রোজিনা অতিরিক্ত সচিবকে খামচি-থাপ্পড় দিয়েছেন : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: সচিবালয়ে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে শারীরিকভাবে নির্যাতন বা আঘাত করা হয়নি বলে দাবি করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বরং রোজিনার বিরুদ্ধেই এক কর্মকর্তাকে ‘খামচি ও থাপ্পড়’ দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন তিনি।

মঙ্গলবার (১৮মে) অর্থনৈতিক পরিষদের সভা শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে ঘটনাটির বিষয়ে কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

সোমবার (১৭ মে) বিকেল ৩টার দিকে রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। স্বাস্থ্য সচিব লোকমান হোসেন মিয়ার একান্ত সচিবের কক্ষে ফাইল থেকে নথি সরানোর অভিযোগে তাকে সেখানে আটকে রাখা হয় এবং তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয়। নিজের ওপর নির্যাতনেরও অভিযোগ তোলেন রোজিনা। একপর্যায়ে সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর তাকে শাহবাগ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর মধ্যে ওই কক্ষে এক নারীর রোজিনার গলা চেপে ধরার ছবি ও ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়ে যায়। পুরো ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার ঝড় তোলে।

রাতে রোজিনার বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় চুরি ও অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনে মামলা করা হয়। সকালে রোজিনাকে আদালতে তুলে পাঁচদিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। অন্যদিকে জামিন চান তার আইনজীবী। আদালত জামিন ও রিমান্ড নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এ ঘটনায় সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী জানান, তিনি নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। তবে ‘অবহিত’ হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘একজন নারী খালি কক্ষে প্রবেশ করে ‘রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট’ নিয়ে যাচ্ছিলেন, ছবি তুলছিলেন। তখন তাকে আটক করা হয়। ঘটনার সময় সেখানে একজন সিনিয়র অফিসার, একজন অতিরিক্ত সচিব এবং দুজন উপ-সচিব প্রথমে ব্যাপারটি ডিল করেছেন। পরবর্তীকালে যখন স্টেট সিক্রেটসের (রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা) বিষয় এসেছে, তখন পুলিশকে ডাকা হয়। তারা তাকে নিতে পারছিল না, বের করতে পারছিল না। এটা নিয়েই অনেক সময় গেছে। এটিই আমাকে বলা হয়েছে।’

ঘটনাটি ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আপনাদের সঙ্গে কো-অপারেট (সহযোগিতা) করেই কাজ করছি। আমার দরজার সামনে সাংবাদিকরা দাঁড়িয়ে যান, আমি সেখানে দাঁড়িয়েও কথা বলি। রাষ্ট্রীয় বিধিনিষেধ যতটুকু আছে ততটুকু ছাড়া সব কথা বলি।’

স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির বিষয়ে প্রতিবেদনের কারণেই রোজিনা ইসলাম আক্রোশের শিকার হয়েছেন কি-না, প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (রোজিনা) দুর্নীতির ব্যাপারে যেসব রিপোর্টিং করেছেন, সেজন্য তো গতকালের ঘটনাটি নয়। সেখানে একজন লোক সরকারি ডকুমেন্ট নিয়ে যাচ্ছে, ফাইলসহ নিয়ে যাচ্ছে, ছবি তুলছে, রাষ্ট্রীয় সিক্রেট ডকুমেন্ট। যে ডকুমেন্টগুলো ছিল টিকা সংক্রান্ত। স্টেট লেভেলে আমরা কথা দিয়েছি এগুলো আমরা কোথাও বলবো না। সেগুলো যদি কেউ নেয়, তাহলে আমরা কী করতে পারি? আমি যতদূর জানি, ওই সময় রুমে কেউ ছিল না, খালি রুমে উনি ঢুকছেন।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কেউ যদি অন্যায় করে থাকে সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান জাহিদ মালেক।

রোজিনার গলা চেপে ধরার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো। তবে ওই অতিরিক্ত সচিব জানিয়েছেন, তিনি তাকে (রোজিনাকে) ফিজিক্যাল অ্যাসল্ট (আক্রমণ) করেননি। বরং উনি (রোজিনা ইসলাম) তার গায়ে খামচি দিয়েছেন, থাপ্পড় দিয়েছেন। পরে যখন এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে বাহাস হবে, তখন সত্য ঘটনা বেরিয়ে আসবে। কোনো নির্দোষ লোক সাজা পাক, এটা আমরা চাই না। কারণ আপনারাও দেশের কাজ করেন আমরাও দেশের কাজ করি। এমন কিছু করবো না, যাতে দেশের ক্ষতি হয়ে যায়। দেশের মানুষের ক্ষতি হয়ে যায়, সরকারের ক্ষতি হয়ে যায়।’

‘আমরা দেড় বছর ধরে করোনা নিয়ে কাজ করছি। টিকার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সেই টিকা নিয়ে আমরা দিনরাত পরিশ্রম করছি। সেই চীন, রাশিয়া এবং আমেরিকার সঙ্গে অ্যাগ্রিমেন্ট পর্যায়ে চলে গেছি। নন-ডিসক্লোজার সই করছি। সেই জিনিসগুলো যদি কেউ নিতে চায় এবং ডিসক্লোজ করতে চায়, তাহলে রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের ক্ষতি হয়ে যাবে। সেই রাষ্ট্র হয়তো আমাদের সঙ্গে ডিপ্লোম্যাটিক সম্পর্কই রাখবে না। আমাদের টিকা পাওয়া তো দূরের কথা, সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে’—বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

ইউকে/এসএম