নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাভাইরাসের চেয়ে যক্ষ্মার জীবাণু ছড়ায় কম গতিতে। কিন্তু করোনার চেয়েও বেশি মানুষ মারা যায় যক্ষ্মা রোগে। সর্বশেষ হিসাবে, শুধু ২০২০ সালেই বাংলাদেশে ৪৪ হাজার যক্ষ্মা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। অথচ ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩৬ জনের। এ হিসাবে করোনার চেয়েও মৃত্যু বেশি যক্ষ্মায়।
রোববার (১২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতির (নাটাব) রাজশাহী জেলা শাখার এক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত নগরীর একটি রেস্তোরাঁর সম্মেলনকক্ষে রাজশাহীতে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভা হয়।
সভায় জানানো হয়, রাজশাহী জেলায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত প্রায় এক বছরে ৩ হাজার ৬৪১ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী মহানগরীতে ১ হাজার ৪৩৬ জন। আর জেলার ৯ উপজেলায় শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ২০৫ জন।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহীর সিভিল সার্জন আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের সার্ভিল্যান্স মেডিকেল অফিসার আবদুর রব সিদ্দিকী ও বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের প্রোগ্রাম অফিসার রফিকুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন নাটাবের রাজশাহী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহানুল হক মুন।
সংক্রামক ব্যাধি নিয়ে কাজ করা চিকিৎসক আবদুর রব সিদ্দিকী যক্ষ্মা রোগের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এক লাখ মানুষের নমুনা পরীক্ষা করলে এখন গড়ে ২২১ জনের যক্ষ্মা রোগ শনাক্ত হচ্ছে। দেশে প্রতিবছর ৩ লাখ ৬০ হাজার যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। প্রতিবছর এ রোগে আক্রান্ত ৪৪ হাজার রোগী মারা যায়। মৃত্যুর এই হিসাব করোনার মৃত্যুর চেয়েও বেশি। তাই এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে। ছয় মাস নিয়ম করে ওষুধ খেলেই যক্ষ্মা ভালো হয়।
আবদুর রব সিদ্দিকী আরও বলেন, বাংলাদেশে যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসায় সফলতার হার ৯৪ শতাংশ। কিন্তু একজন যক্ষ্মা রোগী বিনা চিকিৎসায় থাকলে আরও ১০ থেকে ১৫ জনকে আক্রান্ত করতে পারে। তাই যক্ষ্মা হলে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। ব্যবহার করতে হবে মাস্ক। এখন বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা বিনা মূল্যে যক্ষ্মার পরীক্ষার ব্যবস্থা করছে। সরকারি হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসাও পাওয়া যায় বিনা পয়সায়। তাই দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি হলে যক্ষ্মার পরীক্ষা করাতে হবে। যক্ষ্মা রোগের ব্যাপারেও সবাইকে সচেতন হতে হবে।
সভায় জানানো হয়, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে যক্ষ্মার সন্দেহভাজন রোগী হিসেবে যাদের পরীক্ষা করা হয়, তার মধ্যে প্রায় অর্ধেকের যক্ষ্মা শনাক্ত হয়। এখন কারা হাসপাতালে আটজন যক্ষ্মা রোগী আছেন। তাঁদের চিকিৎসা চলছে। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে এক লাখ নমুনা পরীক্ষার মধ্যে যক্ষ্মা পজিটিভ রোগী ২২ জনে নামানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। বছরে যক্ষ্মা রোগে মৃত্যু মাত্র ২১৪ জনে নামানোর চেষ্টা চলছে।
সভায় সিভিল সার্জন আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বক্ষব্যাধি ক্লিনিক, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল, কমিউনিটি ক্লিনিক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনা পয়সায় যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা করা হয়। রোগী গরিব হলে তাঁর যাতায়াতের ভাড়াটাও দেওয়া হয়। তাই দুই সপ্তাহের বেশি সময় কাশি, ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যহানি ঘটা কিংবা বিকেল থেকে জ্বর এসে রাতে ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিলে যক্ষ্মার পরীক্ষা করার জন্য তিনি সবাইকে আহ্বান জানান।
আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক আরও বলেন, যক্ষ্মা রোগে মৃত্যু করোনার চেয়েও বেশি। সাধারণ যক্ষ্মার চিকিৎসা না করালে তা ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগ (এমডিআর টিবি) হতে পারে। এই রোগের চিকিৎসা আরও সময়সাপেক্ষ। তাই এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা যক্ষ্মা রোগের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে তাদের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে
ইউকে/এএস