বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘের স্বপ্নের পদ্মা বহুমুখী সেতুর স্প্যানের ওপরের সড়কে এখন দেওয়া হয়েছে পিচ ঢালাইয়ের কাজ (বিটুমিনের কার্পেটিং)। এ সময় পুরো ৪ ইঞ্চি করে পিচ ঢালাই দেওয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) থেকে শুরু হয়েছে সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৪০ ও ৪১ নম্বর পিলারের স্প্যানের ওপরের সড়ক পথে পিচ ঢালাই কাজ।
জানা গেছে, প্রথম দিনে সেতুর ৬০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ মিটার প্রস্থ অংশের পিচ ঢালাই কাজ করা হয়েছে। সেতুর কাজ শেষের পথে এখন, সড়ক পথে পিচ ঢালাই কাজ শুরু হলো। পিচ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হলেই গাড়ি চলতে পারবে।
পদ্মাসেতু প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ জুন পর্যন্ত পদ্মা সেতুর ৯৪ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। পদ্মাসেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮৭ শতাংশ।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, প্রথম দিনে মঙ্গলবার সেতুর ৬০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ মিটার প্রস্থ অংশের পিচ ঢালাই কাজ করা হয়েছে। এর আগে গত ২০ জুলাই সেতুর রেলওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজ শেষ হয়। সেতুতে বসানো হয়েছে ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্লাব।
সূত্র জানায়, নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন নাগাদ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে প্রকল্পের ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা থাকছে।
এর আগেও কয়েকবার প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়। প্রথমবার ব্যয় বাড়ানো ছাড়া ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। এরপর দ্বিতীয়বার ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছিলো। এবার তৃতীয় দফায় ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে আবারও ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, পদ্মাসেতু প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরে শেষ হবে। বর্তমানে প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ। অবশিষ্ট বাস্তব কাজ সমাপ্ত করতে ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে এক বছর ডিফেক্ট নোটিফিকেশন পিরিয়ডসহ ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রয়োজন বলে মনে করে সেতু বিভাগ। পদ্মাসেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের প্রস্তাব অনুযায়ী ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইএমইডিকে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, কোভিডের কারণে প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত দক্ষ জনবল বিশেষ করে বেশ কয়েকজন বিদেশি এক্সপার্ট কাজে যোগ না দেওয়ায় প্রকল্পের অগ্রগতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় অর্জন করা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রকল্পের বর্তমান অগ্রগতি এবং অসমাপ্ত কাজ বিবেচনায় এনে বলা যায়, প্রকল্পের কাজ পূর্ব নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে না। চলমান কাজের অগ্রগতি বিবেচনায় মূল সেতু ও নদীশাসন কাজসহ প্রকল্পের মেয়াদ ৩০ জুন ২০২২ তারিখে সমাপ্ত হবে বলে আশা করা যায়। প্রকল্পের কাজ সমাপ্তির মেয়াদ ৩০ জুন ২০২২ এবং দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য ও ঠিকাদারের দেনা পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য আরও এক বছর অর্থাৎ ৩০ জুন ২০২৩ পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে মেয়াদ বৃদ্ধির যৌক্তিকতা জানিয়ে সেতু বিভাগ জানায়, পদ্মাসেতু নির্মাণ প্রকল্পটি ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে দেশে শুরু হওয়া কোভিডের কারণে প্রকল্পের কাজ ব্যাহত হয়েছে। প্রকল্পে কর্মরত বিদেশি পরামর্শক এবং চীনা ঠিকাদারের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোকজন নিজ নিজ দেশের বিধি-নিষেধের কারণে দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও কাজের সাইটে আসতে পারেননি। এছাড়া যারা প্রকল্পের সাইটে অবস্থান করছেন তাদের মধ্যে কোভিড ভীতি সঞ্চারিত হওয়ায় প্রকল্পে এর প্রভাব পড়েছে।
ফলে কাজের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। চলতি বছরে প্রবল ও দীর্ঘস্থায়ী বন্যার প্রভাবে পদ্মা নদীর পানির উচ্চতা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। তীব্র স্রোতের কারণে মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড ভাঙনের সম্মুখীন হয়। ভাঙনের ফলে ১২৫টি রোডওয়ে স্ল্যাব এবং ১৯২টি রেলওয়ে স্ট্রিংগার নদীগর্ভে চলে যায়। এসব কারণেই মূলত প্রকল্পের সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
ইউকে/এএস