জন্মনিবন্ধন জালিয়াতি : সরকারি স্কুলে ভর্তির সুযোগ হারাল ৭ ক্ষুদে শিক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীতে সরকারি বিদ্যালয়ে লটারির মাধ্যমে ভর্তিতে একাধিক জন্মনিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করা সাত শিক্ষার্থীকে চিহ্নিত করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) রাজশাহী। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে সরকারি কোনো স্কুলে ভর্তির সুযোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিলের সভাপতিত্বে ভর্তি সংক্রান্ত কমিটির সভায় ওই শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল করা হয়।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজশাহীতে সরকারি প্রমথনাথ স্কুলে এক, ল্যাবরেটারি হাইস্কুলের এক, হেলেনাবাদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে দুই, কলিজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজে দুই এবং রাজশাহী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থী রয়েছে।

জানা গেছে, সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) লটারি করে। এতে কারিগরি সহায়তা দেয় টেলিটক। গত ৬ ডিসেম্বর অনলাইনে লটারিতে ভর্তির আবেদনের শেষ তারিখ ছিল। ১২ ডিসেম্বর লটারিতে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এরপর রাজশাহীর সাতটি সরকারি বিদ্যালয়ের ফলাফলে দেখা যায়, এক শিক্ষার্থীর নাম একাধিকবার এসেছে। কোনো শিক্ষার্থীর নাম একই বিদ্যালয়ের মর্নিং ও ডে শিফটেও আছে। আবার একজনের নাম তিনবার পর্যন্ত এসেছে।

বিষয়টি অনুসন্ধানে নেমে ভর্তি সংক্রান্ত কমিটি দেখতে পায়, যেসব শিক্ষার্থীর নাম একাধিকবার এসেছে, তাদের নাম বাবা ও মায়ের নাম একই থাকলেও জন্মনিবন্ধন নম্বরের কয়েকটি ডিজিট আলাদা।

কমিটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এসব শিক্ষার্থী একাধিক জন্মনিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে আবেদন করেছে। এ জন্য লটারিতে তাদের নাম একাধিকবার এসেছে।

মেধা তালিকায় দেখা যায়, রাজশাহী প্রমথনাথ সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীর নাম মর্নিং এবং ডে শিফটেও রয়েছে। একবার তার জন্মনিবন্ধন এসেছে ২০১৪৮১৯৬৬০২৭০১৩৫২। তার বাবার নাম মিলন ভট্টাচার্য ও মায়ের নাম রাখী রানী ভাট্টাচার্য। অপরটিতে দেখা যায়, সবই ঠিক আছে শুধু জন্মনিবন্ধন নম্বর পরিবর্তিত। আগের নম্বরের সঙ্গে শেষের চারটি ডিজিট একই। তবে মাঝের তিনটি ডিজিট পাল্টে দেওয়া হয়েছে। একবার লেখা হয়েছে ২৭০। পরেরবার লেখা হয়েছে ৮১০।

গভর্মেন্ট ল্যাবরেটারি হাইস্কুলের এক শিক্ষার্থীর বাবার নাম নূরুন্নবী মিয়া ও মায়ের নাম ফেনসি আক্তার। শিশুর নামসহ তার বাবা মায়ের নাম দুই জায়গায় একই রয়েছে। শুধু জন্মনিবন্ধন নমম্বরটি তিন রকম পাওয়া গেছে। প্রথমবারের সঙ্গে দ্বিতীয়বারের নম্বরের শেষের পাঁচ ডিজিট একই রাখা হয়েছে। একইভাবে এক শিক্ষার্থী জন্মনিবন্ধন পরিবর্তন করে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে দুইবার চান্স পেয়েছে।

জালিয়াতি করা এক অভিভাবক নাম প্রকাশ না করে বলেন, বাচ্চার ভর্তি নিশ্চিতে একাধিকবার আবেদন করেছি। এ পদ্ধতি অবলম্বন করে আগেও অনেকে ভর্তি হয়েছে। তাই আমিও এটি করেছি।

অভিভাবক মিলন ভট্টাচার্য বলেন, বাচ্চার নাম দুইবার এসেছে কি না জানি না। তবে আবেদন একবারই করেছি।

ভর্তি কমিটির আহ্বয়াক ও রাজশাহী কলিজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. নুরজাহান বেগম বলেন, আনলাইনে আবেদনের পর জন্মনিবন্ধন নম্বর দিয়েই শিক্ষার্থীদের লটারি করা হয়। যেহেতু তারা নম্বর পরিবর্তন করে আবেদন করেছে। তাই লটারিতে একাধিকবার নাম উঠেছে। এরপরই মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে গত ১৪ ডিসেম্বর একটি পরিপত্র জারি করা হয়। পত্রে যাদের নাম একাধিকবার এসেছে তাদের ভর্তি বাতিল করতে বলা হয়েছে। রাজশাহীতে এখন পর্যন্ত সাত শিক্ষার্থী শনাক্ত হয়েছে। বাকিগুলো যাচাই চলছে। যাচাই শেষেই ভর্তি করা হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) রাজশাহীর উপ-পরিচাল ড. শারমিন ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, একজনের দুইটা জন্মনিবন্ধন হতে পারে না। এ কারণেই তাদের ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। তবে অভিভাবকরা কোনো চক্রে জড়িত কি-না সেটি বলা কঠিন। এসব শিক্ষার্থীরা এবার তো নয়-ই, আগামীতেও কোনো সরকারি স্কুলে ভর্তির সুযোগ পাবে না। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবে।

ইউকে/এএস