|| ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা ||
পৃথিবীতে পানির অন্যতম উৎস হলো বৃষ্টি। বৃষ্টির মাধ্যমেই মহান আল্লাহ পৃথিবীতে পানি দিয়ে থাকেন। পানি থেকে উৎপাদিত নানা ফল-ফসল প্রাণিদের বেঁচে থাকতে সহায়তা করে। ঋতুর পালাবদলে আসে বর্ষাকাল। সাধারণত বর্ষাকালে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। সবদিক পানিতে ভরে যায়। বৃষ্টির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক অতি গভীর। বৃষ্টিতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কয়েকটি আমল পরিলক্ষিত হয়।
সেগুলো নিম্নরূপ-
বৃষ্টিকে স্বাগত জানানো: গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমের পর বর্ষায় রহমতের বৃষ্টি হৃদয়ে প্রশান্তি এনে দেয়। এমন বৃষ্টিতে সবারই একটু ভিজতে ইচ্ছা করে। বৃষ্টি নামতে শুরু করলে রাসুলুল্লাহ (সা.) বৃষ্টিকে এভাবে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি শরীরের কিছু অংশ অনাবৃত করে শরীরে বৃষ্টির ফোঁটা নিয়েছেন। আনাস (রা.) বলেন, ‘একবার আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। সে সময় বৃষ্টি শুরু হলো। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর গায়ের পোশাক কিছুটা সরিয়ে নিলেন, যাতে তার গায়ে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ে। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, আপনি এমনটি কেন করলেন? তিনি বলেন, ‘যেহেতু বৃষ্টি তার রবের কাছ থেকে নবাগত।’ (মুসলিম, হাদিস : ২১২০)
বর্ষাকালকে গালি না দেওয়া: ঋতু-বৈচিত্র্যের এক অনন্য রূপ বর্ষা। বর্ষায় আল্লাহর রহমতের বারিধারা অবিরাম ঝরতে থাকে। খাল-বিল, নদী-নালা পানিতে ভরে যায়। প্রকৃতি সজীব ও সতেজ হয়ে ওঠে। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহের পর বর্ষার আগমন জনমনে স্বস্তি এনে দেয়। তার পরও বেশি বৃষ্টিতে স্বাভাবিক জন-জীবন একটু বিঘ্ন হওয়ার ফলে অনেকে সময়কে গালি দেয়। মহান আল্লাহর সিদ্ধান্তে বিরক্তি প্রকাশ করে। এমনটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা সময়কে গালি-গালাজ করো না। কারণ আল্লাহ সময়ের পরিবর্তনকারী।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬০০৩)
বৃষ্টিকে কল্যাণকর করার দোয়া: বর্ষাকালে অতিবর্ষণে অনেক সমস্যা তৈরি হয়। বৃষ্টির পানিতে রাস্তা-ঘাট ডুবে যাওয়ায় চলাচলে সমস্যা হয়। জলাবদ্ধতা সৃষ্টির ফলে অনেক এলাকায় বন্যা দেখা দেয়। নানাবিধ রোগ-ব্যাধি সৃষ্টি হয়। তাই বর্ষার বর্ষণকে কল্যাণকর করার জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন। তিনি বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা সাইয়্যিবান নাফিআন।’ অর্থাৎ এ যেন হয় কল্যাণকর বৃষ্টি। (বুখারি, হাদিস : ৯৮৫)
বর্ষায় বৃক্ষরোপণ: বৃক্ষ ও তরুলতা হলো প্রকৃতির প্রাণ এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অতি প্রয়োজনীয় জিনিস। বর্ষাকালে বৃক্ষরোপণ করার মোক্ষম সময়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বৃক্ষরোপণ করতে উৎসাহ দিয়েছেন। জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে মুসলমান কোনো বৃক্ষ রোপণ করে, তারপর তা থেকে কোনো মানুষ, পশু বা পাখি ভক্ষণ করে, এর বিনিময়ে কিয়ামতের দিন তার জন্য সদকার সওয়াব আছে।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস : ৪০৫৩)
পানি দূষণমুক্ত রাখা : পানি প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রধান উপাদান। পানি ছাড়া প্রাণির অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। সে জন্য পানিকে নিরাপদ ও দূষণমুক্ত রাখতে হবে। নিজেদের কোনো কর্মে যেন পানি দূষিত না হয়, সে ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) পানিকে পবিত্র, নিরাপদ ও দূষণমুক্ত রাখতে সবাইকে সচেতন করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন আবদ্ধ পানিতে প্রস্রাব করে অতঃপর সেখানে গোসল না করে।’ (বুখারি, হাদিস : ২৩৬; মুসলিম, হাদিস : ৬৮২)
পরিশেষে বলা যায়, বর্ষাকালে বেশি বৃষ্টি হবে সেটিই স্বাভাবিক। বৃষ্টি মহান আল্লাহর দান। ইচ্ছা করে বৃষ্টি চালু করা বা বন্ধ করা সম্ভব নয়। কাজেই মহান আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট হয়ে বৃষ্টি যেন উপকারী হয়, সে মর্মে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। পানির অপচয় রোধ এবং পানিকে দূষণমুক্ত রাখতে সচেতন হতে হবে। সেই সঙ্গে ইসলামের নির্দেশনা হিসেবে বর্ষায় বৃক্ষরোপণ করে পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে অবদান রাখতে হবে। মহান আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
ইউকে/এসএম