিক্রি হচ্ছে দেশিয় ব্র্যান্ড ওয়ালটনের। স্টেডিয়াম মার্কেটের ওয়ালটন শো-রুমের সেলস এক্সিকিউটিভ আলাল খান শুভ বলেন, আগে গড়ে প্রতিদিন এক-দুটি টেলিভিশন বিক্রি হতো। এখন প্রতিদিন তিন-চারটি বিক্রি হচ্ছে। তবে ফুটবল বিশ্বকাপে আরও অনেক বেশি টেলিভিশন বিক্রির আশা করেছিলাম। সে অনুযায়ী না হওয়ায় কিছুটা হতাশ আমরা।
ইউকে/এসএম