মনিরুজ্জামান মনির ।। আমরা প্রত্যেক বছর টমেটো উৎপাদনের মৌসুমের শুরুর দিকে ক্ষেত থেকে কাঁচা টমেটো উঠিয়ে পাকানোর চিত্র বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও ইলেকট্রিক মিডিয়ায় দেখে থাকি। কিন্তু কেন এমন করা হয় এর পেছনের কারণ কি? কৃষক কি স্বেচ্ছায় এমন করছে? নাকি করতে বাধ্য হচ্ছে এমন না করে তাদের অন্য কোন উপায় আছে কি? থাকলে সেটি কি?
মৌসুমের শুরুতে তাদের উৎপাদিত টমেটো দ্রুত বিক্রি না করতে পারলে চাষিদের কম দামে বিক্রি করতে হবে না সে নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারছি কি? বিভিন্ন কোম্পানিগুলো কৃষকের উৎপাদিত টমেটো অতি উৎপাদনের সুযোগ নিয়ে তারা নামমাত্র মূল্যে ক্রয় করে নিয়ে যায়।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের কোন উপায় আমাদের জানা আছে কি? এ সকল প্রশ্নের যথাযথ উত্তর না দিয়ে বা সমাধান না করে উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সম্ভব নয়।।শুধুমাত্র কেমিক্যাল দিয়ে ফসল পাকানোর সাথেই এর সম্পর্ক নয়। এর সাথে কৃষকের জীবন ও জীবিকার প্রশ্ন জড়িয়ে আছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে কৃষকের টিকে থাকার প্রশ্ন জড়িয়ে আছে। কাজেই তাদের এই টিকে থাকার অবলম্বন উপেক্ষা করে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
আমরা জানি আমাদের শরীর গঠনের জন্য খাদ্যের প্রয়োজন। আর এই খাদ্যের যোগান আসে আমাদের কৃষকের কাছ থেকে। সেই কৃষকের জীবন মানের নিশ্চয়তা দিতে না পারলে প্রকারান্তরে আমরা আমাদের জীবন মানের অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। কারণ কৃষককে যদি উৎপাদন পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করতে হয় তাহলে সে ফসল ফলাতে অতিমাত্রায় সার ও কীটনাশক ব্যবহার করবে ফলে সে ফসল আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করবে ফলে আমাদের চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। এতে আমাদের গড় আয়ু কমে যাবে। তাই আমরা যদি সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন চাই তাহলে কৃষকের ফসলের উৎপাদন খরচ নির্ধারণ করে বিক্রয় মূল্য নিশ্চিত করতে হবে তাহলে কৃষক কিছুটা দাম বেশি পাওয়ার আশায় অপ্রাপ্ত বয়স্ক টমেটো উঠিয়ে বাজারজাত করার আর প্রয়োজন পড়বে না।
সাধারণত আমরা রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা গোদাগাড়ী চাষিরা জানুয়ারি মাসের মধ্যেই টমেটোর ক্ষেত ভেঙ্গে দিয়ে ধান উৎপাদনে চলে যাই। সেই সময় সাধারণত প্রতি বিঘা জমিতে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ মণ অপ্রাপ্তবয়স্ক টমেটো থাকে।
অথচ এই ক্ষেতে যদি আরও এক থেকে দুই মাস বেশি পরিচর্যা করা যেত তাহলে একই জমি থেকে কমপক্ষে ১০০ মণ টমেটো বেশি উৎপাদন সম্ভব হবে। প্রতি কেজি ধান উৎপাদনে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার লিটার পানির প্রয়োজন হয়। বোরো মৌসুমের ধান চাষ সাধারণত ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল। কাজেই টমেটোর দাম পাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারলে কৃষক টমেটোর ক্ষেত ভাঙবে না। তারা এ সময়টা বাড়তি পরিচর্যা করে বেশি টমেটো উৎপাদন করতে পারবে। এতে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হবে এবং টমেটো চাষে ভূ-গর্ভস্থ পানির প্রয়োজন কম হবে। আর এর ফলে প্রকৃতির ভারসাম্য ফিরে আস্তে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
লেখক: মো. মনিরুজ্জামান মনির, কৃষক ও তরুণ উদ্যোক্তা, রাজশাহী।