দাঁতের ক্ষয় যেভাবে প্রতিরোধ করবেন

ডা. কামরুন নাহার শান্তা: স্বাস্থ্যসম্মতভাবে নিয়মিত ব্রাশ করা যেমন দাঁতের ক্ষয় রোধ করে, তেমনি ত্রুটিপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি দাঁতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। মুখের যত্নে সঠিক স্বাস্থ্যবিধি, তার প্রতিকার ও প্রতিরোধ নিয়ে নিচের আলোচনা।

দন্তক্ষয়ের কারণ

* ক্রটিপূর্ণ মৌখিক স্বাস্থ্যবিধি

▶ আড়াআড়িভাবে ব্রাশ করা।

▶ শক্তি দিয়ে জোরে ব্রাশ করা।

▶ শক্ত ব্রিসল যুক্ত ব্রাশ ব্যবহার করা।

▶ নিয়মিত ব্রাশ পরিবর্তন না করা।

▶ দাঁতের প্রলেপ ঘষে তুলে ফেলে এমন টুথপেষ্ট বা মাজন ব্যবহার করা।

▶ ২ মিনিটের বেশি সময় ধরে বা দিনে ২ বারের বেশি ব্রাশ করা।

▶ ব্যবহারের অনুপযোগী আলগা দাঁত দীর্ঘদিন ব্যবহার করা।

▶ খিলাল ব্যবহার করা

* অস্বাভাবিক মৌখিক অভ্যাস

▶ দাঁত দিয়ে নখ কামড়ানো।

▶ দাঁতের আগায় সুই জাতীয় জিনিস নিয়মিত ব্যবহার করা।

▶ বরফের টুকরা কামড়ে খাওয়া।

▶ ঘুমের মধ্যে দাঁত চাবানো।

▶ অতিরিক্ত টকজাতীয় খাবার খাওয়া।

▶ অতিরিক্ত কোমল পানীয় খাওয়া।

▶ কোমল পানীয় কুলি করে খাওয়া।

* লক্ষণ

▶ যে কোনো বয়সেই হতে পারে, তবে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে পারে।

▶ মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের বেশি হয়।

▶ যে হাত দিয়ে ব্রাশ করা হয় তার বিপরীত দিকে এ ক্ষয় দেখা যায়, যেমন-যে ডান হাতে ব্রাশ করে তার ক্ষয় বামে বেশি হয়।

▶ গালের দিকের দাঁতের অংশ ক্ষয় হলে সে জায়গাটা পিরিচ, ইংরেজি অক্ষর ‘ভি’-এর মতো, বা কুঠারের মতো খাঁজ কাটা থাকে।

▶ ক্ষয়ে যাওয়া জায়গাটা চকচক করে বা খসখসে থাকতে পারে।

▶ দাঁতে কামড় দেওয়ার জায়গায় ক্ষয় হলে দাঁতের স্বাভাবিক খাঁজকাটা ভাবগুলো মিশে গিয়ে সমান্তরাল হয়ে যায়, যেন করাত দিয়ে কেটে সমান করা হয়েছে।

▶ পুরোনো ফিলিং যদি রুপার হয় সেগুলো অনেক সময় দাঁতের চেয়ে উঁচু হয়ে বের হয়ে থাকে।

▶ প্রথম অবস্থায় মিষ্টি, টক, ঠান্ডা পানিতে দাঁতের সংবেদনশীলতা বেড়ে যায়।

▶ সময়মতো চিকিৎসা না হলে দাঁতের ভেতরের মজ্জা নষ্ট হয়ে যায় বা দাঁতের ওপরে মুকুট ভেঙে যেতে পারে।

▶ অনেক সময় মাড়ির কামড় বদলে যায়, ফলে কানে ব্যথার মতো অন্যান্যশারীরিক সমস্যা হতে পারে।

প্রতিকার

* স্বাস্থ্যসম্মত মৌখিক স্বাস্থবিধি মেনে চলা

▶ নিয়মিত ২ মিনিট সময় নিয়ে দিনে ২ বার মুখের পরিচর্চা করা।

▶ ব্রাশ ব্যবহারে সচেতন হওয়া।

▶ নরম ব্রাশ ব্যবহার করা।

▶ প্রতি ৩ মাস পর ব্রাশ পরিবর্তন করা।

▶ দাঁত সাদা করে এমন টুথপেস্ট ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার না করা।

▶ মাজনের ব্যবহার পরিহার করা।

▶ খিলালের ব্যবহার পরিহার করা, ডেন্টাল ফ্লস বা ইন্টারডেন্টাল ব্রাশ ডাক্তারের পরামর্শে ব্যবহার করা।

* খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন

▶ প্রতিদিন অন্তত পক্ষে ২-৫ লিটার পানি পান করা।

▶ দুধ, দই, পনির ইত্যাদি ক্যালসিয়াম সংবলিত খাবার খাওয়া যা দাঁতের ক্ষয় রোধ করে।

▶ কোমল পানীয়, অ্যালকোহল ইত্যাদি পরিহার করা।

প্রতিরোধ-

* বিএমডিসি কর্তৃক রেজিস্ট্রার্ড ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে

▶ শিরশির করা প্রাথমিক সমস্যা, এ অবস্থায় যদি গর্ত না থাকে শুধু ফ্লোরাইডযুক্ত বা শিরশির রোধক টুথপেস্ট ব্যবহার করা ।

▶ গভীরতা অনুযায়ী ফিলিং করা যাবে যা আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি দিয়ে দাঁতের সঙ্গে রং মিলিয়ে ফিলিং করা।

▶ লেজার দিয়েও এ চিকিৎসা করা যায়।

▶ যদি মজ্জা আক্রান্ত হয় তখন মজ্জার চিকিৎসা করতে হবে।

▶ মাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর চিকিৎসা করতে হবে।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ইউনিভার্সিটি ডেন্টাল কলেজ, ঢাকা