বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: প্রকৃতিতে ঋতৃরাজ বসন্ত। চারিদিকে ফুলের সমরহ। স্লিগ্ধ এমন মধুময় পরিবেশে প্রেমের টানে জার্মান তরুণী জেনিফার স্ট্রায়াস গোপালগঞ্জে ছুটে এসছেন। প্রিয় মানুষটির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। ভিনদেশি বধূ পেয়ে খুশি পরিবারের সদস্যরা। পরিবারজুড়ে তাই বইছে খুশির বন্যা। পরিবারের সদস্যরা আনন্দঘন কাটাচ্ছেন ভিনদেশি বধূকে নিয়ে।
গত রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) গোপালগঞ্জের একটি আদালতে এফিডেভিটের মাধ্যমে জেনিফার স্ট্রায়াস ও চয়ন ইসলামের বিবাহ সম্পন্ন হয়। এতে হৈ চৈ পড়েছে পুরো এলাকায়। অনেকই জার্মান বধূকে দেখতে ছুটে আসছেন।
জার্মানির তরুণী জেনিফার স্ট্রায়াস গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে নামেন। পরে সেখানে তার প্রেমিক চয়ন ইসলাম ও স্বজনরা তাকে স্বাগত জানান। রাতেই তারা জেনিফারকে নিয়ে গোপালগঞ্জ শহরে চলে যান। শহরের মডেল স্কুল রোডের ফুফাতো ভাই আব্দুর রহমানের বাড়িতে রাত যাপন করেন। রোববার সকালে পরিবারের লোকজন নিয়ে আদালতে গিয়ে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
চয়নের বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার জোতকুরা গ্রামে। তার ইতালি প্রবাসী বাবা রবিউল ইসলামের সুবাদে সেও ইতালিতে যান। এর কিছুদিন পর ইতালি থেকে জার্মানিতে চলে যান চয়ন। প্রায় পাঁচ বছর আগে জার্মান ভাষা শিখতে একটি শিক্ষা কোর্সে ভর্তি হন তিনি। সেখান থেকেই পরিচয় হয় জেনিফারের সঙ্গে। আর সে পরিচয় থেকেই তাদের মধ্যে প্রণয়ের পথের যাত্রা শুরু হয়।
২০২২ সালের ১০ মার্চ চয়ন বাংলাদেশে চলে আসেন। তারপরও তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক চলতে থাকে। ভালোবাসার টানে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে জেনিফার ছুটে আসে চয়নের কাছে। গোপালগঞ্জে পৌঁছানোর পর চয়নের স্বজনরা ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় জেনিফারকে।
জেনিফার একজন মাধ্যমিক লেভেলের শিক্ষার্থী। জার্মানির বাইলেফেল্ড স্টেটে বাবা-মার সঙ্গেই বসবাস করেন। তার বাবার নাম জোসেফ স্ট্রায়াস ও মায়ের নাম এসাবেলা স্ট্রয়াস।
চয়নের ভাগ্নি সানজিদা আক্তার সিমি বলেন, জার্মান থেকে আমাদের মামি এসেছে। সে দেখতে অনেক সুন্দর। আমরা অনেক খুশি। সারাদিন আমাদের মামিকে নিয়েই অনন্দেই কেটে যাচ্ছে।
চয়নের ভাগ্নে রাইয়ান রহমান অর্থ বলেন, নতুন মামিকে পেয়ে আমরা অনেক আনন্দিত। তার সাথে আমাদের খুব ভালো সময় কাটছে। সে অনেক ভালো। আমাদের অনেক আদর করছে। সবাই আমার মামা-মামির জন্য দোয়া করবেন।
চয়নের মা ঝর্ণা বেগম বলেন, ভাবতেও পারিনি জেনিফার আমাদের সঙ্গে এতো সহজে মিশে যেতে পারবে। বিদেশি বৌমাকে পেয়ে আমরা সবাই খুশি। অল্প সময়েই মধ্যে সে সবাইকে খুব আপন করে নিয়েছে। গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আনন্দ-উৎসব করে আমরা নববধূকে বরণ করে নেবো।
বাবা জোসেফ ট্রায়াস মেয়ে জেনিফারে সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে চলেছেন। এ বিয়েতে জেনিফারের বাবা-মাসহ পরিবারের সবাই খুব আনন্দিত।
জেনিফার তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশকে আমি ভালোবেসে খুশি হয়েছি। এখানকার পরিবেশ, আতিথিয়েতা ও সবার ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করেছে। পরিবারের সবাই আমাকে আপন করে নিয়েছে। সবাইকে নিয়ে মিলেমিশে চলতে পেরে আমি ভীষণ খুশি হয়েছি।’
চয়ন ইসলাম বলেন, আমি জার্মানিতে পড়াশোনা করার সময় জেনিফারের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরিচয় থেকে ভালোবাসা হয়। দীর্ঘ ৫ বছরের সম্পর্ক আমাদের মাঝে। আমি একটি চাকরি করতাম। সেখানে মালিকের সঙ্গে মনোমালিন্য হলে চাকরি ছেড়ে বাংলাদেশে চলে আসি। আমার ভালোবাসার টানে জেনিফা বাংলাদেশে চলে এসেছে। আমরা বিয়ে করেছি। এতে আমার ও জেনিফার পরিবারের সবাই খুব খুশি। কিছুদিনের মধ্যে জেনিফারের বাবা-মা বাংলাদেশে আসবেন। তখন মহা-ধুমধামে বিয়ের অনুষ্ঠান করার ইচ্ছা আছে।
ইউকে/এসএম