রেলপথ অবরোধে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়, দুর্ভোগ বাড়ছেই

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলমান কোটা আন্দোলনের মুখে চরম শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে। রাজশাহীতে চলমান আন্দোলন কর্মসূচি রাজপথ থেকে গড়িয়ে রেলপথে গিয়ে ঠেকেছে। এতে সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন পশ্চিমাঞ্চল রুটের রেল যাত্রীরা।

শুক্রবারও (১২ জুলাই) বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত টানা চার ঘণ্টা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন সংলগ্ন রেলপথ অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

এ সময় কোনো ট্রেন রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে প্রবেশ করতে পারেনি। আবার রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকেও কোনো ট্রেন ছেড়ে যেতে পারেনি।

কোটা সংস্কারের দাবিতে গত ৬ জুন থেকে আন্দোলন করে আসছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শিক্ষার্থীরা। এর আগে, ৮ ও ১১ জুলাই ও একই স্থানে রেলপথ অবরোধ করেছিলেন রাবি শিক্ষার্থীরা। এছাড়া মানববন্ধন, সমাবেশ ও মহাসড়ক অবরোধের মত কর্মসূচিও পালন করেছে তারা।

আর রেলপথ অবরোধ কর্মসূচির কারণে শুক্রবার (১২ জুলাই) বিকেলের পর অন্ততঃ পাঁচটি ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস ট্রেনে ৫ ঘণ্টা শিডিউল বিপর্যয়। রাজশাহী ছেড়ে গেছে রাত সোয়া ৯টায়। বাকী তিনটি আন্তঃনগর ট্রেনের ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা সিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে।

ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় প্রশ্নে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (জিএম) আহমেদ হোসেন মাসুম বলেন, আজ কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীরা রেলপথ অবরোধ করেন। এর কারণে গোবরা অভিমুখী টুঙ্গীপাড়া এক্সপ্রেস, ঢালারচর অভিমুখী ঢালারচর এক্সপ্রেস এবং ঈশ্বরদীগামী কমিউটার এক্সপ্রেস ট্রেনসহ মোট ৪টি ট্রেন রাজশাহী স্টেশনে আটকে ছিল। এছাড়া হরিয়ানে একটা ট্রেন আটকে ছিল। রাত ৯টার পরে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

এদিকে শুক্রবার রাত ৯টায় পর্যন্ত রাবি স্টেশনে রেলপথ অবরোধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কারের একদফা দাবিসহ বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে তৃতীয় দিনের মত রেলপথ অবরোধ করেন রাজশাহীর অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা।

শুক্রবার (১২ জুলাই) বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) রেলস্টেশনের সামনের রেলপথ অবরোধ করে রাখেন তারা। এরপর শনিবার (১৩ জুলাই) জনসংযোগের কর্মসূচি চালানোর ঘোষণা দিয়ে রেলপথ ছাড়েন তারা।

এর আগে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে উপস্থিত সকলের মতামতের ভিত্তিতে রেলপথ অবরোধের সিদ্ধান্ত নেন তারা। এরপর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সেখান থেকে মিছিলসহ রেলস্টেশনে গিয়ে ৫টার দিকে অবরোধ শুরু করেন তারা। বিকেল ৬টার দিকে তাদের সঙ্গে যোগ দেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ এবং রাজশাহী কলেজের কিছু শিক্ষার্থী।

এ সময় আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের একজন তোফায়েল আহমেদ (রাবি অর্থনীতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী)
বলেন, বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে আজকের বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে রেললাইন অবরোধ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সব ধরনের চাকরির ক্ষেত্রে আদিবাসী, প্রতিবন্ধী এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ রাখতে হবে। এবং তা দ্রুত সংসদের মাধ্যমে আইন করে বাস্তবায়ন করতে হবে।

তাদের এক দফা দাবি হলো- সরকারি চাকরির সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য কোটাকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ন্যূনতম পর্যায়ে সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ করে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংস্কার করতে হবে।

অবরোধ চলাকালীন ‘আমার ভাই আহত কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘জোহা স্যারের স্মরণে, ভয় করিনা মরণে’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘দেশটা নয় পাকিস্তান, কোটার হোক অবসান’, ‘কোটা বৈষম্য নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘১৮ এর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠায় নাই’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’সহ মুহুর্মুহু বিভিন্ন স্লোগানে প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা।

ইউকে/এসই