নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী অঞ্চলে বছরই আমে শতকোটি টাকার বাণিজ্য হয়। কিন্তু গতবছর থেকে করোনা মহামারি বাণিজ্যে বাগড়া দিয়েছে। আগের বছরের তুলনায় এবার মৌসুমের শুরুতেই বাজারে আসা আমের দাম সস্তা। নগরের বিভিন্ন বাজারে গোপালভোগ আম ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার আমের দাম কম। গতবারে একই সময়ে গোপালভোগ আম ২ হাজার টাকা মণ বিক্রি হয়েছে। এবার প্রতিমণে নাই হয়ে গেছে ৫’শ থেকে ৬’শ টাকা।
করোনায় এ অঞ্চলের ছোট-বড় আম চাষি আমের ন্যায্য দাম নিয়ে শঙ্কায় আছেন। যদি আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে পরিবহন ও কুরিয়ার চালু না হয় তাহলে চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছেন তারা। এমনটিই বলছেন আড়ৎদার ও চাষিরা।
এ বছরের আম ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, গত ১৫ মে থেকে শুরু হয় আম পাড়ার কর্মযজ্ঞ। ওই দিন থেকে গুটি ও গোপালভোগ জাতের আম বাজারে আসতে শুরু করে।
আজ সোমবার ( ১৭ মে ২০২১) রাজশাহীর সাহেব বাজার মাস্টার পাড়া এলাকার বেশ কয়েকটি ফলের আড়ৎ ঘুরে দেখা গেছে, গুটি জাতের আম বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে সাড়ে ১২০০ টাকা মণ। সুমিষ্ট ও আগাম জাতের গোপালভোগ আম বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ টাকা মণ। ১৪০০ টাকা দরে পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে অপেক্ষাকৃত ছোট ও দাগযুক্ত আম।
কাঁচাবাজারের ফল ব্যবসায়ী আলহাজ্ব মো: মুসলিম শেখ বলেন, “বাজারে কেবল গুটি আর গোপালভোগ আম এসেছে। গোপালভোগ আম ১৬০০-১৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করছি। ক’দিন আগের ঝড়ে কিছু আমের গায়ে দাগ হয়েছে। সেসব আম ১৩০০-১৪০০ টাকা মণ। করোনায় লকডাউন যদি এভাবে থাকে তাহলে আমে প্রচুর লোকসান হবে। আশা করছি, সরকার লকডাউন খুলে দেবে।”
একই বাজারের ফল ব্যবসায়ী ও চাষি সাহিন বলেন, “ এবার আমের ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু চিন্তা হচ্ছে করোনা নিয়ে। রাজশাহীর বাইরে যদি আম না নেওয়ার ব্যবস্থা হয় তাহলে মাঠে মারা যাবে চাষিরা। কিছুক্ষণ আগেই এক বাগান ঠিকাদারের সাথে কথা হলো- খুব চিন্তায় আছে, আম ভাঙতে ভয় পাচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “লোকসান তো বাগান মালিকের হয় না। ২, ৩, ৫ বছরের জন্য লিজ দিয়ে টাকা গুনে নেয়। আম ঝড়ে পড়লো কিনা দাম পড়ে গেলো তা দেখার সময় নেই তাদের। করোনায় যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে চাষিরা মরবে। আমার ধারণা সরকার কিছু একটা করবে।”
জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া তারিখ অনুযায়ী উন্নতজাতের আমগুলোর মধ্যে গোপালভোগ ২০ মে, রাণীপছন্দ ২৫ মে, লক্ষণভোগ বা লখনা নামানো যাবে ২৫ মে, ল্যাংড়া আম ৬ জুন, আম্রপালি ও ফজলি ১৫ জুন থেকে নামানো যাবে। আর সবার শেষে ১০ জুলাই থেকে নামানো যাবে আশ্বিনা ও বারি-৪ জাতের আমএবং খিরসাপাত বা হিমসাগর ২৮ মে থেকে নামানো যাবে।
আম নামানোর ধারাবাহিকতা অনুযায়ী সর্বপ্রথম বাজারে দেখা মেলে গোপালভোগ ও গুটি জাতের আম। আর শেষ হয় ফজলি ও আশ্বিনা জাতের আম দিয়ে।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দিন বলেন, জুনের প্রথম দিকে রাজশাহী ও জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাজারে আসবে ল্যাংড়া আম। মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহের পর উঠবে গোপালভোগ আম। গুটি আম প্রতিবছরই অন্যান্য আমের আগে পাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তাই অনেকেই গুটি আম নামাতে শুরু করেছেন। এখন যে আম পাওয়া যাচ্ছে সে আমের স্বাদ তুলনামূলক কম।
ইউকে/এমইউ/এসএম