নিজস্ব প্রতিবেদক: উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বেটিসসহ অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর উদ্যোগে ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সহযোগিতায় রাজশাহীতে হৃদরোগে মৃত্যুহার কমাতে সমন্বিতভাবে কাজ শুরু করেছে। এই কাজের ধারাবাহিকতায় সিভিল সার্জন অফিস রাজশাহী, পাবনা ও সিরাজগঞ্জের উদ্যোগে পৃথক পৃথক ভাবে প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
গতকাল মঙ্গলবার সিরাজগঞ্জে প্রশিক্ষণ কর্মশালার মধ্যদিয়ে ৩ দিনের এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী ঘটে। এর আগে রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা: হাবিবুল আহসান তালুকদার এই কর্মসূচীর উদ্বোধন ঘোষণা করেন। উল্লেখ্য যে গত ২৮ মার্চ পাবনায় ৩ দিন ও ৩ এপ্রিল থেকে রাজশাহীতে ৪ দিনের এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। দেশে হৃদরোগ জনিত মৃত্যুরহার শতকরা ৭.৫ ভাগ কমানো এবং উচ্চ রক্তচাপের ব্যপকতা শতকরা ২১ ভাগ থেকে কমিয়ে ১৫ ভাগে নিয়ে আসা এবং একইসাথে লবন ব্যবহারের পরিমান কমানোর পরিকল্পনা বস্তবায়নে রাজশাহী বিভাগের তিনটি জেলার ২৫টি উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সর এনসিডি কর্নারের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বেটিসসহ অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে সরকার বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা, পরামর্শ ও ঔষধ প্রদান করবে। এই কর্নারগুলো থেকে প্রাপ্তবয়সী সকলকে আধুনিক ডিজিটাল মেশিনের মাধ্যমে রক্তচাপ পরিমাপ করা হবে এবং সকল রোগীর তথ্য সিম্পল এ্যপস ব্যবহার করে সংরক্ষণ করা হবে এবং তাদের উচ্চরক্তচাপ ও ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণের হার মনিটরিং এর কাজ করবে।
বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা: হাবিবুল আহসান তালুকদার বলেন, অসংক্রামক রোগ সারা বিশ্বে মৃত্যুর প্রধান কারন। বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৪ কোটি মানুষ অসংক্রামক রোগে মৃত্যুবরণ করেন, এই হার মোট মৃত্যুর শতকরা ৭১ ভাগ। নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে এই হার আরো বেশি (শতকরা ৭৫ ভাগ)। অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর শতকরা ৩০ ভাগ সংগঠিত হয় হৃদরোগে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার এনসিডি কান্ট্রি প্রোফাইল ২০১১ এর তথ্যমতে হার্ট এটাক, স্ট্রোক, সিওপিডি’র মতো অসংক্রামক রোগ সমূহের ফলে এদেশে প্রতি বছর ৫৭ লক্ষ ২৬ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে, যা মোট মৃত্যুর শতকরা ৬৭ ভাগ।
অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বেটিস ফলে হার্ট এটাক, স্ট্রোক ও অন্ধত্বের শিকার হয় বলে চিকিৎসাবিজ্ঞান মনে করে। এই প্রোগ্রামের ফলে অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ ও অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস রোগীর সংখ্যা কমবে।
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা: আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ধূমপান ও তামাক বা তামাকজাতীয় দ্রব্য ব্যবহার, এলকোহল বা মদ্যপান, অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহন, শারিরিক পরিশ্রম না করার বিষয়টি এনসিডি জনিত দুই তৃতীয়াংশ মৃত্যুর সাথে সম্পৃক্ত। বিশ্বায়ন ও নগরায়নের ফলে বায়ূদূষণ, খাদ্যাভাস ও জীবনচারনের পরিবর্তনের ফলে অধিক মাত্রায় মানুষ অসংক্রামক রোগে বিশেষত উচ্চরক্তচাপ ও ডায়বেটিসের শিকার হচ্ছেন। এই কর্মসূচীর মাধ্যমে মানুষেন জীবনচারন পদ্ধতি পরিবর্তনের জন্য পরামর্শ প্রদান করা হবে।
পাবনার সিভিল সার্জন ডা: মনিসর চৌধুরী বলন, বাংলাদেশে বছরে ২ লক্ষ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করেন, যার অন্যতম প্রধান কারণ উচ্চরক্তচাপ। এদেশে শতকরা ২১ ভাগ অর্থাৎ প্রতি পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজনের উচ্চ রক্তচাপ পাওয়া যায় যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা: রাম পদ রায় বলন, এই কাজটি এনসিডি কর্নারের মাধ্যমে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ডক্টর, নার্স, স্টোরকিপার, মাঠ কর্মীসহ স্বাস্থ্য বিভাগের সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে অনুষ্ঠিত হবে। চিকিৎসকরা সরকারের নির্ধারিত প্রটোকল অনুসরণ করে চিকিৎসা প্রদান করবেন, প্রতি মাসে রোগীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে তাকে মোবাইল কল করা হবে। সকল রোগী, রোগ ও চিকিৎসা ব্যবস্থার তথ্য সিম্পল এপস নামক ডিজিটাল এপসের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হবে। সরকার প্রত্যেকের জন্য বিনামূল্যে সারাবছরের ঔষধ প্রাপ্তি নিশ্চিত করার কাজ করে চলেছে।
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় রাজশাহী বিভাগের ২৫ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ৮৫ জন মেডিকেল অফিসার, ১০৪ জন নার্স, ৫০ জন উপ সহকারী কম্যুনিটি মেডিকেল অফিসার, ২৬ জন করে স্টোরকিপার, পরিসংখ্যানবিদ ও স্বাস্থ্য পরিদর্শক উপস্থিত ছিলেন।#
ইউকে/এএস