হিজড়া সম্প্রদায়ের মানুষের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা অধিকার সুনিশ্চিতের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীতে হিজড়া সম্প্রদায়ের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা অধিকার সুনিশ্চিতের দাবি জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ মে) রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জনের সাথে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় এই দাবি জানানো হয়েছে। এ সময় রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে আশ্বস্ত করেন।

স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্য অধিকার বিষয়ে অনএষ্ঠিত এই নমতবিনিময় সভায় রাজশাহীর ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোসা. মাহবুবা খাতুন ছাড়াও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অধীনে কর্মরত ডা. আব্দুর রব সিদ্দিকীসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন দিনের আলো হিজড়া সংঘের সভাপতি জয়িতা মোহনা মুহিন। বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির উপদেষ্টা শরীফ সুমন, কোষাধ্যক্ষ জুলি, জয়িতা পলি। এছাড়া মতবিনিময় সভায় মূল ধারণাপত্র উপস্থাপন এবং এই সংগঠন বিভিন্ন কর্মকাণ্ড এবং সফলতার চিত্র উপস্থাপন করেন ব্লাস্টের প্রকল্প সমন্বয়কারী আবু সাঈদ।

মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, হিজড়া জনগোষ্ঠীর সুস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যসেবার অধিকার নিশ্চিত করতে তাদের আগে তালিকাভুক্ত করতে হবে। তাদের ডাটাবেজ তৈরি হলে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে সরকারের কাছে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ব্যাপারে জাতীয় পর্যায়ে জনমত তৈরি কর এই ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানাতে হবে। তবে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে হিজড়া জনগোষ্ঠীর সদস্যরা যেন তাদের প্রয়োজনী চিকিৎসা এবং জরুরি স্বাস্থ্যসেবা পান সেই ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলবেন এবং এই বিষয়টি নিশ্চিতের চেষ্টা করবেন বলে সকলকে আশ্বস্ত করেন।

মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, দিনের আলো হিজড়া সংঘ রাজশাহীর একটি স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন ও হিজড়াদের অধিকার ভিত্তিক সংগঠন। হিজড়া জনগোষ্ঠীকে সুসংগঠিতকরণের মাধ্যমে একই ছায়াতলে নিয়ে এসে তাদের অধিকার ও মানবাধিকার সুরক্ষার লক্ষ্যে ২০০২ সাল থেকে কাজ করে আসছে। ইতোমধ্যে এই সংগঠনের উদ্যোগে হিজড়া জনগোষ্ঠীর ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এ সময় পিছিয়ে পড়া হিজড়া সম্প্রদায়ের সদস্যদের সমাজের মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে আনতে সকল শ্রেণিপেশার মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।

মতবিনিময় সভায় দিনের আলো হিজড়া সংঘের সভাপতি জয়িতা মোহনা মুহিন বলেন, তাদের অনেক সদস্যই চিকিৎসা নিতে গিয়ে অবহেলা এবং হয়রানির শিকার হন। তারা জরুরি চিকিৎসা নিতে গেলেও অনেক সময় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হন। অনেক সময় বাধ্য হয়ে তাদের অনেকে পাশের দেশ ভারতে যান। কিন্তু তারা দোশেই সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা নিতে চান কারণ এটা মানুষ হিসেবে তাদেরও মৌলিক অধিকার। এ সময় তিনি হিজড়া জনগোষ্ঠীর সদস্যদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য জোড়ালো দাবি জানান।

জয়িতা মোহনা মুহিন বলেন, হিজড়া জনগোষ্ঠীর সদস্যরা এখন নিজ থেকেই এরই মধ্যে উদ্যোক্তা হয়ে উঠছেন। তারা আর নেতিবাচক কাজে থাকতে চান না। তবে এজন্য দরকার হিজড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থান ও বাসস্থানের সুযোগ। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নানা ধরনের কাজের মানুষের দরকার হয়, সেখানে তাদের সদস্যদের চাকরি দেওয়া যেতে পারে। তিনি এ সময় হিজড়া সদস্যদের করা বিভিন্ন ভালো কাজগুলো সবার সামন তুলে ধরেন।

মতবিনিময় সভায় সাংবাদিক ও হিজড়া সম্প্রদায়ের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ইউকে/এএস