অনলাইনে বেড়েছে গরু-ছাগলের কদর!

বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: করোনার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে দেশ। প্রতিদিন ঘটছে প্রাণহানি। আক্রান্ত ও মৃত্যর হার নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে সংক্রমণ এড়াতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে এবার কোরবানির পশু ক্রয়ে সশরীরে হাটে যেতে নিরুৎসাহিত করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্যবিধি মাথায় রেখে কোরবানির পশু কিনতে এবার অনলাইনে আস্থা রাখছেন অনেকেই। ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে কয়েক বছর আগ থেকেই অনলাইনে পশু কেনাকাটার প্রচলন থাকলেও এবার তা ছড়িয়ে পড়ছে জেলা, উপজেলাসহ গ্রামীণ পর্যায়ে।

প্রচলিত পশুর হাট এখনও সেভাবে শুরু না হলেও কোরবানির গরু-ছাগল উঠতে শুরু করেছে অনলাইন হাটে। এ পশুর হাটে গরু-ছাগলের ছবিসহ অনেক ক্ষেত্রে ভিডিও দেখার সুযোগ রয়েছে। জানা যাচ্ছে গরুর আকার, ওজন এবং সম্ভাব্য মাংসের পরিমাণ। প্রচলিত হাটের চেয়ে ঘরে বসেই মিলছে নির্ভরযোগ্য বিস্তারিত তথ্য।

সরকারের নির্দেশনার আলোকে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পশু কেনাকাটার জন্য বিভিন্ন গ্রুপ ও ফেজ খুলেছেন। সেগুলোতে খামারি এবং প্রান্তিক পর্যায়ের পশু পালন কারিরা নিজেদের পশুর ছবি দিচ্ছেন, ক্রেতারা নিজেদেও পছন্দমত তা কিনে নিচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসানের সঙ্গে। তিনি জানান, করোনা প্রাদুর্ভাব পরিস্থিতিতে চলতি বছর ঈদুল আজহায় কোরবানির পশু বিক্রি হবে হাটে এবং অনলাইনে। অনলাইনে পশু বিক্রির লক্ষ্যে ফেনী জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ফেনী অনলাইন পশুর হাট নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ ইতোমধ্যে চালু করা হয়েছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আনিসুর রহমান জানান, ফেনী অনলাইন পশুর হাট গ্রুপটিতে কর্তৃপক্ষ ছাড়াও যেকোনো খামারি তার বিক্রিযোগ্য পশু সম্পর্কে তথ্য নিজেই প্রকাশ করতে পারবেন।

শুধু প্রাণিসম্পদ অফিস কিংবা জেলা উপজেলা প্রশাসন নয়, খামারিরা তাদের খামারের নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের খামারের নামে ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ খুলে তাতে পশুর ছবি দিয়ে তা বিক্রি করার কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে।

এ বিষয়ে কথা হয় লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের খামারি মো. জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। জেলার সব চেয়ে বড় অর্গানিক পশু খামারের মালিক তিনি। সদর উপজেলার তেয়ারিগঞ্জ ইউনিয়নের আন্দারমানিক গ্রামে ৭ একর জায়গাজুড়ে গড়ে তুলেছেন অথৈ এগ্রো কমপ্লেক্স নামে বহুমুখী কৃষি খামার।

বর্তমানে তার খামারে বিক্রয়যোগ্য ষাঁড় আছে ১শ। যেগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা দামের গরু আছে বলে জানান তিনি। এ বছর কোরবানে তিনি দুই কোটি টাকার গরু বিক্রিয়ের র্টাগেট নিয়েছেন।

অনলাইনে পশু বিক্রি নিয়ে আশাবাদী ফেনীর পরশুরাম পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সাজেল একজন সফল খামারি। চৌধুরী অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক। তিনি বলেন, এ বছর ওজন করে পশু বিক্রি করার প্রস্তুতি আছে। গত ২০ বছরের চিত্র আর চলতি বছরের চিত্রে ব্যবধান গড়ে দিয়েছে করোনা ভাইরাস। তাই অনলাইনে বিক্রির বিষয়ে ভরসা করছি। ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে বেশ কয়েকজন যোগাযোগ করেছে।

আরদিকে দিকে চলতি মৌসুমে বিভিন্ন ই-কমার্স ওয়েভ সাইট কোরবানির পশু বিক্রি করে আসছে। এমন একটি প্রতিষ্ঠান ভালোকিনি ডটকম। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণউন্নয়ন কেন্দ্রের সঙ্গে ভালোকিনি ডটকম যৌথভাবে চরের গুরু নামের একটি অনলাইন পশুর হাট চালু করেছেন। কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার ৪০টি গ্রামের ৪০০ গরু বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে তারা। যাতে কৃষকরা তাদের গরু সরাসরি রাজধানীর বিক্রেতাদের কাছে ন্যায্যদামে বিক্রি করতে পারেন।

প্রতিষ্ঠানটির কাস্টমার কেয়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা এম আর জান্নাত স্বপন বলেন, উদ্বোধনের পর থেকে চারদিনে ৬৬টি গরু বিক্রি করেছেন তারা। তাদের কার্যক্রমে ইতোমধ্যেই ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এছাড়াও সারা দেশব্যাপী এমন আরো কয়েক শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান চলতি ঈদুল আজহা মৌসুমে অনলাইনে বিক্রি করছেন কোরবানির পশু।

ইউকে/এএস