ভারত পালিয়েও রক্ষা হয়নি, বেনাপোল থেকে ভর্তি জালিয়াতি চক্রের মূলহোতা আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভর্তি ও নিয়োগসহ বিভিন্ন পরীক্ষায় জালিয়াতি ও প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মূল হোতাকে গ্রেফতার করেছে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ। বিভিন্ন নিয়োগ ও ভর্তি পরীক্ষার জাল প্রশ্নপত্র ও প্রবেশপত্র তৈরি করে ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছিল এই চক্রের সদস্যরা। সম্প্রতি গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও অভিযানের পর এই চক্রের মূল হোতা ভারত পালিয়ে যান। পরে আবার ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢোকার সময় যশোরের বেনাপোল সীমান্তে ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে আটক হন। পরে সেখান থেকে তাকে ধরে নিয়ে আসে ডিবি পুলিশ।

ডিবি পুলিশ তার কাছ থেকে বিভিন্ন পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড, পরীক্ষার প্রবেশপত্র, জীবন বৃত্তান্ত, নাগরিক সনদপত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপিসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করেছে।

গ্রেফতারকৃতের নাম নয়ন ইসলাম (২৫)। তিনি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার অচিনঘাট গ্রামের আজগর হোসেন মন্ডলের ছেলে। নয়ন বর্তমানে মহানগরীর বোয়ালিয়া থানা এলাকার বাসিন্দা।

আজ বুধবার (৮ মার্চ) দুপুরে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) সদর দপ্তরে এই ঘটনায় প্রেস ব্রিফিং করা হয়। এতে গণমাধ্যম কর্মীদের এই পুরো ঘটনার তথ্য জানান, আরএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) বিজয় বসাক।

তিনি বলেন, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি একটি চ্যানেলে সংবাদ প্রকাশিত হয় যে, সারাদেশে আসন্ন মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। এরপর তার সন্ধানে নামে পুলিশ। পরে জানা যায়- জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তির সুযোগ করে দেওয়া ও বিভিন্ন চাকরির প্রলোভন দিয়ে মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু এবং চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের সদস্যরা মহানগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন নিউমার্কেট সংলগ্ন পিজি টাওয়ার বিল্ডিংয়ের ১০ম তলায় অবস্থান করছেন। এখান থেকেই তারা মহানগরীর বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের মালিকদের সহযোগিতায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ভর্তিচ্ছু ও চাকরি প্রত্যাশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তারা সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে পরীক্ষার প্রবেশপত্রের কপি এবং চুক্তি মোতাবেক অর্থের জিম্মা হিসেবে তাদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার মূল সনদপত্র, রেজিস্ট্রেশন কার্ড সংগ্রহসহ প্রাথমিক খরচ বিকাশ, রকেট এবং নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নগদ টাকা সংগ্রহ করে থাকেন। পরে আরএমপি কমিশনার আনিসুর রহমান বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে মহানগর গোয়ন্দা পুলিশকে নির্দেশ দেন।

এরপর রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আল মামুনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) আব্দুল্লাহ আল মাসুদের নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক মশিয়ার রহমান একটি ইউনিট নিয়ে এই জালিয়াত চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে মহানগর ডিবি পুলিশের ওই টিম পিজি টাওয়ারের ১০ম তলায় অভিযান পরিচালনার জন্য গেলে জালিয়াতি চক্রের সদস্যরা গোয়েন্দা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কৌশলে পালিয়ে যায়।

পরে ফ্ল্যাটের মালিকের মাধ্যমে জানা যায় ভাড়াটিয়ার নাম নয়ন ইসলাম। তিনি নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে তার অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে বসবাস করতেন। বাড়ির মালিক আরও জানান নয়ন নিজেকে কখনও ডাক্তার, কখনও সরকারি কর্মকর্তা বা এনজিও কর্মী পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন চাকরি প্রার্থী ও ভর্তিচ্ছু ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে যোগাযোগ করেন। আর অনেকেই এখানে আশা যাওয়া করে। পরে ডিবি পুলিশ প্রতারক চক্রের মূল হোতার নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে আসামি নয়নসহ অন্যান্য সদস্যরা যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য গত ২৬ ফেব্রুয়ারি দেশের সব বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরসমূহে বিশেষ চিঠি পাঠায়। কিন্তু মূল হোতা নয়ন এর আগেই ভারতে পালিয়ে যায়। এরপর নয়ন ইসলাম গত ৬ মার্চ বিকেলে যশোর জেলার বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করেন।

এ সময় পুলিশের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বেনাপোল ইমিগেশন পুলিশ তাকে আটক করে বেনাপোল পোর্ট থানায় হস্তান্তর করেন। বিষয়টি তারা অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারকে (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) জানান। এরপর গত ৭ মার্চ বিকেলে ডিবি পুলিশ যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানায় গিয়ে নয়নকে নিজ হেফাজতে নিয়ে আসে।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত নয়ন জানিয়েছেন, তিনি ও তার সহযোগী পলাতক আসামি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলর বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র সনেট এবং আরো অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন সহযোগী পরস্পর যোগসাজসে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের সাথে যোগাযোগ করে বিভিন্ন চাকরিপ্রার্থী ও বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু প্রার্থীদের সঙ্গে মোবাইল ফোনের বিভিন্ন অ্যাপস(হোয়াটস অ্যাপস, ভাইবার, টেলিগ্রাম) এর মাধ্যমে যোগাযোগ করে তাদের চাকরি দেওয়ার কথা বলেন এবং বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আশ্বাস দিয়ে ডিজাটাল ডিভাইস (মোবাইল ফোন) ব্যাবহার করে মোবাইল ফিন্যান্স (বিকাশ, রকেট, নগদ) অ্যাকাউন্ট এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ডিজিটাল প্রতারণা করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন।

পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। গ্রেফতারকৃত আসামিসহ পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও পেনাল কোডে একটি মামলা করা হয়েছে বলেও প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় জানান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার।

ইউকে/এএস