২১ বছরে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

পটুয়াখালী সংবাদদাতা: পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৮ জুলাই ২১ বছরে পদার্পণ করল। ২০০০ সালের ৮ জুলাই দক্ষিণ বঙ্গের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ বঙ্গের জনগণের উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলায় সাবেক পটুয়াখালী কৃষি কলেজের অবকাঠামোতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন করেন।

এ বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠায় দুমকি উপজেলাবাসীসহ পটুয়াখালী এবং বরিশাল জেলার সাধারণ জনগণ ও নেতৃবৃন্দ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, যা প্রশংসার দাবি রাখে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রাগ্রসর অবদানের জন্য আজ দেশ-বিদেশে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে।

প্রাথমিকভাবে কৃষি, সিএসই ও বিবিএ তিনটি অনুষদে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির মাধ্যমে শিক্ষা কর্যক্রম শুরু হয়, যা সময়ের পরিক্রমায় আজ আটটি অনুষদের অধীনে (কৃষি অনুষদ, সিএসই অনুষদ, বিএএম অনুষদ, মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদ, এনিম্যাল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনাররি মেডিসিন অনুষদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদ, নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্স অনুষদ এবং ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অনুষদ) শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ আটটি অনুষদের অধীনে নয়টি ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে।

মোট ৮৯.৯৭ একর আয়তনের ওপর প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে স্নাতক পর্যায়ে ২৮৩১ জন, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৫৬৭ জন এবং পিএইচডি পর্যায়ে ২৩ জন ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়নরত আছে। শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২৫৪ জন শিক্ষক এবং ১৭০ জন কর্মকর্তা ও ৫২৪ জন কর্মচারী নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধা প্রদানের জন্য পাঁচটি ছাত্র হল এবং তিনটি ছাত্রী হল রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বমানের গ্রাজুয়েট তৈরির জন্য সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে দুমকিসহ পটুয়াখালী, বরগুনা ও বরিশাল জেলার বিভিন্ন প্রান্তিক চাষিদের চাষাবাদের ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, মৎস্যজীবীদের উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে মাছ চাষ, মাছের পরিচর্যা ও সংরক্ষণ, গবাদি পশু পালন ও চিকিৎস্যা সুবিধা প্রদান, খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ প্রদানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

এ ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে সিএসই অনুষদ এবং কৃষি ব্যবসা ও বিপণন ব্যবস্থপনার জন্য বিএএম অনুষদ কাজ করে চলেছে। দেশ বিদেশের বিভিন্ন সংস্থার অর্থায়নে ৮৪টি গবেষণা প্রকল্প চলমান রয়েছে।

এসব গবেষণা প্রকল্প থেকে আহরিত জ্ঞান দেশের উন্নয়নের কাজে লাগানো হচ্ছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়টির উত্তোরত্তর উন্নয়নের জন্য বর্তমানে প্রায় সাড়ে চারশ’ কোটি টাকার ফার্দার ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ও অবোকাঠামোগত উন্নতি সাধিত হয়েছে।

সমুদ্র ভিত্তিক অথনৈতিক কার্যক্রম (ব্লু ইকোনমি ) জোরদারকল্পে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড রিসার্স ইনস্টিটিউট স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে প্রায় স্থবির শিক্ষা কার্যক্রমকে সচল করার লক্ষ্যে অন লাইনে পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে একটি রিকভারি প্লান তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সর্বোপরি বাংলাদেশ সরকারের ২০৪১ সালের ভিশন “উন্নত বাংলাদেশ” গঠনের লক্ষ্যে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আশা করা যায়, সবার সার্বিক সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়টি অচিরেই বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হবে।

ইউকে/এএস