কারফিউ শিথিল হলেই প্রাণচাঞ্চল্য ফিরছে রাজশাহীতে

নিজস্ব প্রতিবেদক: তেমন কোনো সহিংসতা ছাড়াই বড় ধরনের সামাজিক দুর্যোগ মোকাবেলা করছে বিভাগীয় শহর রাজশাহী। বুধবার (২৪ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয়। এ সময় সব রকমের আতঙ্ক কাটিয়ে স্বরূপে ফেরে রাজশাহী।

যদিও কেবল আজই নয়, গত ১৮ জুলাই রাত থেকে কারফিউ ঘোষণার পর যখনই তা শিথিল করা হয়েছে তখনই প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠেছে রাজশাহী। তবে কারফিউ শিথিল অবস্থায় আজই প্রথম সকল ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং দোকানপাট খোলা ছিল। এছাড়া সরকারি অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমাসহ বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও নির্ধারিত সময় পর্যন্ত ছিল খোলা। কিন্তু ইন্টারনেট চালু না হওয়ায় দুর্ভোগ কাটেনি। প্রায় সব ধরনের কাজকর্মেই বিরাজ করছে স্থবিরতা। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সীমিত আকারে চালু হলেও ধীর গতির কারণে কোনো কাজেই গতি ফেরেনি। তাই সরকারি অফিস ও ব্যাংকগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারী, সেবাগ্রহীতা ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতি বাড়লেও কাজকর্ম ছিল ঢিলেঢালা।

এরপরও বুধবার বেলা ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলমান কারফিউ শিথিল ও অফিস আদালত খুলে দেওয়ায় বিভাগীয় শহর রাজশাহী ছিল প্রাণচঞ্চল।

দুপুরের পর থেমে থেমে বৃষ্টি হলেও কদিন পর সব অফিস-আদালত এবং ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠান খোলা পাওয়ায় সবার মধ্যে একটু হলেও স্বস্তি ফিরে। সেবাগ্রহীতারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে একযোগে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। দুপুরে রাজশাহীর বিভিন্ন প্রধান সড়কে যানজটেরও সৃষ্টি হয়। এতে ট্রাফিক সদস্যদের হিমশিম খেতে হয়। তবে ইন্টারনেট সেবা চালু না হওয়ায় পদে পদে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে সবখানেই।

এদিকে বুধবার বেলা ১০টার পর থেকে চলমান কারফিউ শিথিল করা হয়। তবে এর আগ থেকেই ঘরবন্দি মানুষজন বিভিন্ন জরুরি প্রয়োজন বাইরে বেরিয়ে আসেন। তাদের কেউ কেউ ছুঁটে যান কাঁচাবাজারে, কেউ ব্যাংকে আবার কেউ অফিসে। বেলা ১১টার দিকে রাজশাহীর আদালতপাড়ায় গিয়ে মানুষের ভীড় লক্ষ্য করা যায়। আজ সব আদালতের কার্যক্রমই শুরু হয়েছে। এছাড়া রাজশাহীর বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় গ্রাহকদের লম্বা লাইন দেখা গেছে। যাদের বিটিসিএল এর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট লাইনের সংযোগ রয়েছে তারা ইন্টারনেট সংযোগ পেয়েছেন। কিন্তু ধীরগতির ইন্টারনেটের কারণে লেনদেনসহ অফিস ও বিভিন্ন ধরনের কাজকর্ম করতে গিয়ে চরম বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে গ্রাহকদের।
বেশকিছু দিন পর অফিস-আদালত ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ায় সবাই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন ঠিকই; তবে তাদের দাবি এখন দ্রুত ইন্টারনেট পরিসেবা চালু করার। এতপ কর্মক্ষেত্রে স্বস্তি ফিরবে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানিয়েছেন, শুরু থেকেই অন্যান্য বিভাগীয় শহরের চেয়ে রাজশাহীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। এখন পর্যন্ত পুরো জেলার পরিবেশই শান্ত রয়েছে। জনগণের সুবিধার জন্য বেলা ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ অবস্থা শিথিল কর হয়েছিল।

আর এতে জনজীবনে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে। যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সর্বাত্মক সতর্ক অবস্থানে আছেন। তাদের সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ সেনবাহিনী। শিগগিরই সব ধরনের সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। রাজশাহীতে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা শুরু হবে বলেও মন্তব্য করেন জেলা প্রশাসক।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের পর রাজশাহীর ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বুধবার দুপুরে নগর ভবনে মতবিনিময় করছেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এ সময় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ কারফিউ শিথিলের দাবি জানান এবং সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি করেন।

তাদের দাবির প্রেক্ষিতে সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রাজশাহীর পরিবেশ যেহেতু শান্তিপূর্ণ আছে, সে জন্য যত বেশি সময় সম্ভব কারফিউ শিথিলের জন্য আমি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবো।

এ সময় রাসিক মেয়র বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গরীব ও নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তাই গরীব ও নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দসহ রাজশাহীবাসীর প্রতি আহ্বান জানান মেয়র। এছাড়া অতীতে যেভাবে করোনাসহ সকল দুর্যোগ মোকাবেলা করা হয়েছে। এবারও সেভাবে সবাই মিলে এই সংকট মোকাবেলা করতে সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন।

ইউকে/এসই