আ.লীগ নেতা বাবুল হত্যাকাণ্ড: মেয়র আক্কাসকে রিমান্ডে চায় পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল হত্যা মামলার প্রধান আসামি বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাস আলীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন করেছে পুলিশ। তবে মামলার নথি অন্য আদালতে থাকায় রিমান্ডের শুনানি বা শুনানির দিন ধার্য করা হয়নি আজ।

তাকে শুক্রবার (৫ জুলাই) রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। এরপর শনিবার (৬ জুলাই) সকালে তাকে রাজশাহীতে আনা হয় এবং জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের কার্যালয়ে নেওয়া হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর শনিবার দুপুরে পৌর মেয়র আক্কাসকে রাজশাহীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক শরিফুল ইসলামের আদালতে তোলা হয়। কিন্তু মামলার নথি জজকোর্টে থাকায় পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হলেও এর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। মামলার নথি এলে পরে রিমান্ড আবেদনের শুনানির দিন ধার্যের কথা রয়েছে।

রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন জানান, বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল হত্যা মামলাটি তদন্ত করছেন বাঘা থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) শোয়েব খান। এ মামলার প্রধান আসামি মেয়র আক্কাছ আলীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে শনিবার দুপুরে আদালতে তিনিই আদালতে পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন করেছেন। তবে এ হত্যা মামলায় আগে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করেছেন। সে কারণ এ মামলার নথিটি সেখানেই রয়েছে। আসামিদের জামিন আবেদনের শুনানি শেষে নথি বিচারিক আদালতে ফেরত আসলে তখন পৌর মেয়র আক্কাস আলীর রিমান্ড শুনানির দিন ধার্যের সম্ভাবনা রয়েছে। আপাতত আদালতের নির্দেশে তাকে বিকেলে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে ঢাকায় আক্কাছ আলীর সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া অপর চার সহযোগী আসামি মজনু, টুটুল, আব্দুর রহমান মহুরি ও স্বপনকে শনিবার আদালতে হাজির করা হয়নি। আগামীকাল রোববার (৭ জুলাই) তাদের বিরুদ্ধেও আদালতে রিমান্ডের আবেদন জানানো হতে পারে।

রাজশাহীর বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম বাবুল হত্যা মামলায় প্রধান আসামি আক্কাস আলীসহ এখন পর্যন্ত মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এর আগে গত ২২ জুন বাঘা পৌর মেয়র আক্কাস আলীর দুর্নীতি অনিয়মের প্রতিবাদে চলা মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মেয়রের দুর্নীতি ছাড়াও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও উপজেলা দলিল লেখক সমিতির বাড়তি টাকা আদায়কে সমর্থন দেওয়া বা না দেওয়া নিয়ে ওই সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটেছিল। এ ঘটনায় থানা ও আদালতে এখন পর্যন্ত পাল্টাপাল্টি দুইটি মামলা হয়েছে।

ঘটনার দিন প্রতিপক্ষের হামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল গুরুতর আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। জরুরি অস্ত্রোপচারের পর তাকে রামেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছিল। কিন্তু চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৬ জুন বিকেলে তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় বাঘা উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর রহমান পিন্টু বাদী হয়ে মেয়র আক্কাসকে প্রধান করে ৩২ জন নামসহ শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে বাঘা থানায় হত্যা মামলা করেন।

এ হত্যা মামলার প্রধান আসামি মেয়র আক্কাস ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিলেন। শুক্রবার (৫ জুলাই) ভোরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মতিঝিল এলাকা থেকে আক্কাস ও তার অপর চার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে। পরে শনিবার রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে তাদের হস্তান্তর করা হয়।

এছাড়া এ ঘটনায় আদালতেও মামলা হয়েছে। স্থানীয় আবুল কালাম (৩৫) নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে গত ২৭ জুন রাজশাহীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১ ও দ্রুত বিচার আদালতে মামলাটি করেছেন।

ওই মামলায় মামলায় আসামি হিসেবে বাঘা উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি শাহিনুর রহমানসহ ৩২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

ইউকে/এসই