বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান খাদ্যশস্য গমের উৎপাদন বাড়লেও বৈশ্বিক পর্যায়ে মজুদের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। মূলত বিশ্বব্যাপী চালের উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায় খাদ্যশস্য হিসেবে গমের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মজুদ পরিস্থিতি কমতে থাকলে এটি বাংলাদেশের মতো আমদানিনির্ভর দেশগুলোর খাদ্য নিরাপত্তা এবং বাজার ব্যবস্থায় সংকট সৃষ্টি করতে পারে। চালের উৎপাদন বাড়িয়ে সেই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।
খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিট গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এই প্রতিবেদনটি খাদ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত নভেম্বরের শেষে গমের বৈশ্বিক মজুদ ২৬ কোটি ৮০ লাখ মেট্রিক টনে নেমে এসেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ১ শতাংশ কম। অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী চালের উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ২ শতাংশ কমে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। পাকিস্তান, নাইজেরিয়া এবং শ্রীলঙ্কায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় চালের এই বৈশ্বিক উৎপাদন কম হবে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি দফতর ইউএসডিএ’ তথ্যানুযায়ী- গত নভেম্বর শেষে চালের বৈশ্বিক মজুদ ১৬ কোটি ৯০ লাখ মেট্রিক টনে নেমে এসেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৭ শতাংশ কম।
খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের গবেষণা পরিচালক (উৎপাদন ও পূর্ব সতর্কীকরণ অধিশাখা) মো. মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিশ্বব্যাপী চালের উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার কারণে গমের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়েছে। উপরন্তু রাশিয়া, ইউক্রেন থেকে প্রয়োজনীয় গম রপ্তানি হচ্ছে না। এ কারণে গমের বৈশ্বিক উৎপাদন বাড়লেও মজুদ কমে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি দফতর ইউএসডিএ যে পূর্বাভাস দিয়েছে তাতে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ৭৮৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন গম উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। এটি আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ০ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনে উৎপাদন কিছুটা বিঘ্নিত হলেও মূলত কাজাখস্তানে ফলন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আগামী মৌসুমে গমের উৎপাদন বাড়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যুদ্ধের পরও তিন বছর ধরে গমের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭৭৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন গম উৎপাদন হয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭৭৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন, যা চলতি অর্থবছরে ৭৮৩ মিলিয়ন মেট্রিক টনে উন্নীত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তবে উৎপাদন বাড়লেও কমছে গমের মজুদ। ২০২০-২১ অর্থবছরের নভেম্বর শেষে গমের বৈশ্বিক মজুদ ছিল ২৯ কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৭ কোটি ৬০ লাখ মেট্রিক টনে নেমে আসে। চলতি অর্থবছরের নভেম্বরে খাদ্যশস্যটির মজুদ আরও কমে ২৬ কোটি ৮০ লাখ মেট্রিক টনে নেমে আসে। মাহবুবুর রহমান বলেন, চালের উৎপাদন কমার কারণে গমের ওপর যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে, সেটি আন্তর্জাতিক বাজারের সমস্যা। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মতো খাদ্য আমদানিনির্ভর দেশগুলোতে দামের ওপর প্রভাব পড়ে। আমরা দেখছি, গত বছরও যে গমের টনপ্রতি দাম ২০৪ মার্কিন ডলার ছিল, তা এ বছরে ৪০০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। এর প্রভাব অভ্যন্তরীণ বাজারেও পড়েছে।
তবে গমের বৈশ্বিক মজুদ কমলেও সেটি দেশের বাজারে তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না বলে মনে করেন খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের এই গবেষক। তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ বাজারে চাল নিয়ে সমস্যা নেই। কারণ দেশে চালের উৎপাদন বাড়ছে। এ কারণে চালের দামও আগের তুলনায় কমেছে। এ ছাড়া আগামী বোরো মৌসুমের আবাদ ভালো হলে গমের ওপর চাপ কমবে।
ইউকে/এএস