বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে বেড়েছে পণ্যের দাম। অন্যদিকে ডলার সংকটে ধুঁকছে দেশের ব্যাংকগুলো। এ দুইয়ের প্রভাবে ভাটা পড়েছে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে। এতে কমেছে সরকারের রাজস্ব আয়ও। জানা গেছে, দেশের সবচেয়ে বড় রাজস্ব আহরণকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। চলতি অর্থবছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত কাস্টমসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৯ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। কিন্তু এই সময়ে আদায় হয়েছে ২৫ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্যমতে, গত নভেম্বর মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে ৫ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা, যা আগের মাসের তুলনায় ১ হাজার ৪৫ কোটি টাকা কম। এর আগে অক্টোবর মাসেও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১ হাজার ৬৩৯ কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে।
রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ার মূল কারণ আমদানি কমে যাওয়া। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে এলসি খোলার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
অল্প অর্থের এলসি খুলতেও ব্যাংকের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের আমদানি শাখার তথ্যে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মোট ২৪ হাজার ৫৬০টি বিল অব এন্ট্রি (আমদানি চালান) দাখিল হয়, সেটি অক্টোবরে ২০ হাজার ৭৮৪টিতে নেমে আসে।
দেশে মোট আমদানির বড় একটা অংশ আসে শিল্পের কাঁচামাল ও উপকরণ হিসেবে। ডলার সংকট ও এলসি জটিলতায় শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক পণ্যই আমদানি করতে পারেননি উৎপাদকেরা। এর প্রভাব পড়েছে রপ্তানি খাতেও।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯৭২টি রপ্তানি চালান (বিল অব এক্সপোর্ট) দাখিল করা হয়। কিন্তু অক্টোবরে রপ্তানি চালানের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ১ লাখ ৩ হাজার ৩১০টি। ওজনের হিসাবেও দেখা যায়, জানুয়ারিতে ৩৮ কোটি ১১ লাখ ২৭ হাজার ৯৯৩ কেজি পণ্য রপ্তানি হলেও নভেম্বর মাসে তা কমে দাঁড়ায় ২৯ কোটি ১৭ লাখ ৫৮ হাজার ৭৩১ কেজিতে।
পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, করোনা-পরবর্তী তৈরি পোশাক শিল্পের সুদিন ফিরলেও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে পোশাকশিল্পকে নতুন করে সংকটে ফেলেছে। ইউরোপ-আমেরিকায় সেল অনেক কমে গেছে। ফলে অর্ডার অনেক কমে যাচ্ছে, পেমেন্ট ডিলে হচ্ছে। এই সুযোগে অনেক বায়ার আবার ডিসকাউন্ট দাবি করছে। এত পোশাকশিল্পের বাজারে চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের নেতিবাচক প্রভাব দেশের সার্বিক উৎপাদন এবং অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে এবং নিত্যপণ্যের বাজারেও অস্থিরতা বাড়াবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
ইউকে/এসএম