শিশু অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি, ২ জনের কারাদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীতে মুক্তিপণের দাবিতে শিশু অপহরণের দায়ে অপহরণকারী ও তার সহযোগীকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে জরিমানা করা হয়েছে ২০ হাজার টাকা। অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

একই মামলা অপর একটি ধারায় মূল আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং আরও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় অপর দুইজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।

মুক্তিপণের দাবিতে শিশু অপহরণের দায়ে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের কামরুল ইসলামের ছেলে মিজানুর রহমান মিজান (২৩) এবং একই উপজেলার তাঁতারপুর মণ্ডলপাড়া গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে রাজীবুল ইসলাম রাজীব (২৮)।

রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর কোর্ট পুলিশ তাদের রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠায়।

রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট নাসরিন আখতার মিতা জানান, ২০১৯ সালের ১৭ মে বাঘা উপজেলার মিলিকবাঘা গ্রামের বাসিন্দা মো. আজাদ তার শিশু সন্তানকে মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করা হয়েছে বলে থানায় মামলা করেন।

ওই অপহরণ মামলার এজাহারে তিনি অভিযোগ করেন যে, আগের দিন ১৬ মে বিকেলে তিনি তার ১১ বছরের ছেলে সুইটকে নিয়ে বাঘা বাজারে কেনাকাটা করতে গিয়েছিলেন। কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকার সুযোগে আসামিরা তার ছেলেকে জোর করে মোটরসাইকেলে করে তুলে নিয়ে যায়। পরে তারা তার ছেলেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য মোবাইল করে আড়াই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। মামলার পর পুলিশ ওই অপহৃত শিশুকে উদ্ধার করে। এ সময় অপহরণকারী মিজান ও তার সহযোগী রাজিবসহ পরপর চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর অপহরণের পুরো ঘটনা জানিয়ে ২২ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেয় ১১ বছরের অপহৃত শিশু সুইট। তদন্ত শেষে পুলিশ ওই আসামিদের অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করলে বিচার শুরু হয়।

পিপি অ্যাডভোকেট নাসরিন আখতার মিতা জানান, আদালতে সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে আজ রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে মুক্তিপণের দাবিতে শিশু অপহরণের দায়ে অপহরণকারী মিজান ও তার সহযোগী রাজিবকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের (২০০০) ৭ ধারায় (অপহরণ) ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। একই সঙ্গে জরিমানা করা হয় ২০ হাজার টাকা। অনাদায়ে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড।

এছাড়া একই মামলায় ৮ ধারায় (অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি) মূল আসামি মিজানকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং আরও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা অনাদায়ে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর মিজানের ক্ষেত্রে ১৪ বছর এবং যাবজ্জীবনের সাজা একসঙ্গে চলবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

এছাড়া একই মামলায় অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় মামলার ৩ ও ৪ নম্বর আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।

খালাসপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ষষ্ঠীতলা গ্রামের মনজেদ আলীর ছেলে সিরাজুল ইসলাম ও খয়েরঘাট গ্রামের আব্দুল বারেকের ছেলে মো. মাসুদ।

ইউকে/এএস