নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গেল ২৪ ঘণ্টায় ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগের দিন ১২ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল এই হাসপাতালে। ফলে একদিনের ব্যবধানে আবারও মৃত্যু বাড়লো রামেক হাসপাতালে।
এদিকে, বুধবার (৩০ জুন) সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) সকাল ৮টা পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ের মধ্যে এই ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে গত ৩১ দিনে (১ জুন সকাল ৮টা থেকে ১ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত) এ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেলেন ৩৭৭ জন। এর আগে গত ২৯ জুন এ হাসপাতালে সর্বোচ্চ রেকর্ড ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বাংলানিউজকে জানান, মৃত ২২ জনের মধ্যে ৫ জন করোনা পজিটিভ ছিলেন। আর অপর ১৬ জন ভর্তি ছিলেন করোনার উপসর্গ নিয়ে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। আর অপর একজনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ আসার পরও তার মৃত্যু হয়েছে।
রাজশাহী মেডিক্যাল হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মৃতদের মধ্যে সর্বোচ্চ রাজশাহী জেলারই ১৪ জন রয়েছেন। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ১ জন, নাটোর জেলার ১ জন, নওগাঁ জেলার ৫ জন ও ঝিনাইদহ জেলার ১ জন রোগী রোগী রয়েছেন।
বয়স বিবেচনায় হাসপাতালে করোনায় মৃতদের মধ্যে আজ ষাটোর্ধ ৯ জন, পঞ্চাশ থেকে ষাট বছরের মধ্যে ৪ জন, পঞ্চাশ বছরের মধ্যে ৪ জন, চল্লিশের মধ্যে ২ জন রয়েছেন। আর ত্রিশ বছরের মধ্যে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে আজ।
রাজশাহীর দুটি পিসিআর ল্যাবে গতকাল বুধবার (৩০ জুন) মোট ৫৫৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এরমধ্যে ২৪৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। করোনা শনাক্তের হার রাজশাহী জেলায় আবারও ৩২ দশমিক ২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৯ দশমিক ৯০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনা শনাক্তের হার ৫০ শতাংশ থেকে নেমে ৩৭ দশমিক ৯৩ শতাংশে এসেছে। এছাড়া নওগাঁ জেলায়ও করোনা শনাক্তের হারও ৪৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ থেকে কমে আজ ৩৭ দশমিক ৯৩ শতাংশে এসেছে।
রামেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা পজিটিভ ও করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ৬৬ জন। এর মধ্যে রাজশাহী জেলারই রয়েছেন ৪৭ জন। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ৭ জন, নাটোর জেলার ৪ জন, নওগাঁ জেলার ৪ জন, পাবনা জেলার ১ জন, কুষ্টিয়া জেলার ১ জন ও জয়পুরহাট জেলার ২ জন রোগী আছেন। বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) সকাল ৮টা পর্যন্ত এ হাসপাতালে ভর্তি আছেন মোট ৪৬২ জন রোগী। অথচ হাসপাতালে করোনা ডেডিকেটেড শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর পরও রয়েছে ৪০৫টি। গত ২৭ জুন রামেক হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন যুক্ত করে এই ওয়ার্ডটিও কোভিড ওয়ার্ডে রূপান্তর করা হয়েছে। এই ওয়ার্ডের শয্যা সংখ্যা রয়েছে ৪৮টি। আগে হাসাপাতালের ডেডিকেটেড শয্যা সংখ্যা ছিল ৩৫৭টি। এর সাথে ৪৮টি শয্যা বেড়ে ৪০৫টি দাঁড়িয়েছে।
এর পরও ধারণ ক্ষমতার বেশি রোগী ভর্তি রয়েছেন। ৪০৫ জনের বাইরের রোগীরা হাসপাতালের মেঝেতে এবং ওয়ার্ডের বারান্দায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বর্তমানে রামেক হাসপাতালে ৪ নম্বর ওয়ার্ডটিতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন সংযোজনের কাজ চলছে। এখানে ৪৫টি শয্যা রয়েছে। এটি হবে করোনা ইউনিটের সর্বশেষ সংযোজন। কারণ এরপর রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আর কোনো ওয়ার্ড নতুন করে করোনা ইউনিটে সংযুক্ত করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ইউকে/এসই/এসএম